Science News

মঙ্গলে মিলল সুবিশাল হ্রদ, উঁচু নুনের পাহাড়!

নাসার রোভারের কৌতূহলী চোখে ধরা পড়ল, সেই শুকিয়ে যাওয়া সুবিশাল হ্রদের খাত থেকে গা বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আলো ঝলসানো নুনের পাহাড়। খাওয়ার নুন নয়। খনিজ লবণ। উচ্চতায় যা কম করে ৫০০ ফুট। যেন প্ল্যাটিনামের ভাণ্ডার!

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৩২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলের অসম্ভব রুখুসুখু লালচে পিঠে ঢুঁড়ে বেড়াতে গিয়ে ‘কুমারী কৌতূহলে’র চোখে পড়ল সুবিশাল একটি হ্রদের কঙ্কালসার দেহ! সাড়ে তিনশো কোটি বছর আগে যা ছিল টলটলে জলে ভরা। চওড়ায় ১০০ মাইল বা ১৫০ কিলোমিটার।

Advertisement

নাসার রোভারের কৌতূহলী চোখে ধরা পড়ল, সেই শুকিয়ে যাওয়া সুবিশাল হ্রদের খাত থেকে গা বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আলো ঝলসানো নুনের পাহাড়। খাওয়ার নুন নয়। খনিজ লবণ। উচ্চতায় যা কম করে ৫০০ ফুট। যেন প্ল্যাটিনামের ভাণ্ডার! বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সেই নুনের পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে এখনও লুকিয়ে রয়েছে প্রচুর জল।

‘কুমারী কৌতূহল’ কোনও গল্পের কাল্পনিক চরিত্র নয়। মঙ্গলে ঘুরে-চরে বেড়ানো নাসার রোভার ‘মিস কিউরিওসিটি’র বাংলা নাম। নাসার রোভার এমন সব নমুনা খুঁজে পেয়েছে লাল গ্রহের সেই ‘গেইল ক্রেটার’ এলাকায়, যা পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে টলটলে জনা ভরা হ্রদটি ছিল অবিকল দক্ষিণ আমেরিকার আল্টিপ্ল্যানোতে লবণাক্ত কুইসকুইরো হ্রদের মতোই!

Advertisement

মঙ্গলে যেখানে মিলেছে সেই হ্রদ, নুনের পাহাড়। দেখুন নাসার ভিডিয়ো

নাসার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-জিওসায়েন্স’-এ।

সেই হ্রদ যেন মরুদ্যান রুখুসুখু মঙ্গলে!

গবেষকদলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, নাসার ‘কিউরিওসিটি মিশনে’র প্রজেক্ট সায়েন্টিস্ট অনাবাসী ভারতীয় অশ্বিন ভাসাভাড়া ‘আনন্দবাজার’কে বলেছেন, ‘‘আমরা প্রমাণ পেয়েছি, মঙ্গলের এই সুপ্রাচীন হ্রদটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বার বার শুকিয়ে গিয়েছে। তার পর আবার সেটি টলটলে জলে (ফ্রেশ ওয়াটার) ভরে উঠেছে। যে গেইল ক্রেটার এলাকায় এই প্রাচীন হ্রদের কঙ্কালসার দেহের হদিশ মিলেছে, আমাদের বিশ্বাস, তার আশপাশের এলাকা ছিল অত্যন্ত রুক্ষ। অনেকটা আমাদের সাহারা মরুভূমির মতো। আর এই হ্রদটি ছিল সেই মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো।’’

আরও পড়ুন- ১৫০ বছরের যাত্রায় ম্যাড্রাস অবজারভেটরির 'ভুল' শুধরে মিশেলের নোবেল

আরও পড়ুন- নোবেল থেকে পাঁচ বার বঞ্চিত এই বাঙালি!​

অশ্বিন এও জানিয়েছেন, কয়েকশো কোটি বছর আগে শুকিয়ে যাওয়া মঙ্গলের গেইল ক্রেটারের সেই হ্রদ এখনও যতটা চওড়া ও গভীর, দক্ষিণ আমেরিকার আল্টিপ্ল্যানো এলাকায় থাকা হ্রদগুলি শুকিয়ে গেলে তার থেকেও হয়ে পড়ে অনেক বেশি অগভীর ও শীর্ণ।

মঙ্গলের সেই হ্রদ অবিকল দক্ষিণ আমেরিকার আল্টিপ্ল্যানোতে এই কুইসকুইরো হ্রদের মতোই!

মাথা উঁচিয়ে ৫০০ ফুটের নুনের পাহাড়!

মঙ্গলের রুখুসুখু পিঠে সেই প্রাচীন হ্রদের জল যে লবণাক্ত ছিল, তারও প্রমাণ পেয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। রোভার ‘কিউরিওসিটি’ সেই হ্রদের খাত থেকে গা বেয়ে লবণের পাহাড়কে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। উচ্চতায় যা ৫০০ ফুট বা ১৫০ মিটার। নাসা সেই এলাকার নাম দিয়েছে ‘সাট্‌ন আইল্যান্ড’। রোভার কিউরিওসিটি যে এলাকা ঢুঁড়ে বেরিয়েছিল বছরদু’য়েক আগে।

আরও পড়ুন- হকিংয়ের সন্দেহ কি অমূলকই? তার কোনও চুল নেই! জানাল ব্ল্যাক হোল​

আরও পড়ুন- প্রাণের খোঁজে মঙ্গল খুঁড়তে নামছে নাসা, পরীক্ষা আটাকামায়​

অশ্বিন বলছেন, ‘‘আমরা এমন প্রমাণও পেয়েছি, হ্রদটির লবণাক্ত জল যে শুধুই নুনে ভরা ছিল, তা নয়; তাতে তরল জলও কম ছিল না। হ্রদটির শুকিয়ে যাওয়ার সময়েই তৈরি হয়েছিল সেই নুনের পাহাড়। পাহাড়ি গেইল ক্রেটার এলাকা থেকে নেমে আসার পর মূলত মরুভূমির মতো এলাকাতেই ছিল সেই সুবিশাল হ্রদ। যেন মরুদ্যান। আমাদের মাউন্ট এভারেস্টের মতোই মঙ্গলের গেইল ক্রেটার এলাকায় রয়েছে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট শার্প।’’

বিভিন্ন সময়ে মঙ্গলের বুকে গ্রহাণু, উল্কাপিণ্ড আর ধূমকেতুরা আছড়ে পড়ার ফলেই তৈরি হয়েছিল সেই গেইল ক্রেটার এলাকা। যা মূলত ছিল সুবিশাল গহ্বর। পরে জলের স্রোত এসে ভরিয়ে দেয় গহ্বর। পরে বাতাসের ঠেলায় ওই এলাকায় জন্ম হয় মাউন্ট শার্পের মতো সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।

খনিজ লবণে ভরা মঙ্গলের সেই পাহাড়!

‘পাথফাইন্ডার মিশনে’র অন্যতম সদস্য, ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ টেলিফোনে ‘আনন্দবাজার’কে বলেছেন, ‘‘ওই হ্রদের দেহে যে সুউচ্চ নুনের পাহাড় দেখেছে রোভার কিউরিওসিটি, তা অবশ্য আমাদের খাওয়ার নুন নয়। খনিজ লবণ। যাকে ‘মিনারেল সল্ট’ বলা হয়। সেই নুনের পাহাড়ের আশপাশে কিউরিওসিটি মাটিরও খোঁজ পেয়েছে। যার মধ্যে এখনও জল রয়েছে বলে আমাদের অনুমান। ওই এলাকার নাম- ‘ওল্ড সোকার’। যে সব নমুনা মিলেছে, তাতে মনে হচ্ছে নুনের পাহাড় যখন তৈরি হচ্ছিল মঙ্গলে, তখনও তার আশপাশে জল যথেষ্টই ছিল তরল অবস্থায়।’’

ভিডিয়ো ও অ্যানিমেশন সৌজন্যে: নাসা

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন