লক্ষ বছর পর বরফহীন হতে যাচ্ছে সুমেরু সাগর?

গলতে গলতে প্রায় সাবাড় হয়ে যাওয়ার মুখে সুমেরু সাগরের পুরু বরফের চাদর। এক লক্ষ বছরেরও বেশি সময় পর প্রায় গোটা উত্তর মেরু থেকেই ‘বিদায় ঘণ্টা’ বেজে গিয়েছে বরফের! হয় এ বছরের শেষেই, না হলে আগামী বছরেই সুমেরু সাগরকে ‘গুড বাই’ জানাবে ‘বরফ-সাম্রাজ্য’!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ১৭:১৯
Share:

সামনের দিনগুলো বড়ই উদ্বেগের!

Advertisement

আমাদের যাবতীয় সুখ কেড়ে নেওয়ার ‘অসুখ’টা প্রকট হয়ে উঠেছে উত্তরোত্তর। গলতে গলতে প্রায় সাবাড় হয়ে যাওয়ার মুখে উত্তর মেরুর পুরু বরফের চাদর। এক লক্ষ বছরেরও বেশি সময় পর প্রায় গোটা উত্তর মেরু থেকেই ‘বিদায় ঘণ্টা’ বেজে গিয়েছে বরফের! হয় এ বছরের শেষেই, না হলে আগামী বছরেই সুমেরু সাগরকে কার্যত, ‘গুড বাই’ জানাবে ‘বরফ-সাম্রাজ্য’!

এমনটাই দাবি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলার ওশ্‌ন ফিজিক্স গ্রুপের প্রধান বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, অধ্যাপক পিটার ওয়ারহ্যাম্‌সের।

Advertisement

উপগ্রহ মারফত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার জানাচ্ছে, এ বছর পয়লা জুনে সুমেরু সাগরে বরফ ছিল মাত্র ১ কোটি ১১ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। যা ৩০ বছর আগে এই সময়ে ছিল ১ কোটি ২৭ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। মানে, গত তিন দশকে সুমেরু সাগরে ১৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা থেকে সাফ হয়ে গিয়েছে বরফ। ৬টা ব্রিটেনকে যোগ করলে ভৌগোলিক এলাকার আয়তন যতটা হয়, সুমেরু সাগরের ততটা এলাকা থেকেই গত তিন দশকে বরফ ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে!

অধ্যাপক ওয়ারহ্যাম্‌সের দাবি, ‘‘এ বছরের সেপ্টেম্বরেই সুমেরু সাগরে বরফ সাবাড় হয়ে যাবে আরও ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থেকে। আর আগামী বছরের শেষাশেষি সুমেরু সাগরের আরও ৩৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় আর বরফ থাকবে বিন্দুমাত্র। এমনও হতে পারে, ওই সময় গোটা উত্তর মেরু থেকেই ‘নির্বাসনে’ চলে যাবে বরফ! এর মানেটা হল, উত্তর মেরুর কেন্দ্রস্থলটা একেবারেই বরফ-শূন্য হয়ে যাবে। মেরুর বরফটা শুধুই থেকে যাবে কানাডার উত্তর উপকূলের দ্বীপপুঞ্জগুলোতে। আজ থেকে ১ লক্ষ বা ১ লক্ষ ২০ হাজার বছর আগে, শেষ বার বরফ-শূন্য হয়ে গিয়েছিল সুমেরু সাগরে।’’

আরও পড়ুন- রাস্তা, স্তম্ভ, সমুদ্রের তলায় প্রাচীন নগরী বানিয়েছে ব্যাকটেরিয়া!

বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, কেন এই ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে সুমেরু?

কী বলছেন অধ্যাপক ওয়ারহ্যাম্‌স?

তাঁর কথায়, ‘‘চরম আবহাওয়ার জন্য দুই মেরুই উষ্ণ হয়ে উঠছে, খুব দ্রুত হারে। যার ফলে, আচমকা একের পর এক সাইক্লোনে যেমন বানভাসি হয়ে যাচ্ছে ব্রিটেন, তেমনই একের পর এক টর্নেডো আছড়ে পড়ছে আমেরিকায়। ও দিকে, রাশিয়ার উত্তর উপকূলে সমুদ্রের বরফ এখন আর নেই বললেই চলে। ওই বরফটাই এত দিন সুমেরু সাগরের বরফটা জমতে সাহায্য করত। কিন্তু এখন সেটাও হচ্ছে না।’’

বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্রে অধ্যাপক ওয়ারহ্যাম্‌স দেখিয়েছেন, এর ফলে আগামী পাঁচ বছরে গোটা বিশ্বের তাপমাত্রা ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। এটা উষ্ণায়নের বিপদকে অনেকটাই বাড়িয়ে তুলবে। আর বরফ গলে যাওয়ার ফলে তার মধ্যে জমাট বাঁধা অবস্থায় যে মিথেন গ্যাস ছিল, এ বার সেটাও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এটা আগামী দিনে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বরফ কমে যাওয়ার ফলে ভূপৃষ্ঠ কিছুটা অন্ধকার হয়ে যাবে, বরফ থেকে আলোর প্রতিফলন কমে যাওয়ায়। তার ফলে আরও বেশি সূর্যালোক শুষে নেবে ভূপৃষ্ঠ। যাতে আরও বেশি তেতে উঠবে ভূপৃষ্ঠ। আরও বাড়বে বিশ্ব উষ্ণায়ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement