science news

প্রবাসেই প্রয়াত জীববিজ্ঞানী আনন্দমোহন চক্রবর্তী

মাইক্রোবায়োলজির গবেষণাকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার ব্যাক্টেরিয়ার ‘জেনেটিক ক্রসলিঙ্কিং’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ২১:২১
Share:

প্রয়াত বিজ্ঞানী আনন্দমোহন চক্রবর্তী। -ফাইল ছবি।

না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আনন্দমোহন চক্রবর্তী। আমেরিকার ইলিনয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার। বয়স হয়‌েছিল ৮২ বছর।

Advertisement

মাইক্রোবায়োলজির গবেষণাকে এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার ব্যাক্টেরিয়ার ‘জেনেটিক ক্রসলিঙ্কিং’। শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনন্দমোহনের গবেষণাই বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম ভাবে তৈরি করে এক অসীম ক্ষমতাশালী ব্যাকটেরিয়া, যা রুখে দিতে পারে সাগরে, মহাসাগরে ভাসা ত‌েলের দূষণ। তাঁর ওই কাজ বিশ্বে মাইক্রোবায়োলজির পেটেন্টের জগতে ঘটায় আমূল পরিবর্তন। এক সময় রাষ্ট্রপুঞ্জেরও উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজিতে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ২০০৭ সালে তিনি সম্মানিত হন ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে।

১৯৩৮ সালে আনন্দমোহনের জন্ম হয় বীরভূমের সাঁইথিয়ায়। রামকৃষ্ণ মিশন ও কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার পর আনন্দমোহন মাইক্রোবায়োলজিতে পিএইচডি করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৬৫-তে। তার পর তিনি পাড়ি জমান ইলিনয়ে।

Advertisement

সাগরে, মহাসাগরে ভাসা তেলের দূষণ-রোধী ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কারের পর তার পেটেন্ট করা নিয়ে তাঁর লড়াই পৌঁছয় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে। মার্কিন শীর্ষ আদালতেও জয়ী হন আনন্দমোহন।

আরও পড়ুন- হ্যাক করতে পারবে না কোয়ান্টাম কম্পিউটারও, মহাকাশ থেকে এমন বার্তা পাঠাল চিন​

আরও পড়ুন- সুপারপাওয়ার শিশুর খোঁজ পেল নাসা, জন্ম যার পলাশির যুদ্ধেরও অনেক পরে!

এই বিরল মেধার বিজ্ঞানী শুধু মাইক্রোবায়োলজি নয়, মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন ব্যাক্টেরিয়ার সঙ্গে আধুনিক ক্যানসার গবেষণারও। আনন্দমোহনের কাজ থেক‌েই আমরা প্রথম জানতে পারি ব্যাক্টেরিয়ার দেহেই রয়েছে ‘আজুরিন’ নামে একটি বিশেষ প্রোটিন। যা একটি বিশেষ উপায়েল (‘ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম’), আমাদের শরীরে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া রুখে দিতে পারে।

তাঁর ওই পথপ্রদর্শক গবেষণাই পরে খুলে দেয় ক্যানসার চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেমোথেরাপির একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

‘জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড অরগ্যানিজম্‌স (জিইও)’ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও আনন্দমোহনের কাজ সকলের নজর কাড়ে।

যে গুটিকয়েক বাঙালি বিজ্ঞানীর নাম জৈব রসায়ন এবং মাইক্রোবায়োলোজির আন্তর্জাতিক গবেষণায় পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে, আনন্দমোহনের নাম তাঁদের প্রথম সারিতেই।

রাষ্ট্রপুঞ্জের শিল্পোন্নয়ন সংস্থা কমিটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে আনন্দমোহন তার বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন। ছিলেন আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্‌থ (এনআইএইচ)’-এর ‘স্টাডি’ বিভাগ ও আমেরিকার জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির জীববিজ্ঞান বোর্ডের সদস্যও। ব্রাসেলসে ‘ন্যাটো’ জোটের শিল্প উপদেষ্টা গ্রুপেরও সদস্য আনন্দমোহনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ‘আইনস্টাইন ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স, হেল্থ এবং কোর্টস’-এর পরিচালনা পর্ষদেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন