স্টিভ স্মিথ। ছবি: রয়টার্স।
মেলবোর্নের পিচ যে তাঁদের যথেষ্ট সমস্যায় ফেলেছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্টিভ স্মিথ। এই উইকেটে ইংল্যান্ড তাঁদের থেকে ভাল ক্রিকেট খেলেছেন তা-ও স্বীকার করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। ম্যাচ শেষ হয়ে গেলেও পিচ নিয়ে আলোচনা থামল না। সাংবাদিক বৈঠকে হারের কারণ হিসাবে মেলবোর্নের পিচকেই দায়ী করলেন স্মিথ। ১৫ মিনিটের সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর মুখে ১০ বার শোনা গেল ‘ট্রিকি’ (কঠিন) উইকেটের কথা।
সাংবাদিক বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বার বার পিচ নিয়ে প্রশ্ন হল। আর প্রতি বার স্মিথ তুলে আনলেন ‘ট্রিকি’ উইকেটের কথা। এই ধরনের উইকেটে তাঁদের কী ভাবে ইংল্যান্ড হারিয়েছে, কোথায় তাঁরা ভুল করেছেন, সে সবেরই ব্যাখ্যা দিলেন স্মিথ। জানিয়ে দিলেন, এতটা কঠিন উইকেট না হলেই ভাল হত। এখানে ব্যাটে-বলের সমান লড়াই হয়নি। বোলারেরা অনেক বেশি সুবিধা পেয়েছেন।
স্মিথের মতে, এই পিচে ইংল্যান্ড তাঁদের থেকে ভাল খেলেছে। আগ্রাসী ব্যাটিং করেছে। তাতেই পিছিয়ে পড়েছেন তাঁরা। অসি অধিনায়ক বলেন, “এই হার হজম করা কঠিন। তবে বলতেই হবে, ইংল্যান্ড খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছে। আমাদের অল্প রানে অল আউট করেছে। তার পর আগ্রাসী ব্যাটিং করেছে। লক্ষ্য কম ছিল। তাই শুরুতেই ওরা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলে আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে বড় শট খেলে রানটা বাড়িয়ে নিয়েছে।”
স্মিথও মেলবোর্নের পিচের ঘাস দেখে অবাক হয়েছেন। এতটা ঘাস থাকবে ভাবেননি তিনি। স্মিথ বলেন, “দু’দিনে ৩৬ উইকেট পড়া কম ব্যাপার না। ভাবিনি এমনটা হবে। পিচে বোলারদের জন্য অনেক বেশি সুবিধা ছিল। গত বছর মেলবোর্নের উইকেট খুব ভাল ছিল। পঞ্চম দিন শেষ সেশন পর্যন্ত খেলা গড়িয়েছিল। এই ম্যাচে ঘাস ১০ মিলিমিটারের বদলে ৮ মিলিমিটার রাখলে হয়তো ভাল হত। তবে কিছু করার নেই। মাঠকর্মীরাও শিক্ষা নিচ্ছে। আশা করি, পরের বার থেকে এই মাঠে আরও ভাল উইকেট পাব।”
স্মিথ স্বীকার করে নিয়েছেন দুই ইনিংসেই তাঁরা রান কম করেছেন। আরও কিছুটা রান করলে হয়তো জিতেও যেতেন। স্মিথ বলেন, “আমরা যা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও বেশি সাহায্য বোলারেরা পাচ্ছিল। তবে এই পরিস্থিতির সঙ্গেও আমাদের মানিয়ে নিতে হত। দু’ইনিংস মিলিয়ে আরও ৫০-৬০ রান বেশি করতে পারলে হয়তো খেলার ফল অন্য হত।”
এর আগেও অনেক কঠিন উইকেটে স্মিথ খেলেছেন। কিন্তু এতটা কঠিন উইকেটে তিনি খেলেছেন কি না তা মনে করতে পারলেন না অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। বেশ কিছু ক্ষণ ভেবে তাঁর খেলা কঠিন পিচের তালিকায় সকলের উপরে মেলবোর্নকেই রাখলেন স্মিথ।
ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুকের প্রশংসা শোনা গিয়েছে স্মিথের মুখে। প্রথম ইনিংসে কঠিন পরিস্থিতিতে নেমে আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসেও দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। স্মিথের কথায়, “এই পিচে সবচেয়ে সফল ব্রুক। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে। অদ্ভুত সব শট খেলেছে। অল্প সময়ে খেলার ছবি বদলে দিয়েছে। আমরা ধরে খেলার চেষ্টা করছিলাম। বল পুরনো করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু কোনও ইনিংসেই তো বল পুরনো হল না। তাই খেলতে সমস্যা হল।”
স্মিথের মতে, পিচ নিয়ে বেশি ভেবে ফেলেছিলেন তাঁরা। তার প্রভাব খেলায় পড়েছে। তিনি বলেন, “যদি ব্যাট করতে নামার আগে আপনি দেখেন, বল অতটা সুইং করছে, তা হলে চিন্তা তো হবেই। কোনও বল সোজা যাচ্ছিল। কোনও বল ২-৩ ডিগ্রি সুইং হচ্ছিল। আমরা পিচ নিয়ে বেশি ভেবে ফেলেছিলাম। তাতে কাজটা আরও কঠিন হয়েছে। তবে ইংল্যান্ড চতুর্থ ইনিংসে সেটা করেনি। ওরা চাপ ভাল সামলেছে। তাই জিতেছে।”
পার্থেও দু’দিনে শেষ হয়ে গিয়েছিল টেস্ট। সেই ম্যাচ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নেও দু’দিনে খেলা শেষ হয়েছে। তবে এ বার হারতে হয়েছে তাদের। দুই পিচের তুলনা টানতে গিয়ে স্মিথ বলেন, “পার্থের উইকেটে প্রথম দেড় দিন দেখে মনে হচ্ছিল গতি ও বাউন্স অনেক বেশি। কিন্তু সেখানে আবার হেড ও লাবুশেন যখন খেলল, মনে হল পাটা হয়ে গিয়েছে। এখানকার উইকেট তুলনায় মন্থর ছিল। তবে পিচে বল পড়ে দ্রুত আসছিল। ফলে অনেক সময় ব্যাট নামানোর আগেই বল সুইং করে যাচ্ছিল। তাই বোল্ড ও এলবিডব্লিউ বেশি হয়েছে।”