— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
অত্যধিক মহাজাগতিক বিকিরণে যেমন একটি গ্রহ বাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে, তেমনই প্রাণধারণের অযোগ্য স্থানও নাকি হয়ে উঠতে পারে বাসযোগ্য! এমনই আশ্চর্যজনক তথ্য জানা গিয়েছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সঠিক পরিস্থিতিতে এবং নিয়ন্ত্রিত মহাজাগতিক বিকিরণের জেরে আদতে বসবাসের অযোগ্য স্থানেও প্রাণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হতে পারে। আর তা-ই যদি হয়, তা হলে বলা যাবে, ভিন্গ্রহী ‘এলিয়েন’দের আদতে সাহায্য করছে মহাজাগতিক বিকিরণ!
কী ভাবে তা সম্ভব? কেনই বা এত দিন পর এ কথা জানা গেল? আসলে এ ধরনের বিকিরণে মৌলিক জৈবযৌগগুলির ক্ষতি করার মতো যথেষ্ট শক্তি রয়েছে, যার কুপ্রভাবে আমাদের মতো প্রাণীদের শরীরে ক্যানসারের মতো মারণরোগ দেখা দেয়। শুধু অতিবেগুনি রশ্মি, এক্স-রে এবং গামা রশ্মিই নয়, বরং উচ্চ-গতির মহাজাগতিক কণার স্রোতও এ ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তবে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমণ্ডলের কারণে আমরা কিছুটা হলেও সুরক্ষিত। সে কারণেই এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না থাকলে সেই গ্রহে প্রাণের কোনও সম্ভাবনাই থাকার কথা নয়।
কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এ ধরনের ‘ক্ষতিকর’ বিকিরণ আদতে প্রাণের অনুকূল পরিবেশও তৈরি করে দেয়। কী ভাবে? কারণ, মহাকাশে থাকা উচ্চশক্তির কণাগুলির আয়নীকরণের ক্ষমতা রয়েছে। ফলে এগুলি ভূগর্ভস্থ জল কিংবা বরফের অণু থেকে ইলেকট্রনকে আলাদা করতে পারে। একে বলা হয় রেডিওলাইসিস। অর্থাৎ মহাজাগতিক রশ্মিগুলির প্রভাবে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা, অন্ধকার পরিবেশেও অণুজীবদের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট শক্তি উৎপাদিত হতে পারে। নতুন গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসে ভিন্গ্রহীদের বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। তালিকায় এর পরেই রয়েছে মঙ্গল। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী দিমিত্রা আত্রির কথায়, ‘‘এখন থেকে শুধুমাত্র সূর্যালোকযুক্ত, উষ্ণ গ্রহগুলির পরিবর্তে আমরা ঠাণ্ডা এবং অন্ধকার স্থানগুলিতেও প্রাণের সন্ধান করতে পারব। আর সে কারণেই এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের চিন্তাভাবনাকেই বদলে দিতে চলেছে!’’