গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। ছবি: সংগৃহীত।
গত এক বছরে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ বিপুল পরিমাণে জীবন্ত প্রবাল হারিয়েছে। গত চার দশকে এক বছরে এত পরিমাণ জীবন্ত প্রবাল হারায়নি এই প্রবাল প্রাচীর। এমনটাই জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রশাসন। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্স বুধবার তাদের বার্ষিক সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে প্রবালের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল অনেকটাই। কিন্তু ‘ব্লিচিং’-এর কারণে গত এক বছরে অনেকটাই কমে গিয়েছে প্রবালের সংখ্যা।
ব্লিচিংয়ের অর্থ প্রবাল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। প্রবাল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া মানে তা মৃত নয়। ফ্যাকাশে হলে প্রবাল দুর্বল হয়ে যায়। রোগ সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে প্রবাল ফ্যাকাশে হয়ে যায়। ইউনেস্কোর ঘোষিত ‘হেরিটেজ সাইট’ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে তা-ই ঘটেছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সের গবেষক দলের প্রধান মাইক এমস্লাই জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে প্রবাল প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তার পর থেকেই তার বড় অংশ ফ্যাকাশে হতে শুরু করে। এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট যে, এই প্রবাল প্রাচীরের বাস্তুতন্ত্রের উপরে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব কতটা গুরুতর।
মাইক জানিয়েছেন, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে প্রবালের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়ার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর থেকেই স্পষ্ট, উষ্ণায়ন কতটা ক্ষতি করছে এই প্রবাল প্রাচীরের। উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়া উপকূলে ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এই প্রবাল প্রাচীর। মাইক জানিয়েছেন, এখনও সেখানে যথেষ্ট প্রবালের স্তর থাকলেও মানতে হবে যে, সংখ্যাটা কমছে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূল বরাবর ১৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রবাল প্রাচীর। তাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়— উত্তর, মধ্য, দক্ষিণ। রিপোর্ট বলছে, দক্ষিণ ভাগে প্রবাল প্রাচীরের তিন ভাগের এক ভাগ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। মধ্য ভাগে প্রবাল প্রাচীর যত এলাকা জুড়ে রয়েছে, তার ১৪ শতাংশ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে। উত্তর ভাগে প্রবাল প্রাচীরের চার ভাগের এক ভাগ অংশ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, ২০২৩-২৪ সালে প্রচণ্ড গরম পড়ার কারণে প্রবালে এই ফ্যাকাশে ভাব দেখা গিয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ধীরে ধীরে এই ফ্যাকাশে হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সতর্কতা জারি করা হয়।