ছবি : সংগৃহীত।
যে কোনও গাজর নয়, কালো গাজর দিয়ে বানানো হত শরবত।
গাজরের রং কালো! তা আবার খাওয়াও হয়? শুনে প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ বাজার করতে গিয়ে সারা বছর যে গাজর দেখেন এবং কেনেন, তা কমলা রঙের। কোনওটি গাঢ়, কোনওটি হালকা হলদেটে ঘেঁষা। কালো বা কালচে লাল রঙের গাজর অধিকাংশেই চোখে বা চেখে দেখেননি। অথচ ইতিহাস বলছে গাজর যখন আফগানিস্তান থেকে প্রথম ভারতে আসে, তখন কালো এবং হলুদ— এই দুই রঙের এসেছিল। এর মধ্যে কালো গাজর ভারতের প্রাচীনতম সিন্ধু সভ্যতায় জনপ্রিয় সব্জি ছিল বলে জানা যায় প্রত্নতাত্ত্বিক সাক্ষ্য থেকে । এই কালো গাজর দিয়েই শরবত বানাতো সিন্ধু নদের তীরে প্রাচীন সভ্য নগরীর মানুষ, যা খাওয়া হত গরমে এবং ঋতু পরিবর্তনের সময়।
কিন্তু কোনও অজানা কারণে পরে ভারতে কমলা গাজরের চাষ বাড়ে। মানুষ ভুলে যান কালো গাজরের কথা। অথচ স্বাদে এবং গুণেও কমলা গাজরের থেকে অনেক বেশি উন্নত ছিল কালো গাজর। সাধারণ গাজরের থেকে অনেক বেশি মিষ্টি তো বটেই। এ গাজরে একটা হালকা ঝালের স্বাদও পাওয়া যায়। আবার কালো গাজরে অ্যানটোসায়ানিন নামের এক ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েডও আছে। যা আসলে এক ধরনের জোরালো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। শরীরকে রোগ-জ্বালা মুক্ত কারার জন্য যা উপযোগী।
সেই স্বাস্থ্যকর কালো গাজরকে মজিয়ে তাকে নানা মশলার সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা ঔষধি পানীয় বা শরবত, যার পরবর্তী কালের নাম কাঞ্জি। এখনও ওই শরবত পাঞ্জাব, হরিয়ানা, এমনকি, রাজস্থানে খাওয়া হয়। বিশেষ করে দোলের সময়, ঋতু পরিবর্তনের সময়। কারণ কাঞ্জির ঔষধি গুণ রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে। দূরে রাখে জীবাণুঘটিত জ্বর-জ্বালা। শরীরকে ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে।
বিশ্বায়নের যুগে ভারতে বসে কালো গাজর পাওয়া কোনও ব্যাপারই নয়। তবে অনেকে ইদানীং কালো গাজরের বদলে সাধারণ কমলা গাজর এবং বিটও ব্যবহার করছেন।সেই পদ্ধতিতেও বাড়িতে কাঞ্জি বানিয়ে নিতে পারেন আপনি। কী ভাবে, জেনে নিন।
উপকরণ:
৫-৬টি মাঝারি মাপের গাজর (কালো বা কমলা)
২টি ছোট বিট (চাইলে না-ও দিতে পারেন)
৮ কাপ (প্রায় ২ লিটার) ফোটানো জল
২ চা চামচ গোলমরিচ
২ টেবিল চামচ সাদা সর্ষে বা ১ টেবিল চামচ কালো সর্ষে মিক্সিতে গুঁড়িয়ে নেওয়া
১ টেবিল চামচ বিট নুন
প্রণালী:
গাজর এবং বিট ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে তিন গাঁট মাপের টুকরো করে কেটে নিন।
কালো গাজর পেলে ভাল। না থাকলে কমলা গাজর ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনি বিট পছন্দ না করেন, তাহলে নাও দিতে পারেন।
জল ফুটিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হলে প্যানটি ঢেকে দিন।
এ বার একটি পরিষ্কার এবং চওড়া মুখের কাচের জারে গাজর, বিট, সর্ষের গুঁড়ো, বিটনুন গোলমরিচ দিন। একটি পরিষ্কার শুকনো চামচ দিয়ে সমস্ত উপকরণ মিশিয়ে নিন। তার পরে ফুটিয়ে ঠান্ডা করা জল জারের মধ্যে ঢেলে উপরে একটি মসলিন কাপড় বেঁধে দিন। বা হালকা করে ঢাকনা দিয়ে ৩-৪ দিন রোদে রাখুন। এই পর্বে প্রতিদিন এক বার করে অন্তত জারের মুখ খুলে কাঠের চামচ দিয়ে নেড়ে নেবেন। তার পরে আবার ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। ৩ দিন পরে যদি পানীয়ে স্বাদ টক হয়ে আসে তবে বুঝবেন কাঞ্জি তৈরি।
ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন। এটি চার পাঁচ দিন ভাল থাকে।