ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী। -ফাইল ছবি ফাইল ছবি
ত্বকের ক্যানসার সারাতে এক অভিনব পদ্ধতির উদ্ভাবন করলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলিকে পুরোপুরি পুড়িয়ে দিতে পারে এমন ব্যান্ডেজ বানাল বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)। চুম্বকীয় (ম্যাগনেটিক) ন্যানোফাইবার দিয়ে বানানো সেই ব্যান্ডেজ শুধু ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলিকেই পুড়িয়ে দেবে, কিন্তু আশপাশের সুস্থ, সবল কোষগুলির কোনও ক্ষতি করবে না।
ত্বককে সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির ঝাপটা বেশি সইতে হলেই ত্বকের ক্যানসার হয়। শীতের দেশে ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তুলনায় বেশি ঘটে গরমের দেশগুলি থেকে। ত্বকের ক্যানসার সাধারণত দু’রকমের হয়। একটি- ‘মেলানোমা’। আমাদের দেহে যে কোষগুলি ‘পিগমেন্ট’ তৈরি করে সেই কোষগুলিই মূলত দায়ী মেলানোমার জন্য। এই কোষগুলির নাম ‘মেলানোসাইটস’। ত্বকের অন্য কোষগুলি থেকে হয় আর এক ধরনের ক্যানসার। তার নাম- ‘নন-মেলানোমা’। ভারতে সব রকমের ক্যানসার রোগীর মধ্যে অন্তত ২ থেকে ৩ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হন মেলানোমায়।
আইআইএসসি-র ‘সেন্টার ফর বায়োসিস্টেমস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএসই)’-এর গবেষক কৌশিক সুনীত জানিয়েছেন, লোহার একটি বিশেষ অক্সাইড (‘আয়রন টেট্রোক্সাইড’)-এর ‘ন্যানোপার্টিকল’ (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা) এর সঙ্গে পলিক্যাপট্রোল্যাপটন নামে এক ধরনের পলিমার মিশিয়ে সেই মিশ্রণটিকে একটি সার্জিক্যাল টেপের উপর লাগিয়ে এই অভিনব ব্যান্ডেজটি বানানো হয়েছে। বাইরে থেকে বিদ্যুৎশক্তির মাধ্যমে উচ্চ কম্পাঙ্কের চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করা হলে ওই ব্যান্ডেজটি খুব গরম হয়ে ওঠে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন হয় বলে। সেই তাপশক্তিই ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলিকে পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়।
বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘ম্যাগনেটিক হাইপারথার্মিয়া’।
সহযোগী গবেষক শিল্পী জৈনের দাবি, ‘‘ম্যাগনেটিক হাইপারথার্মিয়া পদ্ধতি অনেক দেশেই অনুসৃত হচ্ছে ত্বকের ক্যানসার সারাতে। কিন্তু তা তেমন কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেনি মূলত তিনটি কারণে। প্রথমত, এই পদ্ধতিতে চুম্বকীয় ব্যান্ডেজের সর্বত্র সম পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করা যায় না। দ্বিতীয়ত, ন্যানোপার্টিকলগুলি আমাদের শরীরেই থেকে যায়। তাতে হিতে বিপরীত হয়। কারণ এই পদ্ধতিতে যে সব পদার্থের ন্যানোপার্টিকল ব্যবহৃত হয়, সেগুলি আমাদের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। তৃতীয়ত, এই পদ্ধতিতে ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলিকে পোড়াতে গিয়ে আশপাশের সুস্থ কোষগুলিও পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু নতুন পদ্ধতির সেই সব সীমাবদ্ধতা নেই।’’
ব্যান্ডেজটি কতটা কার্যকর তা বুঝতে গবেষকরা সেটিকে যেমন ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর উপর প্রয়োগ করেছেন, তেমনই সেটিকে পরীক্ষা করেছেন ত্বকের ক্যানসারে আক্রান্ত ইঁদুরের উপরেও। গবেষকদের দাবি, দু’টি ক্ষেত্রেই তাঁদের উদ্ভাবিত ব্যান্ডেজ সফল হয়েছে।
এই ভাবে কাজ করবে ম্যাগনেটিক ব্যান্ডেজ। ছবি সৌজন্যে- আইআইএসসি, বেঙ্গালুরু। ছবি সৌজন্যে- আইআইএসসি, বেঙ্গালুরু।