Summery Recipes Of Veggie Dish

গ্রীষ্ম-বান্ধব দুই পদ: কম খরচে, সামান্য সময়ের, সহজ রান্না

গরমের সময়ে দুই মরসুমি সব্জির নিরামিষ ঝোলের সুলুকসন্ধান দিল আনন্দবাজার অনলাইন

Advertisement

নন্দিনী ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩৩
Share:

গ্রীষ্মের চটজলদি রান্নায় নতুন পদ বানাতে কী ভাবে ব্যবহার করতে পারেন লাউ শাক এবং উচ্ছে? ছবি: সংগৃহীত।

প্রখর এই গ্রীষ্মের দাবদাহে উত্তর কলকাতার পৈতৃক বাড়িতে স্নান সেরে দুপুরের খাবার খেতে বসেছেন উমেশবাবু। সরকারি চাকরি তাঁর। কলকাতা কর্পোরেশনের কলমপেষা করণিক। বৃত্তিগত সামর্থ্য তেমন না হলেও, আর্থিক ভাবে অসচ্ছল নয় তাঁদের দু’জনের সংসার। মানে তাঁর আর স্ত্রী, সুষমাদেবীর।

Advertisement

পৈতৃক বাড়ির এক তলার ঠান্ডা ২৩ ইঞ্চি দেওয়ালঘেরা খাওয়ার ঘরে উমেশবাবু বসেছেন দুপুরের খাবার খেতে। খালি গায়ে। মাথার উপর ঘুরছে সিলিং ফ্যান। তার হাওয়া বড় মিঠে। উমেশবাবুর সামনে সুষমাদেবী জুঁইফুলের মতো ভাত বেড়ে দিয়েছেন। তার সঙ্গে পাতের চারধারে গোল করে সাজিয়ে দিয়েছেন ছোট-বড় বাটিতে পাঁচ ধরনের পদ। তার মধ্যে চারটি নিরামিষ, একটি আমিষ। উমেশবাবু যা উপার্জন করেন তাতে দিব্য দু’বেলা দু’জনের পাতে একটা করে পোনামাছের টুকরো পড়া অস্বাভাবিক নয়। তাই আজ, শনিবারের বারবেলায় তীব্র গরমের দুপুরে তাঁর পাতে পড়েছে পোনার পেটির ঝোল, পটল, আলু দিয়ে। সঙ্গের বাটিগুলোয় শোভা পাচ্ছে পাতলা মুসুরের ডাল, দু’রকমের সবুজ রঙের পাতলা ঝোল জাতীয় কিছু আর কাঁচা আমের চাটনি। পাতের পাশে, ভাতের চুড়োর উপর চুপটি করে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে এক পিস মশলা পাঁপরভাজা। সুষমাদেবী ভালই জানেন যে তাঁর কত্তা মানুষটি ডাল দিয়ে টাকনা হিসেবে পাঁপরভাজা খেতে বড় পছন্দ করেন।

কিন্তু “এগুলো কী ?” প্রশ্ন করেন উমেশবাবু। তাঁর অঙ্গুলিনির্দেশ সেই দু’টি বাটির দিকে যার মধ্যে রয়েছে সেই পাতলা সবুজরঙা ঝোলগুলি। তার ভেতর গাদাগাদি করছে ওই একই সবুজরঙা দু’রকমের সব্জি। একটার দানা দেখে বোঝা যায় সেটি উচ্ছে বা করলা জাতীয় কোনও তেতো সব্জি, অন্যটির জাতগোত্র কিছু বোঝার উপায় নেই। সবুজ কাদার মতো কিছু।

Advertisement

“এটা উচ্ছের ঝোল,” সুষমাদেবীর গলা অবিচলিত শোনায় কত্তার হম্বিতম্বির উত্তরে। “যা বেতন পাও আর বাজার করো, তাতে এর থেকে ভাল অমৃত কিছু রান্না করা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর এটা হল গিয়ে লাউপাতার ঝোল। এ বার সোনামুখ করে খেয়ে নাও তো!” স্ত্রীর এই শান্ত ঝাঁজেই খানিক মিইয়ে গেলেন উমেশবাবু।

সুষমাদেবী তখনও বলে যাচ্ছেন, “এই গরমে এ সবই খাও। পেট-শরীর দুই-ই ঠান্ডা থাকবে।”

“কিন্তু বড় ঝোল যে,” উমেশবাবুর মিয়োনো প্রশ্ন। “অত ভাতই তো নেই!”

“চুমুক দিয়ে ঝোলটুকু খেয়ে সব্জিটা ভাতে মেখে খাও।” সহজ উত্তর সুষমাদেবীর। আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের জন্যও এই গ্রীষ্মে রইল আকালের মরসুমের দুই সব্জির দুই পদের রন্ধনপ্রণালী:

ছবি: সংগৃহীত।

১) তেতোর ঝোল:

উপকরণ: উচ্ছে বা করলা (পাতলা টুকরো করে কাটা)

ছোট টুকরোয় আলু কাটা

কাঁচা লঙ্কা

স্বাদমতো নুন

কালো জিরে সামান্য

শুকনো লঙ্কা গোটা দুই

সর্ষের তেল দুই চা-চামচ

জল

হলুদ এক চিমটে

প্রণালী: উচ্ছে বা করলা এবং আলু পাতলা করে কেটে ধুয়ে রাখুন। সর্ষের তেলে শুকনো লঙ্কা-কালো জিরে ফোড়ন দিয়ে নাড়তে থাকুন। সুন্দর গন্ধ বেরোলে সব্জিটা হালকা ভেজে খুব অল্প হলুদ দিয়ে কিছু পরে আলুগুলি দিয়ে নুন আর কুচিয়ে রাখা বা চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভেজে, জল দিয়ে চাপা দিয়ে সব্জি সম্পূর্ণ সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এর পর আঁচ নিভিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। (সম্পূর্ণ পদটি রাঁধতে লাগবে ২০ মিনিট )।

ছবি: সংগৃহীত।

২) লাউ শাকের ঝোল

উপকরণ: ছোট টুকরো করা লাউ শাক ও আলু

পাঁচফোড়ন সামান্য

দু’টি শুকনো লঙ্কা

কাঁচা লঙ্কা চেরা দু’টি

নুন-চিনি স্বাদ মতো

সর্ষের তেল

হলুদ এক চিমটে

জল

প্রণালী: লাউ শাক কেটে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখতে হবে। লাউ শাক বড় পাতার শাক। বড় পাতা সিদ্ধ হতে সময় লাগে। তাই ছোট ছোট টুকরোয় কেটে নিলে রান্না করা সহজও হবে, সময়ও কম লাগবে। আলুও ছোট টুকরোয় কেটে রাখতে হবে। সর্ষের তেলে শুকনো লঙ্কা-পাঁচফোড়ন দিয়ে নাড়তে হবে কড়ায়। যত ক্ষণ না সুন্দর গন্ধ বেরোতে শুরু করে। গন্ধ বেরোলে আলু হালকা করে ওই তেলেই ফোড়নে সঙ্গে ভেজে সামান্য হলুদ, নুন দিয়ে দিতে হবে। এ বার ধুয়ে রাখা লাউ শাক একসঙ্গে কড়ায় ভাল করে নেড়ে নিয়ে, খানিক নরম হলে, চেরা কাঁচা লঙ্কা, চিনি স্বাদ মতো দিয়ে জল ঢেলে চাপা দিয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ হয়ে গেলে আগুন নিবিয়ে, কড়া উঠিয়ে নিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন