Black Hole

খাচ্ছে, ঘুমোচ্ছে, উঠে আবার গপাগপ গিলে খাচ্ছে নক্ষত্রদের! ব্রহ্মাণ্ডে ব্ল্যাক হোলের এমন কাণ্ড কখনও দেখেননি বিজ্ঞানীরা

জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার ধ্রুপদী তত্ত্ব বলে, ব্ল্যাক হোলের চেহারা বলতে বোঝায় খাবারের সেই থালা, যার কানাটার নাম ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন’। সেই চৌহদ্দির মধ্যে একবার গিয়ে পড়লে আর রেহাই নেই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৮
Share:

সাধারণত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ঘাপটি মেরে থাকে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ব্রহ্মাণ্ডের কিছু নিয়মকানুন আছে। সে সবের তোয়াক্কাই করেনি এই মহারাক্ষস! থাকার কথা ছিল গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। সেখান থেকে সে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছে। ভিটেছাড়া হয়ে সে পৌঁছে গিয়েছে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে, গ্যালাক্সির একেবারে কিনারায়। সেখানে বসেই হাতের কাছে থাকা তারাদের গিলে খাচ্ছে সে।

Advertisement

এখানে যে মহারাক্ষসের কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে একটি ব্ল্যাকহোল, অর্থাৎ কৃষ্ণগহ্বর। তার কিছু কাণ্ডকারখানা দেখেই চমকে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ঘাপটি মেরে থাকে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। এই ব্ল্যাক হোলটি গ্যালাক্সির প্রায় শেষ প্রান্তে (প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে) পৌঁছে গিয়েছে, যা বেশ অবাক করার মতো। বিজ্ঞানীদের আরও বিস্ময়ের অন্য কারণটি হল, খিদে মেটাতে গিয়ে সে একেবারে নক্ষত্রকে গিলে খাচ্ছে না। ধাপে ধাপে খাচ্ছে। প্রথমে কিছুটা খাওয়ার পর সব স্তিমিত। যেন সে ঘুমিয়ে পড়েছে! কিন্তু পর ক্ষণেই আবার জেগে উঠে বাকি অংশও খাচ্ছে সে।

আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের দুই বিজ্ঞানী এবং জেরুজ়ালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক একটি নক্ষত্রকে এ ভাবেই কৃষ্ণগহ্বরের পেটে যেতে দেখেছেন। গিলে খাওয়ার দৃশ্য তাঁরা সরাসরি দেখেছেন বললে ভুল হবে। তা সম্ভবও নয়। আসলে তাঁরা দেখেছেন আলোর বিরাট ঝলকানি। আর পেয়েছেন রেডিয়ো তরঙ্গের আভাস।

Advertisement

জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার ধ্রুপদী তত্ত্ব বলে, ব্ল্যাক হোলের চেহারা বলতে বোঝায় খাবারের সেই থালা, যার কানাটার নাম ‘ইভেন্ট হরাইজ়ন’। সেই চৌহদ্দির মধ্যে একবার গিয়ে পড়লে আর রেহাই নেই। তখন কেবলই পতন! অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে আশপাশের গ্যাসের মেঘ, নক্ষত্রদের গিলে খায় সে। বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি আলোও। স্থান-কালও দুমড়ে মিলিয়ে যায় সেখানে!

গবেষকেরা জানান, এই ব্ল্যাক হোলের চৌহদ্দিতে একটি নক্ষত্র এসে পড়েছিল। কিন্তু সাধারণত ব্ল্যাক খাবারের সবটাই খেয়ে ফেলতে পারে না। কিছু অংশ বাইরেও ছিটকে যায়। তা থেকেই আলোর ঝলকানি আর রেডিয়ো তরঙ্গ তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে দু’বার বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রথম বিস্ফোরণের কয়েক মাস পর আরও বিস্ফোরণ ঘটে। তা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমান, ব্ল্যাক হোলটি একেবারে সব কিছু গিলে খায়নি। দু’দফায় খেয়েছে।

গবেষণাপত্রের লেখক ইটাই ফারাদি বলেন, ‘‘এটা অভূতপূর্ব। নক্ষত্রকে ব্ল্যাক হোল গিলে খাচ্ছে, এ রকম দৃশ্য আগে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ বার যে আলোর ঝলকানি দেখা গিয়েছে, তা আগে দেখা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, এই গোটা ঘটনা ঘটছে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে বহু বহু দূরে। এই দৃশ্য ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আমাদের অনেক ধারণাই বদলে দেবে।’’

কিন্তু প্রশ্ন হল, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ব্ল্যাক হোলটি এ ভাবে ভিটেমাটি ছাড়া হল কী ভাবে? স্বেচ্ছায় না কি তাকে ঘাড় ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। তার স্পষ্ট উত্তর না মিললেও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা, অত ভারী ব্ল্যাক হোলটিকে আসলে ঘাড় ধাক্কাই দিয়েছে প্রচণ্ড শক্তিশালী মহাকর্ষীয় তরঙ্গ।

তা হলে পরের প্রশ্ন ওঠে, সেই মহাকর্ষীয় তরঙ্গের জন্ম হল কী ভাবে? বিজ্ঞানীদের একটি অংশের অনুমান, ওই গ্যালাক্সিটি যে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে (গ্যালাক্সির ঝাঁকে) রয়েছে, সেখানে তার আশপাশের আরও দু’টি গ্যালাক্সি এসে সজোরে ধাক্কা মেরেছে ওই গ্যালাক্সিটিকে। ওই ধাক্কায় দুই গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপার-ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলগুলিও একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ধুন্ধুমার সংঘর্ষে। তার ফলে জন্ম হয় অসম্ভব শক্তিশালী মহাকর্ষীয় তরঙ্গের। একটা পুকুরের মাঝখানে খুব বড় একটা ঢিল বা পাথর ফেললে যেমন জলের ঢেউ ওঠে আর তা সেখানে থাকা যে কোনও বস্তুকেই ছিটকে দূরে পুকুরের পাড়ের দিকে সরিয়ে দেয়, ঠিক তেমন ভাবেই ওই অসম্ভব জোরালো মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধাক্কা মেরে ওই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটিকে তার ‘জন্মভিটে’ গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থল থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর পুকুরে বড় পাথর ফেললে যেমন তার তরঙ্গ উত্তরোত্তর ছড়িয়ে পড়তে থাকে পাড়ের দিকে, তেমনই ওই অসম্ভব শক্তিশালী মহাকর্ষীয় তরঙ্গটিও ওই বাস্তুচ্যুত ব্ল্যাক হোলটিকে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে গ্যালাক্সির পাঁচিলের দিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement