বিগ ব্যাং থেকে মহাবিশ্বের জন্ম। সেখান থেকে নক্ষত্র, নক্ষত্রমণ্ডলের উৎপত্তির খুঁটিনাটি সবই জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই প্রথম বার তাঁরা একটি গ্রহের জন্মলগ্ন চাক্ষুস করলেন। দেখলেন, কী ভাবে ব্রহ্মাণ্ডের পেটে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে সে!
আমেরিকার অ্যারিজ়োনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসের ‘লেইডেন অবজ়ারভেটরি’-র এক দল গবেষকের চোখে এই দৃশ্য ধরা পড়েছে। এর জন্য তিনটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টেলিস্কোপের সাহায্য নিয়েছেন গবেষকেরা। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
নক্ষত্রের জন্ম হলে তার চারপাশে ধুলো আর গ্যাসের একটি বিশাল চাকতি তৈরি হয়। আসল খেলা শুরু হয় সেই চাকতির ভিতরে। ধুলো জমে জমে প্রোটোপ্ল্যানেট বা শিশু গ্রহের জন্ম হয়। ঠিক যে ভাবে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি হয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শিশু গ্রহের যখন জন্ম হয়, সে তার চারপাশ থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস টানতে থাকে। তার অভিঘাতে তীব্র লাল আলো তৈরি হয়। একে বলে ‘হাইড্রোজেন আলফা’। এই লাল আলো দেখেই নতুন গ্রহের জন্মের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, সূর্যের মতো ‘উইসপিট-২’ নামে একটি নক্ষত্র থেকেই গ্রহটির জন্ম। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘উইসপিট-২বি’। অনুমান, এর ভর প্রায় পাঁচটি বৃহস্পতির সমান। এ ছাড়াও ওই নক্ষত্রমণ্ডলেই ‘সিসি১’ নামে আরও একটি গ্রহের হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরে ভেবে আসছিলেন যে, গ্যাস-ধুলোর চাকতির মধ্যে ফাঁকা জায়গা তৈরি করে সদ্যোজাত গ্রহ। কিন্তু কোনও সদ্য জন্মানো গ্রহকেই এত দিন চাকতির ফাঁকা জায়গায় দেখা যায়নি। তাতে বিজ্ঞানীদের একাংশ সন্দেহ করতে শুরু করেছিলেন, হয়তো চাকতির মধ্যে ওই ফাঁক অন্য কোনও কারণে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই প্রথম বার চাকতির ফাঁকা জায়গাতেই প্রোটোপ্ল্যানেট খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, এতেই প্রমাণ হয়, সদ্যোজাত গ্রহই এই ফাঁকা অঞ্চল তৈরি করেছে।
১৯৯০-এর দশক থেকে এখনও পর্যন্ত মহাকাশে সৌরজগতের বাইরে প্রায় ৫,৯০০টি নতুন গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত আবিষ্কারের অধিকাংশই হয়েছে পরোক্ষ পদ্ধতিতে। প্রত্যক্ষ ভাবে ছবি তুলে নতুন গ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ দেখাতে পারেননি অনেকেই। দূরের গ্রহ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হল ‘ট্রানজ়িট মেথড’। কোনও নক্ষত্রের সামনে দিয়ে গ্রহ পাক খাওয়ার সময়ে তার ছায়ায় নক্ষত্রের আলো সামান্য কমে আসে। সেই আলো থেকে গ্রহের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হন বিজ্ঞানীরা। একে ‘ট্রানজ়িট মেথড’ বলা হয়। সরাসরি ছবি তুলে গ্রহের অস্তিত্বের প্রমাণ দেওয়ার মতো ঘটনা দুই শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে হয়েছে, যা করে দেখিয়েছে নাসার জেমস ওয়েব।