ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের মধ্যবর্তী এলাকায় গ্রহাণু বলয়ের খোঁজ আগেই পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু পৃথিবীর পড়শি শুক্রের একেবারে পাড়ায় যে একগুচ্ছ গ্রহাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে কার্যত অদৃশ্য হয়ে, তা এত দিন জানা ছিল না। এই গ্রহাণুদের বিষয়ে জানা সহজও নয়। কারণ পৃথিবী থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শক্তিশালী টেলিস্কোপ পেতে শুক্রের দিকে চেয়ে থাকলেও ওই গ্রহাণুগুলিকে দেখা যায় না। অবস্থানই তাদের অদৃশ্য করে তুলেছে পৃথিবীর কাছে।
ব্রাজ়িলের একদল গবেষক শুক্রের আশপাশের গ্রহাণুর অস্তিত্ব খতিয়ে দেখেছেন। তাঁদের বক্তব্য, একটি বা দু’টি নয়, শুক্র গ্রহের কাছে ছোটবড় গ্রহাণুর আস্ত ‘বসতি’ গড়ে উঠেছে। সেগুলির কোনওটিকেই পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। পৃথিবীর কাছে থাকলেও অবস্থানের কৌশলেই টেলিস্কোপে তারা ধরা পড়ে না। এই গ্রহাণুগুলি ভবিষ্যতে পৃথিবীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ গবেষক ভালেরিয়ো কারুবা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে সমস্ত টেলিস্কোপ রয়েছে, তা দিয়ে দেখা যায় না এমন প্রচুর গ্রহাণু মহাকাশে রয়েছে। শুক্রের কাছের গ্রহাণুগুলি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু গ্রহাণু বলয়ের মধ্যে তারা নেই। তারা পৃথিবীর আরও কাছে রয়েছে। ভবিষ্যতে এগুলির কারণে পৃথিবীর বিপদ হতে পারে।’’
শুক্রের আশপাশের ২০টি গ্রহাণুর অস্তিত্বের কথা এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। শুক্রের কক্ষপথের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এই সমস্ত গ্রহাণুর কক্ষপথ অত্যন্ত জটিল এবং পরিবর্তনশীল। কখনও কখনও শুক্রের কক্ষপথেও তারা ঢুকে পড়ে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, গড়ে প্রায় ১২ হাজার বছর অন্তর এই সমস্ত গ্রহাণুর কক্ষপথের আকার বদলাতে পারে।
কেন দেখা যায় না?
বিজ্ঞানীদের মতে, শুক্রের পাড়ার এই গ্রহাণুগুলি সৌরজগতের কেন্দ্রের কাছাকাছি রয়েছে। এদের দেখতে হলে আমাদের সূর্যের দিকেই তাকাতে হয়। সূর্যের আলোতে এরা তাই ঢাকা পড়ে যায়। পৃথিবী থেকে কখনওই দেখা যায় না।
কেন বিপদ?
পরিবর্তনশীল কক্ষপথের কারণেই এই সমস্ত গ্রহাণু থেকে বিপদের গন্ধ পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যে কোনও সময়েই তারা শুক্রের কাছে এমন এক কক্ষপথ তৈরি করে ফেলতে পারে, যা পৃথিবী পর্যন্ত তাদের পৌঁছে দেবে। এমনকি, পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রমও করে যেতে পারে এই সমস্ত গ্রহাণু। কারুবা বলেন, ‘‘৩০০ ব্যাসার্ধের এক-একটি গ্রহাণু পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা খেলে তিন থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার গভীর গর্ত তৈরি হতে পারে। কয়েকশো মেগাটন শক্তি নির্গত হতে পারে তা থেকে। এর ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’’