গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।
সময়টা জেন জ়ি-র। তবে পুজো এলে এখনও বাইকে চেপে ‘উত্তম-সুচিত্রা’ হন বহু বাঙালি প্রেমিক-প্রেমিকা! মনে মনে চান, এই পথ যেন না শেষ হয়! দিন যেন না গড়ায়। ‘সুসময়’ যেন অফুরান পেট্রাল ভরা গাড়ির মতো চলতেই থাকে। তবে বাঙালির সুসময় যখন, তখন তা সুখাদ্য ছাড়া সম্পূর্ণ হয় কি করে। আর সেখানেই ‘পেটপুজো’-র অবতারণা।
দু্র্গাপুজোর পেটপুজো রেস্তরাঁয় গিয়ে করা যেতেই পারে। সে সংক্রান্ত মনের মতো সুযোগও রয়েছে বহু। বাংলা জুড়ে রেস্তরাঁয় রেস্তরাঁয় এই সময় পুজোর মেনু। তবে তার সঙ্গে পুজোর ভিড়ও। বাংলার তারকা শেফ বা রন্ধনশিল্পীরা তাই আনন্দবাজার ডট কমে বলে দিচ্ছেন তাঁদের রেস্তরাঁর পুজো স্পেশ্যাল রেসিপি।
রেস্তরাঁয় গিয়ে যে খাবার খাবেন বলে ভেবেছিলেন, তার কয়েকটি খাস শেফের কাছ থেকে শিখে নিয়ে বানিয়ে ফেলুন বাড়িতেই। সেই সঙ্গে রন্ধনশিল্পীর মুখ থেকে জানুন রান্নার নেপথ্য গল্পও। যা রেস্তরাঁয় গিয়ে খেলে জানা যেত না।
‘সপ্তপদী’ রেস্তরাঁর প্রধান এবং রন্ধনশিল্পী রঞ্জন বিশ্বাস জানালেন দু’খানি বিশেষ রান্নার রেসিপি এবং তাদের কাহিনি।
মটন ‘মেমসাহেব’
পাঁঠার মাংস, তা-ও আবার মেমসাহেব! রঞ্জন বলছেন, ‘‘আমাদের রেস্তরাঁর নাম যেহেতু উত্তম-সুচিত্রার সিনেমার নামে, তাই আমাদের স্পেশ্যাল মেনুতেও হয় উত্তমকুমার, নয়তো সুচিত্রা সেনের কোনও না কোনও সিনেমার নাম থাকে। যা বাঙালিকে তাদের প্রিয় মহানায়ক অথবা মহানায়িকার স্মৃতি উসকে দেবে।’’ অবশ্য এই রেসিপি শুধু নামে নয়, স্বাদেও বাঙালির মন কাড়বে।
রঞ্জন জানাচ্ছেন, সাধারণত পুজোয় কষা মাংস খান বাঙালি খাদ্যরসিকেরা। আর সেই রান্নায় পাঁচফোড়ন পড়ে না। এই রান্নায় পাঁচফোড়ন থাকবে। তবে বাঙালির চেনা পাঁচফোড়ন নয়। এই পাঁচফোড়নের পাঁচটি মশলা হল— মৌরি, গোলমরিচ, দারচিনি, তারামৌরি এবং এলাচ। রঞ্জন বলছেন, ‘‘তারামৌরি, মৌরি আর গোলমরিচ বাঙালির প্রিয় কষা মাংসের স্বাদে একটা অদ্ভুত বদল আনবে। বলতে পারি, এই স্বাদের সঙ্গে কেরলের মাংস রান্নার পদ্ধতির সামান্য মিল আছে।’’
উপকরণ:১ কেজি পাঁঠার মাংস
৫০০ গ্রাম পেঁয়াজ
৩০ গ্রাম আদা
৬০ গ্রাম রসুন
৩০০ গ্রাম টম্যাটো
১৫০ মিলিলিটার রিফাইনড তেল
৫ গ্রাম গোটা গরমমশলা
২০ গ্রাম লাল লঙ্কাগুঁড়ো
১০ গ্রাম বিশেষ পাঁচফোড়নের গুঁড়ো (মৌরি, গোলমরিচ, দারচিনি, তারামৌরি এবং এলাচ)
স্বাদমতো নুন
স্বাদমতো চিনি
প্রণালী: কড়াইয়ে তেল গরম করে গরমমশলা ফোড়ন দিন।
তার পরে দিন পেঁয়াজ, আদা, রসুন। পেঁয়াজ ভাজা ভাজা হয়ে গেলে দিন টম্যাটো, লাল লঙ্কার গুঁড়ো এবং বিশেষ পাঁচফোড়নের গুঁড়ো।
ভাল ভাবে নাড়াচাড়া করে তত ক্ষণ রান্না হতে দিন, যত ক্ষণ না মশলা থেকে তেল ছেড়ে আসে।
তার পরে দিন মাংসের টুকরো। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে মাংসের সঙ্গে মশলা কষান। তার পরে জল দিয়ে ফুটতে দিন, মাংস নরম হয়ে এলে উপরে ওই পাঁচফোড়নের গুঁড়ো ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
‘ছদ্মবেশী’ কাঁকড়া
ছদ্মবেশ অনেক রকম হতে পারে। কিন্তু বঙ্গে ‘ছদ্মবেশী’ একজনই। তিনি বটানির প্রফেসর অবনীশ মিশ্র ওরফে ঠোঁটকাটা ড্রাইভার গৌরহরি বসু ওরফে পুণ্ডরীকাক্ষ পুরকায়স্থ ওরফে উত্তমকুমার। সিনেমায় উত্তম যেমন ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন, ঠিক তেমনই রঞ্জনের এই রেসিপিতেও কাঁকড়া পাতে আসে ছদ্মবেশে। কাঁকড়াকে কাঁকড়া বলে চেনা যাবে না সেখানে।
রঞ্জন বলছেন, অনেকেই কাঁকড়া খেতে পারেন না। তাঁরাও এই রান্নাটি খেতে পারবেন, কারণ, এখানে কাঁকড়ার খোলা ভেঙে বার করার পরিশ্রম নেই। খোলা থেকে বার করে কাঁকড়ার মাংস গলৌটি কাবাবের মতো করে রান্না করে পরিবেশন করা হবে। অর্থাৎ বাংলার কাঁকড়া আর লখনউয়ের রন্ধনপ্রণালীর ফিউশন।
উপকরণ:
৫০০ গ্রাম কাঁকড়ার ভিতরের মাংসল অংশ
২০০ গ্রাম পেঁয়াজকুচি
৫০ গ্রাম রসুনকুচি
২০ গ্রাম আদাকুচি
স্বাদ মতো কাঁচালঙ্কাকুচি
৫ গ্রাম গরমমশলা
২ গ্রাম লাল লঙ্কাগুঁড়ো
২ গ্রাম হলুদগুঁড়ো
প্রয়োজন মতো রিফাইনড তেল
স্বাদমতো নুন
প্রণালী: একটি প্যানে সামান্য তেল দিয়ে তাতে পেঁয়াজ, রসুন, আদা দিয়ে সোনালি রং ধরা পর্যন্ত ভাজুন।
তার পরে তার মধ্যে দিন ক্র্যাব মিট বা কাঁকড়ার খোলা থেকে বের করে নেওয়া মাংস। ভাল করে নাড়াচাড়া করে ওর মধ্যে দিন কাঁচালঙ্কাকুচি, গরমমশলা, হলুদ, লঙ্কাগুঁড়ো এবং নুন।
সমস্ত মশলার সঙ্গে কাঁকড়ার মাংস ভাল ভাবে রান্না করুন, যত ক্ষণ না মাংসের মিশ্রণটি শুকিয়ে আসছে। শুকিয়ে এলে ঠান্ডা হতে দিন।
পরে হাতের চাপে ছোট ছোট টিক্কি তৈরি করে অল্প তেলে সেঁকে নিয়ে পরিবেশন করুন।