মঙ্গল গ্রহের মাটিতে রহস্যময় পাথরের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গল গ্রহের মাটিতে নতুন এক ধরনের পাথর আবিষ্কার করল নাসা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পাঠানো পারসিভারেন্স রোভার গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে মঙ্গলের মাটিতে রয়েছে। পাথর বিশ্লেষণ করাই তার কাজ। সেই রোভারের ক্যামেরায় সম্প্রতি নতুন ধরনের পাথরটি ধরা পড়েছে। বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বেড়ে গিয়েছে এই পাথরের খবরে। কারণ, পাথরটি মঙ্গলে থাকারই কথা নয়!
নাসার মার্স পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলের মাটিতে পাওয়া প্রতিটি পাথর খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখে। নতুন পাওয়া পাথরটি প্রায় ৩১ ইঞ্চি চওড়া। এটি পাওয়া গিয়েছে মঙ্গলগ্রহের জেজ়িরো ক্রেটারের ভারনোডেন এলাকায়। বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ফিপসাকস্লা। এই পাথরের মোট দু’টি ছবি নাসার হাতে এসেছে। একটিতে তাকে দেখা যাচ্ছে একেবারে কাছ থেকে, অন্যটিতে কিছুটা দূর থেকে।
ফিপসাকস্লা মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়। কারণ, তার মধ্যে এমন দু’টি ধাতু রয়েছে, যা মঙ্গলের আর কোনও পাথরে এত বেশি পরিমাণে নেই। লোহা এবং নিকেল সমৃদ্ধ পাথরখণ্ড ফিপসাকস্লা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, বাইরে থেকে এই পাথর মঙ্গলে এসে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি আসলে একটি উল্কাপিণ্ড, যা অতীতে কোনও এক সময়ে মঙ্গলের মাটিতে আছড়ে পড়েছিল। সেই থেকে সেখানেই রয়ে গিয়েছে।
লোহা এবং নিকেল সমৃদ্ধ উল্কাপিণ্ড সাধারণত বড়সড় গ্রহাণুর কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন হয়। হতে পারে, মঙ্গলের পাথরখণ্ডটির উৎস তেমনই কোনও গ্রহাণু। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে ভাল হত, যদি এই পাথরের অংশ পৃথিবীতে নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখা যেত। কিন্তু এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, নাসার পারসিভারেন্স রোভার কেবল বস্তুকে পরীক্ষা করে দেখতে পারে এবং তার ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে পারে। বস্তুটিকে পৃথিবীতে পাঠানোর ক্ষমতা তার নেই। তার জন্য অন্য কোনও যান মঙ্গলে পাঠাতে হবে নাসাকে। এই মুহূর্তে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই।
নতুন পাথরের ছবি দেখে প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল নাসার বিজ্ঞানীদের। অন্য পাথরগুলির চেয়ে এর আকার ছিল কিছুটা ‘অস্বাভাবিক’। এই পাথর তুলনামূলক বড় দেখাচ্ছিল। পারিপার্শ্বিকের তুলনায় কিছুটা উঁচুতে অবস্থান করছিল। পাথরের গায়ে ক্ষতবিক্ষত করা অংশ দেখেও বিজ্ঞানীদের চোখ আটকে গিয়েছিল শুরুতেই। পারসিভারেন্স রোভার এই পাথরটির ধরন পরীক্ষা করতে সুপারক্যাম ইনস্ট্রুমেন্টের লেজ়ার এবং স্পেক্ট্রোমিটার ব্যবহার করেছে। তা থেকে নিখুঁত ভাবে জানা গিয়েছে পাথরের মধ্যেকার রাসায়নিক, লোহা এবং নিকেলের পরিমাণ।
এর আগে মঙ্গলের মাটিতে লোহা ও নিকেল সমৃদ্ধ ধাতুর হদিস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু পারসিভারেন্স রোভারের ক্যামেরায় এই ধরনের পাথর এই প্রথম। ফিপসাকস্লা কোনও উল্কাপিণ্ড কি না, বিজ্ঞানীরা এখনও তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। তবে এটি লাল গ্রহের ইতিহাস সম্বন্ধে বহু অজানা তথ্য আমাদের সামনে এনে দিতে পারে, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মঙ্গলের মাটিতে প্রথম পা রেখেছিল নাসার পারসিভারেন্স রোভার। সেই থেকে লাল গ্রহের পাথুরে ভূমি, প্রাচীন হ্রদের উপত্যকায় বিচরণ করে বেড়াচ্ছে যন্ত্রটি। মঙ্গল গ্রহে আদৌ কোনও কালে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, ভবিষ্যতে সেখানে প্রাণীর বসবাস সম্ভব কি না, এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল বহু দিনের। পারসিভারেন্স রোভারও নাসার সেই অনুসন্ধান অভিযানেরই অঙ্গ। মঙ্গলে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করা প্রথম যন্ত্র এই রোভার। এই ভিতরে ছোটখাটো একটি ল্যাবরেটরি রয়েছে। পাথরের নমুনা সেখানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা যায়। মঙ্গল সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। পৃথিবীর পড়শি গ্রহে পারসিভারেন্স রোভারের মেয়াদের কোনও সময়সীমা বাঁধা নেই। যত দিন তা সক্রিয় থাকবে, তত দিন চলবে অন্বেষণ। ফলে এর মাধ্যমে আরও অভিনব আবিষ্কারের আশায় রয়েছে নাসা।