শান্তনু চক্রবর্তী
ছবি: সাইড এফেক্টস
দেশ: আমেরিকা
পরিচালক: স্টিভেন সোডারবার্গ
সাল: ২০১৩
এমিলি নামে মেয়েটার ভারী অসুখ। মনের। তার মনের গহন মেঘ সরিয়ে, বেঁচে থাকার বারান্দায় ভাললাগার রোদ্দুর যেন পড়েই না! সে যখন ২৩, রূপকথার রাজপুত্তুরের মতোই মার্টিন তার জীবনে আসে। পক্ষীরাজ ঘোড়া না থাকলেও ওর মার্টিনের ছিল ময়ূরপঙ্খি নাও। সেই সেল-বোটে চড়ে তারা প্রায়ই ভেসে পড়ত জল-বিহারে। কিন্তু বিয়ের ক’মাসের মধ্যে বেআইনি কারবারে ফেঁসে মার্টিন জেলে গেল। অন্তঃসত্ত্বা এমিলির বাচ্চাটাও টিকল না।
অবসাদের সেই ভয়ানক খাদের ধারেই মনোবিদ ডাক্তার ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে এমিলির প্রথম দেখা। তার পর চার বছর কেটে গিয়েছে। ছবিতে এমিলিকে আমরা যখন প্রথম দেখছি, তখন ও আয়নার সামনে ঠোঁটে যত্ন করে লিপস্টিক ঘষছে! চার বছরের মেয়াদ খেটে আজই তো জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে মার্টিন। লক্ষ্মী বউয়ের মতো শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে জেলের গেটে বরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না?
কিন্তু যেমন ভাবা গিয়েছিল, মার্টিন ফিরে এলে এমিলির এত দিনের শুকনো-খটখটে জীবন সোহাগে-রোম্যান্সে, রঙে-রসে টুসটুসে হবে, ডিপ্রেশনের ছিটেফোঁটাও কোথাও থাকবে না, তেমনটা তো হল না! এমিলি এখনও মুখ গোমড়া করেই বেড়ায়। রাতের বিছানায় মার্টিনের শরীরে শরীর মিশিয়েও কেমন শক্ত কাঠ হয়ে পড়ে থাকে! তার চেয়েও বড় কথা, এমিলির নতুন করে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। মেট্রোয় ঝাঁপ দেওয়ার ঠিক আগে প্ল্যাটফর্মের পুলিশটি তাকে টেনে সরিয়ে আনে। কিন্তু তার পরেও গ্যারাজ থেকে গাড়ি বার করতে গিয়ে এমিলি সিধে দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। ইচ্ছে করেই। মরবে বলেই।
মরা হয় না, তবে এমিলিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখানেই তার দেখা হয় আর এক মনোবিদ জোনাথন ব্যাঙ্কসের সঙ্গে। ব্যাঙ্কস এমিলির চিকিৎসা শুরু করেন। আর এখান থেকেই ছবিটা মানসিক অবসাদে ভোগা এক অসহায় তরুণীর ‘করুণ কাহিনি’ থেকে ক্রমশ ডালপালায় জটিল হওয়া এক ধ্রুপদী থ্রিলারের দিকে ঘুরে যায়। ডাক্তার ব্যাঙ্কস যখন এমিলির জন্য প্রথম বার প্রেসক্রিপশন লিখছেন, তখনও তিনি জানেনই না যে, তিনি আদতে একটা আস্ত থ্রিলারের প্রধান চরিত্র হয়ে উঠছেন। আর তার চিত্রনাট্যটা আসলে লিখছে এমিলি আর তার আগের মনোবিদ ভিক্টোরিয়া। ব্যাঙ্কস যে ওষুধ লিখছেন, তাতে এমিলির অবসাদ কমছে না। ভিক্টোরিয়া চাইছে, ব্যাঙ্কস ‘অ্যাব্লিক্সা’ নামে একটা নতুন ওষুধ লিখুন। ব্যাঙ্কস একটু দোনামোনা করছেন। কারণ এই ওষুধটার নানা রকম ‘সাইড এফেক্টস’। কিন্তু এমিলি আবার ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’ করে। তাই ব্যাঙ্কসকে ওষুধটা লিখতেই হয়। আর সেই ওষুধের প্রতিক্রিয়ার জেরেই এক রাতে ঘুমের ভেতর হাঁটতে হাঁটতেই রান্নাঘরের তরকারি কাটা ছুরিটা মার্টিনের পেটে-পিঠে ক’বার বসিয়ে দেয় এমিলি। তার পর নিহত স্বামীর রক্ত মাড়িয়েই, মেঝেতে রক্তমাখা পায়ের ছাপ ফেলতে ফেলতেই সে বিছানায় যায়, ঘুমিয়ে পড়ে, আর পরের দিন সকালে এই খুনের কথাটা বেমালুম ভুলে যায়!
এমিলির মনোবিদ হিসেবে ব্যাঙ্কস তাকে এই খুনের দায় থেকে বাঁচাতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু ক্রমশই দেখা গেল তিরগুলো যেন তাঁর দিকেই ঘুরে আসছে। তাঁর চিকিৎসায় মন ছিল না বলেই, বেচারি এমিলির হাতে এমন একটা কাণ্ড ঘটে গেল এটাই প্রচার পাচ্ছে। এই দেওয়ালে পিঠ-ঠেকা অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে গিয়েই নিখুঁত চালাকির সুতোয় বোনা আশ্চর্য মিথ্যের জালটা ব্যাঙ্কসের কাছে পরিষ্কার হতে থাকে।
এক উত্তর-আধুনিক হিচককীয় থ্রিলারের ধাঁচে এ ছবিতে সেই জালের জট-পাকানো ও ছাড়ানোর কাজটা করা হয়েছে। সেখানে এমিলি আর ভিক্টোরিয়ার সমকামী সম্পর্কটা স্রেফ চক্রান্তের অনুঘটক। মনোরোগীর ভূমিকায় এমিলির দুর্ধর্ষ অভিনয়, খুনের ‘মোডাস অপারেন্ডি’! আর মার্টিনের খুনটা আসলে স্টক মার্কেটে এক ওষুধ কোম্পানির শেয়ারের দর কমিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির বাজার তেজি করার ফন্দি, যার অর্থকরী ফায়দাটা পুরো লোটার কথা ছিল এমিলি আর ভিক্টোরিয়ার। এ ভাবেই এমিলির ‘ডিপ্রেশন’ যেন এখানে একই সঙ্গে বাজার-অর্থনীতির মন্দা আর একটা লোভে-ভোগে ক্লান্ত সমাজের নৈতিক অবসাদের প্রতীক হয়ে যায়! তবে নির্লিপ্তি আর ক্লিনিকাল নির্মমতার ভঙ্গিতে বলা ছবিটা শেষ অবধি অবশ্য একটা পক্ষ নিয়েই ফেলে। ধ্রুপদী থ্রিলারে এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল। সুস্থিতির জয়, অস্থিরতার পরাজয়, তাই না?
sanajkol@gmail.com
উপল সেনগুপ্ত
সিরিয়াল দেখে যে দশটা আশ্চর্য জিনিস শেখা যায়
১৫ এপ্রিল ২০৩১
পরিবেশবিজ্ঞানীদের সঙ্গে ঘন ঘন আলোচনার পর, অবশেষে ভারত সরকার গাছ কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল। ফলে যেখানে সেখানে গাছপালা সাফ করে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য বহুতল বিশাল প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়ল। কারণ, আজ থেকে এরা সকলেই অবৈধ। ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে খবরের কাগজ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা সংস্থা, কাগজ-কল, মায় পেনসিল, পেন, রাবার প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোয়। স্কুল-কলেজগুলোতেও হইহই পড়ে গেছে। তবে সরকার সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে একটি করে ট্যাব দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। এ ছাড়াও প্রতিটি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১,০০০ থেকে ১০,০০০টি ডেস্কটপ বিতরণ কর্মসূচি আগামী মাসেই শুরু হতে চলেছে। তড়িঘড়ি করে বই প্রকাশনা সংস্থাগুলিকে বইয়ের ই-স্বত্বদানের ব্যবস্থা হয়েছে। যে লেখকের বই যত বেশি ডাউনলোড করা হবে, তিনি তত বেশি রয়ালটি পাবেন বলে ঠিক হয়েছে। এখন থেকে চাকরির সমস্ত পরীক্ষা নেটে দেওয়া বাধ্যতামূলক বলে ঘোষিত হয়েছে। আকাশ ছুঁয়েছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ আর ট্যাবলেটের চাহিদা। আশার কথা যে, কাজ হারানো কর্মীদের কম্পিউটার তৈরির কারখানায় দ্রুত চাকরি দেওয়ার জন্য লোকসভায় আনা বিল ধ্বনিভোটেই পাশ হয়ে গিয়েছে। এ বার থেকে সব কাজই ই-ভার্শনে হবে জানার পরই, ট্যাবের দাম যাতে সাধারণ মানুষের আয়ত্তে আসে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সেই চেষ্টা জোর কদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে, এই নববর্ষ থেকে বাংলা হালখাতার প্রচলন বরাবরের মতো উঠে গেল। পরিবর্তে, সব দোকানি আজ থেকেই তাদের দোকানের হিসাবপত্তর রাখার জন্য ল্যাপটপের ব্যবহার চালু করলেন। যাঁদের কাছে আপাতত ল্যাপটপ নেই, তাঁরা ট্যাব বা ল্যাপটপের দাম কমা পর্যন্ত যাতে মোবাইলে অনেকখানি তথ্য জমিয়ে রাখতে পারেন, তার জন্য সরকার ৩২ জিবি-র মেমরি কার্ড বিতরণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
চিন্ময় হরি, নিউ ব্যারাকপুর
লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।
অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in