কলকাতায় ক্যাপ্টেন হ্যাডক

জোব চার্নকের কলকাতায় ভিড়ল জোসেফ হ্যাডকের জাহাজ। ৩৩০ বছর আগের গল্প। গৌরব বিশ্বাস জোব চার্নকের কলকাতায় ভিড়ল জোসেফ হ্যাডকের জাহাজ। ৩৩০ বছর আগের গল্প। গৌরব বিশ্বাস

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ১২:৪০
Share:

সুহৃদ: জোব চার্নকের সঙ্গী নন। ইনি টিনটিনের বন্ধু

হ্যাডক? ক্যাপ্টেন হ্যাডক? মানে, টিনটিনের হ্যাডক?

Advertisement

টিনটিন গুলে-খাওয়া পাঠক হয়তো ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করছেন, ‘নাহ্, মিলছে না!’ মনে মনে হাতড়াচ্ছেন, ‘দ্য সিগারস অব ফারাও’-এ টিনটিন এক বার দিল্লি এসেছিল বটে। সে বার কুট্টুস সঙ্গে ছিল, কিন্তু হ্যাডক তো ছিল না!

ফের স্মৃতির সুতোয় টান। হ্যাডক দিল্লিতে এসেছিল তিব্বত যাওয়ার পথে। সঙ্গে টিনটিনও ছিল। সেই যে বার টিনটিনের বন্ধু চ্যাং বিপদে পড়েছিল! চ্যাং হংকং থেকে কলকাতা হয়ে নেপাল গিয়েছিল। কিন্তু ক্যাপ্টেন হ্যাডক...

Advertisement

আসলে এ হ্যাডক সেই হ্যাডক নন। আর্জেও তাঁর কথা লেখেননি। কিন্তু ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে। হ্যাডকের সেই সমনামীও সমুদ্রে ঘুরতেন। কাকতালীয়ই বটে!

তিনি, অর্থাৎ জোসেফ হ্যাডক কলকাতায় এসেছিলেন। তবে একা নন, উইলিয়াম হিথ-এর সঙ্গে।

সালটা ১৬৮৮। ইঙ্গ-মুঘল যুদ্ধের পরে পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে। কয়েক মাস আগে, ১৬৮৭-র নভেম্বর নাগাদ জোব চার্নক সুতানুটি ফিরে আসেন। তার আগের অভিজ্ঞতা তাঁর পক্ষে সুখকর ছিল না।

১৬৮৬ সালের যুদ্ধে জোব চার্নক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সে যুদ্ধে ইংরেজদের থেকে মুঘলদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল অনেক বেশি। ইংরেজরা হুগলি দখল করে। বৃদ্ধ শায়েস্তা খান ইংরেজদের বন্দি করার জন্য বিরাট বাহিনী পাঠান। ইংরেজরা চলে যায় সুতানুটি। শায়েস্তা খানের নির্দেশে আব্দুল সামাদ ইংরেজদের সুতানুটি থেকেও তাড়িয়ে দেন।

এ দিকে ইংরেজরা চলে যাওয়ায় টান পড়ে রাজকোষে। শায়েস্তা খান জোব চার্নককে চিঠি লিখে কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে উলুবেড়িয়াতে ইংরেজদের বসতি স্থাপন ও বাণিজ্যের অধিকার দেন। কিন্তু সেখানেও ইংরেজদের বসতি স্থায়ী হল না। মাস তিনেক পর পাকাপাকি ভাবে সুতানুটি ফেরেন চার্নক। কিন্তু হ্যাডক কোথায়?

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে উইলিয়াম হিথকে সেই সময় পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার জন্য পাঠানো হয়েছিল বাংলায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক কমান্ডার। যিনি তাঁর ভাইকে চিঠি লিখছেন, ‘নদীপথে অন্য কমান্ডারদের সঙ্গে আমিও হিথকে সাহায্য করতে জাহাজে উঠে পড়লাম।’

এই চিঠির লেখকই জোসেফ হ্যাডক। তিনি উইলিয়াম হিথ-এর বর্ণনাতেও এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। হিথ লিখছেন, ‘২০ সেপ্টেম্বর ক্যাপ্টেন হ্যাডক, আমি ও ১২০ জন সৈনিক কলকাতা পৌঁছলাম, যেখানে চার্নক সহ কোম্পানির আরও লোকজন।’

১৬৩১-এ এসেক্সে জন্মেছিলেন জোসেফ হ্যাডক। বাবা উইলিয়াম হ্যাডক। মা মেরি গুডল্যান্ড। ১৬৮৮ সালে জোসেফ যে ভাইকে চিঠি লিখেছেন, তিনি স্যর রিচার্ড হ্যাডক, অ্যাংলো-ডাচ যুদ্ধের সময় থেকে ইংরেজ নৌবাহিনীর নায়ক।

জোসেফদের পারিবারিক চিঠির সম্পাদক এডওয়ার্ড এম থম্পসন-এর (এখানেও টিনটিনের ছোঁয়া!) মতে, হ্যাডকরা চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই সমুদ্রের সঙ্গে জড়িয়ে।

বেলজিয়ামের বাসিন্দা, টিনটিনের স্রষ্টা আর্জে সম্ভবত হুইস্কিপ্রিয়, ‘হিপোপটেমাস, থান্ডারিং টাইফুন, ব্লিস্টারিং বার্নাকলস’ গোছের গালি-অন্তপ্রাণ হ্যাডকের নামকরণে এই ইতিহাস ঘাঁটেননি।

মাইকেল ফার তাই যথার্থই বলেছেন, ‘নৌ-ইতিহাসে এ-ও এক স্মরণীয় কাকতালীয় ঘটনা!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন