Viagra in Deafness Treatment

শুধু যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি নয়, এক ধরনের বধিরতাও সারাতে পারে ভায়াগ্রা! নতুন হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা

পরিসংখ্যান বলছে, সারা পৃথিবীতে প্রতি ২০০০ জনের মধ্যে অন্তত তিন জন কানের সমস্যা নিয়ে জন্মান। জন্মগত হলে এই সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব। ফলে সারা জীবন বধির হয়েই থাকতে হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
Share:

বধিরতার চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে যৌন উত্তেজনাবর্ধক ভায়াগ্রা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পুরুষের যৌন উত্তেজনাবর্ধক ওষুধ হিসাবে ভায়াগ্রার পরিচিতি রয়েছে। তবে এ বার অন্য এক রোগের চিকিৎসাতেও এই ওষুধ ব্যবহার করার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এক ধরনের বধিরতার চিকিৎসা ভায়াগ্রা দিয়ে সম্ভব। এমনকি, জন্মগত বধিরতার সমস্যাও এর মাধ্যমে সারানো যেতে পারে। নতুন এই আবিষ্কার প্রয়োগ করা গেলে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটবে, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

Advertisement

পরিসংখ্যান বলছে, সারা পৃথিবীতে প্রতি ২০০০ জনের মধ্যে অন্তত তিন জন কানের সমস্যা নিয়ে জন্মান। জন্মগত হলে এই সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব। ফলে সারা জীবন বধির হয়েই থাকতে হয় তাঁদের। জন্ম থেকে বধির হলে কথা বলতে শেখাও আর হয়ে ওঠে না। ফলে এঁরা হন মূক ও বধির। সমাজে চলার পথে পদে পদে তাঁদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জন্মগত এই বধিরতার চিকিৎসাতেই দিশা দেখাচ্ছে নতুন গবেষণা।

‘জার্নাল অফ ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন’-এ সম্প্রতি বধিরতা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এক ধরনের বিরল শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার নেপথ্যে রয়েছে তিনটি জিনগত পরিবর্তন (জেনেটিক মিউটেশন)। তার চিকিৎসায় যৌন উত্তেজনাবর্ধক ওষুধ ভায়াগ্রা ব্যবহৃত হতে পারে। বস্তুত, পুরুষের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ ব্যবহৃত হয়, তার নাম স্লাইডনাফিল। ভায়াগ্রা ব্র্যান্ডের নামে তা বিক্রি করা হয়। তাই ওই নামেই তার পরিচিতি।

Advertisement

আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল জিন সিকোয়েন্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বধিরতায় দায়ী জিনটিকে খুঁজে বার করেছেন। ওই জিন কার্বক্সিপেপটিডেস ডি (সিপিডি) নামের একটি উৎসেচককে এনকোড করে। সেখানেই ঘটে যায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন, যা শ্রবণশক্তিকেও রোধ করে। তুরস্কের তিনটি ভিন্ন পরিবারে জন্মগত বধির তিন জনকে খুঁজে বার করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গিয়েছে, বংশগত কোনও যোগ না-থাকা সত্ত্বেও তাঁরা প্রত্যেকে সিপিডি জিনের বিরল রূপ ধারণ করছেন। জিনগত পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর স্বাস্থ্যে তার প্রভাব বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। দেখেন, একটি সাধারণ ওষুধের মাধ্যমে এই সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী রং গ্রেস জ়াই বলেন, ‘‘এই গবেষণাটা খুবই চমকপ্রদ। কারণ, আমরা এমন একটা নতুন জিন মিউটেশনের খোঁজ পেয়েছি, যা বধিরতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা একটা উপায় পেয়েছি যার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’’

মানব ত্বকের টিস্যু এবং ইঁদুরের কানের ভিতরের যে অংশে নিষ্ক্রিয় সিপিডি জিন থাকে, সেই ককলিয়া অংশের কোষের বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, বধিরতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জিন-পরিবর্তনগুলি আসলে অ্যামিনো অ্যাসিড আর্জিনিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তা ছাড়া, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদার্থের মাত্রাও কমছে এর ফলে। আর্জিনিন উৎপন্ন না-হলে নাইট্রিক অক্সাইডও তৈরি হয় না। স্নায়ুতন্ত্রের জন্য যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাইট্রিক অক্সাইডের অভাবে ইঁদুরের কানের ভিতরের সংবেদনশীল কোষগুলি মরে যায়। ফলে তারা আর কানে শুনতে পায় না। মাছির ক্ষেত্রেও এই ধরনের পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় একই ফল মিলেছে। জ়াই বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম, বিশেষ করে চুলের কোষে আর্জিনিনের মাত্রা ঠিক রাখে সিপিডি। তার ফলে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয় এবং দ্রুত সঙ্কেত পরিবাহিত হয়। সেই কারণেই সিপিডি হ্রাসে চুলের কোষ বেশি সংবেদনশীল। তবে স্নায়ুতন্ত্রের অন্য কোষের ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য।’’

কানের ভিতরের মৃত কোষগুলিতে আর্জিনিনের মাত্রা পরীক্ষামূলক ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, তাতে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ আবার বেড়ে যাচ্ছে এবং কোষীয় চাপ কমছে। ভায়াগ্রার মাধ্যমেও এই পদ্ধতি ঘটানো সম্ভব, মত গবেষকদের। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জিন থেরাপির মাধ্যমে বধিরতার চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছে। ভায়াগ্রার প্রয়োগে কতটা সমাধান হতে পারে, তা দেখা হচ্ছে। নতুন গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে আশাবাদী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement