১০,০০০ বছর ধরে এই গাছটা দাঁড়িয়ে আছে! বেড়েও চলেছে

ইনিই বোধহয় সেই ‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর’! ইনি বহু যুগাবতারের আসা-যাওয়া দেখেছেন। দেখেছেন বহু যুগের পত্তন-বিনাশ। দেখেছেন বহু ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তুষারপাত। এমনকী, দেখেছেন তুষারযুগের শেষটাও।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ২০:২৪
Share:

ছবি: ন্যাশনাল বটানিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সৌজন্যে।

ইনিই বোধহয় সেই ‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর’! ইনি বহু যুগাবতারের আসা-যাওয়া দেখেছেন। দেখেছেন বহু যুগের পত্তন-বিনাশ। দেখেছেন বহু ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তুষারপাত। এমনকী, দেখেছেন তুষারযুগের শেষটাও।

Advertisement

এই ‘ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর’-এর বয়স আপাতত প্রায় ১০ হাজার বছর। সঠিক গাণিতিক হিসাবে ৯,৫৫৮ বছর। প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে ইনি বহাল তবিয়তেই বেঁচেবর্তে রয়েছেন সুইডেনের টালার্না প্রদেশে। ফুলু পর্বতের পাদদেশে। ইনি আদতে একটি স্প্রুস গাছ। যাকে বৃক্ষও বলা যায়। গত শতাব্দীর ৪০-এর দশক থেকে বিষাক্ত মাটি থেকে প্রাণের রসদ তেমন না পেয়ে তিনি বুক চিতিয়ে বেড়েও উঠতে শুরু করেছেন আকাশের দিকে। যেন এটা তার অস্তিত্বের সদম্ভ ঘোষণা। ২০০৮ সালে সুইডেনের ওমেয়াঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক লিফ কুলমান প্রথম এই গাছটির সন্ধান পান। ফ্লোরিডার মিয়ামিতে তাঁর গবেষণাগারে কুলমান এর পর কার্বন পরমাণুর একটি আইসোটোপ (সি-১৪) দিয়ে এর বয়স মেপেছিলেন। তাতে দেখা গিয়েছে, ওই গাছটির বয়স ৯,৫৫৮ বছর। এর মানে মহাভারত যবে লেখা হয়েছিল তার চেয়েও ৭,০০০ বছর আগেকার গাছ এটি। এর চেয়ে দীর্ঘায়ু গাছ এখনও পর্যন্ত মেলেনি পৃথিবীতে। এর আগে যে প্রাচীনতম গাছটির হদিশ মিলেছিল উত্তর আমেরিকায় সেটি একটি পাইন গাছ। তার বয়স বড়জোর ৪,০০০-৫,০০০ বছর। অধ্যাপক কুলমানের দাবিটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ভাবে সমর্থিত ও স্বীকৃত হয়েছে। সেই প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে ‘জার্নাল ইভলিউশন’-এর জুন সংখ্যায়। এ ব্যাপারে লখনউ-এর ন্যাশনাল বটানিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এনবিআরআই)-এর প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি ও এথনো বটানি বিভাগের অধ্যাপক গীতাঞ্জলী সিংহ বলছেন, ‘‘এই ধরনের স্প্রুস গাছ সুইডেনের বিস্তৃর্ণ এলাকায় আরও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। সুইডেনের উত্তরে লাপল্যান্ড থেকে দক্ষিণে টালার্না পর্যন্ত এলাকা জুড়ে মোট ২০টি প্রজাতির স্প্রুস গাছ পাওয়া গিয়েছে যাদের বয়স ৮ হাজার বছর বা তার বেশি।’’


এই সেই বিশ্বের প্রাচীনতম গাছ। ছবি: ন্যাশনাল বটানিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সৌজন্যে।

Advertisement

কিন্তু এত দিন ধরে এই গাছগুলো বেঁচে থাকে কী করে? লখনউয়ের এনবিআরআই-এর প্লান্ট অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক ভাগ্যশ্রী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘এদের একটা কাণ্ড মরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নতুন কাণ্ডের জন্ম হয়। তা ছাড়া এদের শিকড় মাটি ফুঁড়ে গভীরে চলে যেতে পারে খুব দ্রুত। গত ১০০ বছরে পরিবেশ দূষণের ফলে সুইডেনের ওই এলাকায় মাটির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়েছে। তার ফলে মাটি থেকে বাঁচার রসদ জোগাড় করতে এই গাছটির অসুবিধা হওয়ায় গত শতকের চারের দশক থেকেই এরা একটু একটু করে বুক চিতিয়ে আকাশের দিকে মাথা তুলতে দেখা যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে এই গাছটি তুষারযুগের সময় স্ক্যানডেনেভিয়ায় ছিল। ছিল নরওয়ের পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিমে। পরে কোনও ভাবে পাখিদের মাধ্যমে বা বাতাসে উড়ে এসে ওই গাছগুলির বীজ পড়েছিল সুইডেনের ওই এলাকায়। ওই এলাকায় ৩৭৫, ৫৬৬০, ৯০০০ এবং ৯৫৫০ বছর আয়ুর আরো বিভিন্ন প্রজাতির স্প্রুস গাছের হদিস মিলেছে।’’

দেখুন বিশ্বের প্রাচীনতম দশ গাছের ভিডিও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement