restaurant

খাস চিন থেকে আসে মশলাপাতি, তার পর চাপে ‘চাউম্যান’-এর রান্না

চাইনিজ মানেই নুডলস বোঝেন? তা হলে একবার ঢুঁ মারুন ‘চাউম্যান’-এর অন্দের।

Advertisement

মনীষা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:০৬
Share:

চাউম্যানের বেসিল রাইস ইতিমধ্যেি মন জয় করেছে ভোজনরসিকদের।

এক সময় দল জুটিয়ে গান-বাজনা করাই ছিল নেশা। কলকাতার বুকে তখন ফের তেড়েফুঁড়ে উঠছে ব্যান্ড সংস্কৃতি। এক দঙ্গল ছেলে রোজই আড্ডা মারে এক সঙ্গে। গিটারের টিউনিং আর নতুন লেখা গানের লাইন বেয়ে কেটে যায় বহু সন্ধে।

Advertisement

কলকাতার গানের বাজারও তাদের আদর করে আশকারা দিল। নিমেষে লক্ষ্মী হাসলেন ‘লক্ষ্মীছাড়া’-র দোরগোড়ায়। সেই দলেরই ছেলে দেবাদিত্য চৌধুরী। খেতে যেমন ভালবাসে, তেমনই খাওয়াতে। তার প্রমাণ তাঁরই তৈরি শহরের অন্যতম সেরা চিনে খাবারের ঠাঁই ‘চাউম্যান’।

গানের সূত্রে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরেছেন। যত ঘুরেছেন তত মুগ্ধ হয়েছেন দেশ-বিদেশের রান্নায়। তখনই মনে মনে ঠিক করেন, দেশের মানুষের স্বাদকোরককেও দেবেন বিদেশের স্বাদ। চিনে রান্নাঘর তাঁকে বরাবর টানত। তাই ম্যান্ডারিন চিকেন বা কুং পাওয়ের লোভে মাঝে মাঝেই মেদুর বিকেল কাটত চিনের কোনও বিখ্যাত রেস্তরাঁয়।

Advertisement

এ বার নতুন দোকান খুলেই চিনে যাতায়াত গেল বেড়ে। শেফের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে, বিস্তর পড়াশোনা করে জানলেন খাঁটি চিনে রান্নার কৌশল। সঙ্গে এও বুঝলেন সে কৌশল পুরোপুরি এ দেশে আনলে তা খাওয়া মুশকিল। পাতে আধসেদ্ধ সব সব্জি, নানা প্রাণী— কলকাত্তাইয়াদের মোটেও মুগ্ধ করবে না। তার চেয়ে খাঁটি চিনে মশলা দিয়ে কিছু চিনে রান্না আনন্দ দিতে পারে তাঁদের।

সেই মতোই কলকাতার বুকে রমরমিয়ে খুলে ফেললেন সাধের চাউম্যান। শহর জুড়ে বারোটি শাখার মধ্যে চৌরঙ্গির, ৩, হো চি মিন রোডের শাখাটি নবীনতম। ১৮ জন কিচেন স্টাফ নিয়ে রমরমিয়ে চলছে নতুন শাখাটি। প্রথম শাখা খোলা হয় গলফ গ্রিনে। প্রতিটি শাখাই সেজে উঠেছে নানা চিনে হরফ আর নকশায়। যেখানে পা দিলে বুদ্ধের শান্তি আর চৈনিক সভ্যতা একসঙ্গে সুর তৈরি করবে আপনার নিজস্ব সিন্ধুবারোয়াঁয়।

কিন্তু শুধু পরিবেশে মজলেই তো হবে না! রেস্তরাঁর জাদু তার রান্নাতেও থাকবে বইকি! তাই প্রথমেই খিদে বাড়িয়ে নিন। চিনে রেস্তরাঁয় খিদে বাড়ানোর কৌশল যদি জানতে চান, তা হলে বলি, ভারী ভাজাভুজিতে না গিয়ে হালকা কোনও ভাজা দিয়েই শুরু হোক খাওয়া। ফায়ার রোস্টেড ম্যান্ডারিন চিকেন— নামে ও প্লেটে বেশ ভারী দেখালেও মোটেও ভারী নয়। বরং জিভে দিলে মাংসের টুকরোগুলো এক চিনা সসের অনবদ্য স্বাদের কথা বলে ওঠে। যাঁরা স্যুপ ভালবাসেন তাঁরা আস্থা রাখুন চাউম্যান-এর নিজের পছন্দে সাজিয়ে দেওয়া লেমন পিপার স্যুপ বা থিক মিক্সড মিট স্যুপে।

কী বললেন? চাইনিজ মানেই নুডলস বোঝেন? তা নামে যখন চাউম্যান, প্লেটে চাউ দেবে না— এ আবার হয় না কি? কলকাতার এমন নুডলসপ্রেমীদের জন্য চাউম্যান সাজিয়েছে ফাদ থাই নুডলস। ফ্ল্যাট নুডলসের সঙ্গে স্পাইসি সসের এমন মেলবন্ধন কলকাতার আর কোথায়ই বা!

তবে নুডলস ছেড়ে যাদের মন আমার মতোই ভাত-ভাত করে, তাদের জন্য রয়েছে বেসিল ফ্রায়েড রাইসের এক অনবদ্য প্রিপারেশন। চিনা মশলা আর হালকা সব্জির সঙ্গে তুলসীর গন্ধ আপনাকে এতটাই মুগ্ধ করবে যে, খেতে খেতে প্রিয়জনের মুখ মনে পড়বেই। আর আপনিও অমনি তাঁর জন্য কিনে ফেলবেন আর এক প্যাকেট। বেসিল রাইসের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করবে চিনা যে কোনও পদই। তবে যদি ভেজ ভালবাসেন, তা হলে আপনার সঙ্গে থাকবে ‘এক্সোটিক ভেজ ইন স্পাইসি হুনান সস’। বেবি কর্ন, স্পিনাজ, ব্রকোলি, গাজর ইত্যাদির সঙ্গে হুনান সসের ভাব যদি দেখতে চান, তবে এই ডিশ আপনার জন্য সেরা বিকল্প।

আমিষ ভালবাসেন? তা হলে আস্থা রাখুন ফিশ ইন চিলি মাস্টার্ড সসের উপর। বাঙালি কাসুন্দি আর বোনলেস ভেটকির সখ্য চিনে উপায়ে রান্নার হিম্মত রাখে চাউম্যান। চাউম্যানে গিয়েও এই পদ না খেলে পস্তাবেন।

আরও যে পদ ছাড়া চাউম্যান ভ্রমণ বৃথা তা চিকেন কুং পাও। কলকাতার সেরা কুং পাওয়ের ঠিকানা বোধ করি এটাই। তবে খাওয়াদাওয়া হবে কিন্তু মিষ্টিমুখ হবে না এ আবার কেমন কথা? তাই বেছে নিন এদের মেনু কার্ডের যে কোনও একটি ডেজার্ট।

সারা বছরই এই সব খাবারের সুলুক সন্ধান দেবে চাউম্যান। প্রেম হোক, বা দেদার আড্ডা— ঠেক জমান চাউম্যান-এই।

ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন