চিনের রাজধানী বেজিংয়ে কৃত্রিম মেধাসমৃদ্ধ রোবটদের ফুটবল প্রতিযোগিতা। ছবি: সংগৃহীত।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বা লিয়োনেল মেসি নয়, ফুটবল পায়ে এ বার তাক লাগাল কৃত্রিম মেধাসমৃদ্ধ রোবটেরা! চিনে আয়োজিত হয়ে গেল ‘রোবো লিগ’ ফুটবল প্রতিযোগিতা। সাম্প্রতিক সময়ে চিনের জাতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে তেমন ছাপ ফেলতে পারেনি। তবে ফুটবল নিয়ে রোবটদের এই ভেলকি আলোড়ন ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে।
চারটি দল। প্রতিটি দলেই রয়েছে মনুষ্যরূপী রোবট। খুদে ওই রোবটদের হাত পা সবই রয়েছে মানুষের মতো। রয়েছে কৃত্রিম মেধা। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় এই রোবটগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের কৃত্রিম মেধাই। শনিবার ছিল প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচ। গুটি গুটি পায়ে মাঝমাঠ থেকে বল এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, পাস করা, বিপক্ষের তেকাঠিতে বল জড়িয়ে দেওয়া— সবই দেখা গেল শনিবার। মোট আটটি গোল হয়েছে ফাইনাল ম্যাচে। এক পক্ষ দিয়েছে পাঁচটি গোল। অপর পক্ষ তেকাঠিতে বল জড়িয়েছে তিন বার। মানুষের কোনও প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলল মনুষ্যরূপী রোবট (হিউম্যানয়েড)-দের এই প্রতিযোগিতা।
আগামী অগস্ট মাসে বেজিংয়ে ‘ওয়ার্ল্ড হিউম্যানয়েড রোবট গেম্স’ আয়োজিত হওয়ার কথা। ১৫-১৭ অগস্ট ওই প্রতিযোগিতায় আয়োজিত হবে। তাতে রোবটদের নিয়ে ১১টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা রয়েছে। তালিকায় রয়েছে দৌড়, জিমন্যাস্টিক, ফুটবল-সহ আরও অনেক কিছু। তার আগে বেজিংয়ে স্বয়ংক্রিয় রোবটদের ফুটবল প্রতিযোগিতা নজর কাড়ল বিশ্বের।
‘রোবো লিগ’ প্রতিযোগিতার আয়োজকদের বক্তব্য, এই খেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এখানে মানুষের কোনও হস্তক্ষেপ ছিল না। প্রতিটি রোবটকেই নিয়ন্ত্রণ করেছে তাদের কৃত্রিম মেধা। রোবটগুলির মধ্যে রয়েছে উন্নত মানের ‘ভিজ়্যুয়াল সেন্সর’। এর মাধ্যমেই রোবটগুলি ফুটবলকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি কাকে বল পাস করতে হবে, কোন তেকাঠিতে জড়াতে হবে, তা শনাক্ত করতে পারে। খেলার সময়ে মাঠে পড়ে গেলে, নিজেরাই উঠে দাঁড়াতে পারে এই রোবটেরা। তবে সব সময় যে উঠে দাঁড়াবেই, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ম্যাচ চলাকালীন বেশ কয়েকটি রোবটকে স্ট্রেচারে শুইয়ে মাঠের বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছে।
মনুষ্যরূপী রোবট ফুটবলার প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘বুস্টার রোবোটিক্স’-এর কর্তা চেং হাওয়ের মতে, এই ধরনের প্রতিযোগিতাগুলি হিউম্যানয়েডদের ক্ষমতা পরীক্ষা করার একটি আদর্শ মঞ্চ হয়ে উঠতে পারে। তিনি বলেন, “আগামী দিনে আমরা মানুষের সঙ্গে ফুটবল খেলতে পারে এমন রোবট তৈরি করার কথা ভাবছি। তবে এর জন্য আমাদের নিশ্চিত হতে হবে রোবটগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ।”
রোবট নিয়ে গবেষণায় চিনা সংস্থাগুলির অগ্রগতিতে কিছুটা চিন্তিত টেসলা কর্তা ইলন মাস্কও। আমেরিকার ধনকুবের ইলনের সংস্থাও কৃত্রিম মেধাসম্পন্ন রোবট তৈরি করে। টেসলার তৈরি হিউম্যানয়েড ‘অপটিমাস’ ইতিমধ্যে গোটা বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। টেসলার তৈরি রোবট বিশ্ব বাজারে এক নম্বর স্থানে থাকবে, তা নিয়ে সংশয় নেই ইলনের মনে। তবে তাঁর উদ্বেগ, দ্বিতীয় থেকে দশম পর্যন্ত স্থান দখল করে নিতে পারে চিনা সংস্থাগুলির তৈরি রোবট। ফলে বাজারে চিনা সংস্থাগুলির তৈরি কৃত্রিম মেধা ভিত্তিক রোবটগুলি বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।