একটা ভয় কষ্ট [লজ্জা়]

কার কখন কী করা উচিত, আর কী করা একেবারেই ঠিক নয়, এ বিষয়ে যখন-তখন আমি নাতিদীর্ঘ পাঁচ মিনিটের বক্তিমে দিতেই পারি। যেমন প্রত্যেকেরই থাকে, তেমনই আমারও টনটনে জ্ঞান। মাস কয়েক আগে আমি প্রথম বিশ্বের একটি দেশের মেট্রো রেল চড়ে যাচ্ছিলাম।

Advertisement

সঞ্চারী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share:

কার কখন কী করা উচিত, আর কী করা একেবারেই ঠিক নয়, এ বিষয়ে যখন-তখন আমি নাতিদীর্ঘ পাঁচ মিনিটের বক্তিমে দিতেই পারি। যেমন প্রত্যেকেরই থাকে, তেমনই আমারও টনটনে জ্ঞান। মাস কয়েক আগে আমি প্রথম বিশ্বের একটি দেশের মেট্রো রেল চড়ে যাচ্ছিলাম। যতই তাদের সাম্রাজ্যবাদকে ভেঙে এবং গুঁড়িয়ে দেওয়ার ডাক শুনে বড় হই না কেন, ব্যবস্থা যে তারা ঝাঁ-চকাচক বানিয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

Advertisement

কামরায় এ সব ভাবতে ভাবতেই একটা ‘অস্বস্তিকর’ দৃশ্যে চোখ পড়ে গেল। আমি দেখতে চাইনি, কিন্তু চোখ চলে গেল। আর কী কান-টান লাল হয়ে গেল! ও দিক থেকে যত বারই চোখ সরিয়ে নিই, তত বারই চোখ অমোঘ টানে চলে যায়। ব্যাপারখানা তেমন নয়— একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দু-জন দু’জনকে বেধড়ক চুমু খাচ্ছে। খেতেই পারে এবং খেয়েই থাকে। এ দৃশ্য ইংরিজি সিনেমায় দেখে দেখে আমাদের চোখ পচে গিয়েছে। তা হলে!

কী জানি! তা হলে কি আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন? গোঁড়া? মনে করি যে রাস্তাঘাটে এ সব অশালীন? ভাবলাম মিনিটখানেক। কিন্তু না, আমার তা একেবারেই মনে হয় না, মন থেকেই মনে হয় না। এ বাবা! ফের চলে গেল চোখ। আর এ বার ছেলেটির সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল। আমিই কেমন, ভ্যাবলার মতো স্মাইল দিয়ে ফেললাম। যেন কোনও গর্হিত কাজ করেছি, সেটাকে ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ছেলেটা যে-দৃষ্টি আমার দিকে দিল, তার মানে হল, আজকের যুবভাষায়, ‘হোয়াটএভার’।

Advertisement

খুব আঁতে লাগল। তৃতীয় বিশ্বের লোক, তাই বলে আমি গাঁওয়ার নাকি? চোখ না হয় পড়েই গিয়েছে, অমন করে কেউ ফিরতি-তাকায় তা বলে? হেভি রাগ হল নিজের ওপর। কিন্তু বোরিং গল্পের মতো, ফের সেই অমোঘ টান, চোখ চলে যাওয়া, কান গরম, আর ওদের তরফে অনন্ত চুম্বন পর্ব। মনে মনে ঠাওরালাম, নিশ্চয়ই ওদের নতুন প্রেম।

নতুন হোক আর পুরনো, তাতে আমার কী? আমার কি ভীমরতি ধরল? আমি এটাকে ইগনোর করতে পারছি না কেন? আর লজ্জাই বা পাচ্ছি কেন? ওরা যদি প্রকাশ্যে চুমু খেতে পারে, তা হলে আমারও চোখ চলে যাওয়ার অধিকার আছে বইকী। কিন্তু এ যুক্তি ধোপে টিকলেও, আমার মগজে টিকল না। আমাদের রাস্তাঘাটে এমনটা ঘটে না, সেই জন্যই কি আমার অস্বস্তি? আকছার কেউ মেট্রো বা বাসে চুমু খায় না বলেই ধাতে সয়ে ওঠেনি এখনও?

কিন্তু তার চেয়েও বুকে এসে বিঁধল ছেলেটার সেই চাউনি, যার আসল অর্থ ছিল, ‘এটা আবার এ ভাবে দেখার কী আছে?’ সত্যিই তো, দেখার কী আছে? নিজেকে বেশ স্মার্ট মনে করি, সর্ব ক্ষণ অধিকারের পক্ষে এত বুকনি দিই, আর এখানে এসে এই আটপৌরে কর্মকাণ্ডে বিহ্বল? নিজেকে বললাম, ‘মামণি, বড় হও, বড় হও।’

কিন্তু সত্যি বলতে কী, খানিক পুলকিতও হলাম। একটা থরথর। যেন না দেখার জিনিসটি পর্দা সরিয়ে হুট করে অপ্রস্তুত ভাবে দেখে ফেললাম আর কেউ বারণ করল না! নিজের মনেই জিভ কেটে— অ্যাল!!! এমন চুম্বনদৃশ্য দেখে, প্রায় বাচ্চাবেলায় দেখা কয়ামত সে কয়ামত তক-এ আমির আর জুহির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুম্বনের কথা মনে পড়ে গেল। যে চুম্বন আমায় ভারী লজ্জায় ফেলেছিল। যে চুম্বনের রেশ আমায় বহু রাত জাগিয়ে রেখেছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement