চুল-দাড়ি-গলা কাটত

স মরেশ সরকার কিংবা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে হত্যা-পরবর্তী দেহ-লোপাটের ঘটনা নিয়ে। খুন করার এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা। তারই কৌশল উদ্ভাবনে কুখ্যাত হয়েছেন বিলেতের এক নাপিত। সুইনি টড। তাঁর কেলেংকারি হেলায় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার-এর কুকীর্তিকে।

Advertisement

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০৩
Share:

স মরেশ সরকার কিংবা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে হত্যা-পরবর্তী দেহ-লোপাটের ঘটনা নিয়ে। খুন করার এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। মৃতদেহ সরিয়ে ফেলা। তারই কৌশল উদ্ভাবনে কুখ্যাত হয়েছেন বিলেতের এক নাপিত। সুইনি টড। তাঁর কেলেংকারি হেলায় চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে সিরিয়াল কিলার জ্যাক দ্য রিপার-এর কুকীর্তিকে।
সুইনি টড-ও ছিলেন সিরিয়াল কিলার। তিনি নাকি কম করে একশো ষাট জনকে খুন করেন। খুনগুলো প্রায় একই ভাবে হয়েছিল, মৃতদেহ চালান করার ব্যবস্থাটিও ছিল নিখুঁত। প্রায় আড়াইশো বছর আগের কাহিনি। লন্ডনের ফ্লিট স্ট্রিটে ছিল তাঁর সেলুন। বেশ নামডাকও করেছিলেন টড। কিন্তু তাঁর সেলুনে এসে অনেকেই নাকি আর ফেরেনি! হাতের ধারাল ক্ষুরটি টড সরাসরি তাদের গলায় চালিয়ে দিতেন। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসত রক্ত। তার পর টাকাপয়সা, দামি জিনিসপত্র যা থাকত, হাতিয়ে নিতেন। নানাবিধ লিভার আর কলকবজার মাপা হিসেবে খদ্দেরের বসার চেয়ারটিও নিজের হাতে চমৎকার বানিয়েছিলেন টড। চেয়ারের বিশেষ একটা অংশে চাপ দিলেই সেটা পিছন দিকে উলটে যেত। একই সঙ্গে ফাঁক হয়ে যেত চেয়ারের পিছনের অংশের মেঝে। সেই ফাঁক দিয়ে সটান বেসমেন্টে পড়ত তড়পাতে থাকা দেহটি। শেষ প্রাণবায়ুটিও তত ক্ষণে হাওয়া। তার পর?
এ বার হাত লাগাতেন টডের সঙ্গিনী মিসেস লাভেট। তাঁর ছিল একটি পাই-শপ; টডের সেলুন-লাগোয়া। গোপনে মৃতদেহ থেকে মাংস ছাড়িয়ে নিতেন লাভেট। বিনি পয়সায় জোগাড় হয়ে যেত দোকানের কাঁচামাল। তৈরি হত নরমাংসের পিঠে। আর সেই সুস্বাদু পিঠে খেয়ে লোকে ধন্য ধন্য করত। ফলে, ফুলে-ফেঁপে ওঠে ব্যবসা।
সুইনি টডের কাহিনি ধারাবাহিক ভাবে ‘দ্য স্ট্রিং অব পার্লস: আ রোমান্স’ নামে প্রথম ছাপা হয় ‘দ্য পিপল‌্স পিরিয়োডিক্যাল অ্যান্ড ফ্যামিলি লাইব্রেরি’ পত্রিকায়, ১৮৪৬-৪৭ নাগাদ। তার পরেও অজস্র বার লেখা হয়েছে ‘সুইনি টড: দ্য ডেমন বারবার অব ফ্লিট স্ট্রিট’-এর গল্প। বহু সিনেমা, নাটক, মিউজিক্যাল হয়েছে। অবশ্য সবই ফিকশনের আদলে। সুইনি টডের মিথ এ সব হাড়হিম করা সৃষ্টিকে বারে বারে সুপারহিট করে দিয়েছে। মনস্তত্ত্ব যাকে ব্যাখ্যা করছে, আমাদের অবচেতনে থাকা সবচেয়ে নাছোড়বান্দা ভয় হিসেবে— মেরে, খেয়ে ফেলা। অবিকল সেই রাক্ষস-খোক্কসের কাহিনি যেন— ‘হাঁউ মাঁউ খাঁউ!/ মনিষ্যির গঁন্ধ পাঁউ!!/ ধঁরে ধঁরে খাঁউ!!!’ ২০০৭-এর জনি ডেপ অভিনীত টিম বার্টনের ‘সুইনি টড’-এ (পাশের ছবিতে) যেমন মিট পাই-এর প্রসঙ্গে বলাই হচ্ছে— ‘উই উইল সার্ভ এনি ওয়ান অ্যান্ড টু এনি ওয়ান অ্যাট অল!’

Advertisement

ইতিহাসবিদদের বেশির ভাগেরই বক্তব্য, ‘সুইনি টড’ নেহাতই বানানো গপ্পো, কিংবা, বিভিন্ন সিরিয়াল কিলার ও অপরাধীর কীর্তিকলাপ একজোট হয়ে জন্ম দিয়েছিল এই ভয়াল মিথের। কিন্তু চলতি ধারণার বিপরীতে গিয়ে সুইনি টডকে ঐতিহাসিক চরিত্র হিসেবে, তার খুনখারাবিকে সত্য ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ও নৃতত্ত্ববিদ পিটার হ্যাইনিং। গবেষণায় তিনি বলছেন, ১৭৫৬ সালের ২৬ অক্টোবর সুইনি টডের জন্ম। ছেলেবেলা থেকেই বাড়ির অশান্ত পরিবেশ, বাবা-মায়ের খারাপ সম্পর্ক তাঁকে ঠেলে দেয় অপরাধের দিকে। ছোট্ট একটা চুরির দায়ে ১৭৭০ সালে তাঁর জেল হয়। সেখানেই তাঁর ক্ষৌরকর্মে হাতেখড়ি। পাঁচ বছর তিনি জেলের ক্ষৌরকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। জেল থেকে বেরনোর পর নিজের সেলুন খোলেন ১৮৬ নম্বর ফ্লিট স্ট্রিটে, যার লাগোয়া ছিল একটি পাই-শপ। ক্রমে শুরু হয় সেই ভয়ংকর হত্যালীলা। হ্যাইনিং-এর তথ্য অনুযায়ী, বহু খুন করলেও, দেহ না-মেলায়, মোটে একটি খুনের দায়েই শেষমেশ দোষী সাব্যস্ত হন টড। ওল্ড বেইলি-র আদালতে তাঁর বিচার চলে। ১৮০২-এর ২৫ জানুয়ারি হাজার-হাজার জনতার সামনে তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement