Science

মাস দেড়েকের মধ্যেই ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ধূমকেতু, গ্রহাণু! জানাল নাসা

আর মেরেকেটে মাস দেড়েক। পৃথিবীর দিকে তারা ছুটে আসছে অসম্ভব গতিতে! খুব দূর থেকে এক রকম ঝাপসা ভাবেই ধেয়ে আসা ওই দু’টি মহাজাগতিক বস্তুকে দেখতে পেয়েছে নাসার মহাকাশযান- ‘নিওওয়াইজ’।

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৭ ১০:২৪
Share:

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এই অচেনা ‘ঘাতক’!

আর মেরেকেটে মাস দেড়েক। পৃথিবীর দিকে তারা ছুটে আসছে অসম্ভব গতিতে!

Advertisement

খুব দূর থেকে এক রকম ঝাপসা ভাবেই ধেয়ে আসা ওই দু’টি মহাজাগতিক বস্তুকে দেখতে পেয়েছে নাসার মহাকাশযান- ‘নিওওয়াইজ’। তাদের একটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছে ভয়ঙ্কর একটি গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড। অন্যটি ধূমকেতু। তাঁদের এও মনে হয়েছে, বহু দূর থেকে যাকে ‘গ্রহাণু’ বলে মনে করা হচ্ছে, তা একটি ধূমকেতুও হতে পারে।

‘হামলা চালাতে’ পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়বে দু’-দু’টি অচেনা, অজানা মহাজাগতিক বস্তু। আর ঠিক মাস দেড়েকের মধ্যেই। প্রায় একই সঙ্গে। ‘নিওওয়াইজ’ মহাকাশযান দেখেছে, পৃথিবীর দিকে রীতিমতো ঝোড়ো গতিতে ছুটে আসছে এই দুই আগন্তুক।

Advertisement

এই দুই আগন্তুকের কথা আগে জানা ছিল না আমাদের। হঠাৎ করেই গত নভেম্বরে নাসার ‘নিওওয়াইজ’ মহাকাশযানের টেলিস্কোপের ‘চোখে’ পড়ে যায় ওই দুই ‘আগন্তুকে’র শরীর। জানা যায়, ভয়ঙ্কর গতিতে তারা ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে। গ্রহাণুটি ছুটে আসছে বৃহস্পতির পাশ কাটিয়ে গ্রহাণুপুঞ্জ ও মঙ্গলের কক্ষপথ ছুঁয়ে পৃথিবীর দিকে। এই গ্রহাণুটির আবিষ্কার হয়েছে সদ্যই। ২০১৬-র ২৭ নভেম্বরে। এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘2016-WF9’। এই ভয়ঙ্কর গ্রহাণুটি পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকে পড়বে আর ঠিক মাসদেড়েক পরে। ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে। আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহটি থেকে তখন তার দূরত্ব থাকবে ৩ কোটি ২০ লক্ষ মাইল। বা, ৫ কোটি ১০ লক্ষ কিলোমিটার। নভেম্বরে যখন প্রথম হদিশ মিলেছিল এই গ্রহাণুটির, তখন সেটি বৃহস্পতির কক্ষপথে চক্কর মারছিল। আর নিজে লাট্টুর মতো বনবন করে ঘুরতে ঘুরতে বৃহস্পতিকে পাক মারছিল গ্রহাণুটি পৃথিবীর ৪ বছর ৯ মাস সময়ে। এই ‘2016 WF9’ আকারে বেশ বড়। লম্বায় ০.৩ থেকে ০.৬ মাইল বা আধ কিলোমিটার থেকে ১ কিলোমিটার মতো।


‘2016-WF9’ পৃথিবীর কক্ষপথে ঢুকছে ২৫ ফেব্রুয়ারি


‘2016-WF9’-কে অনেকটা এমনই দেখেছে ‘নিওওয়াইজ’ মহাকাশযান


ধেয়ে আসছে আরও এক আগন্তুক- ধূমকেতু ‘C/2016 U1 NEOWISE

কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এই গ্রহাণুটি?

আমেরিকার জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘নিওওয়াইজ’ মহাকাশযানের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এখনও পর্যন্ত যেটুকু হিসেব কষতে পেরেছি, তাতে বলা যায়, ততটা বিপদের আশঙ্কা নেই এই গ্রহাণুটি থেকে। আপাতত পৃথিবীর কক্ষপথে ঢোকার পর তা আমাদের বাসযোগ্য গ্রহটিকে পাক মেরে আবার চলে যাবে সৌরমণ্ডলের বাইরের দিকে। মানে, মঙ্গলের পাশ কাটিয়ে সেটি আবার ছুটে যাবে গ্রহাণুপুঞ্জের দিকে। তার পর তার ‘ডেস্টিনেশন’ হবে বৃহস্পতির কক্ষপথ।’’

কোথা থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এই আগন্তুকরা?


যে ভাবে ‘নিওওয়াইজে’র নজরে পড়েছে আগন্তুকরা (বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত)

ধ্রুবজ্যোতির কথায়, ‘‘এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এদের উৎস-স্থল হতে পারে অনেক কিছুই। এটা ধূমকেতুও হতে পারে। এমনকী, সে হতে পারে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে থাকা মূল গ্রহাণুপুঞ্জ বা অ্যাস্টারয়েড বেল্ট থেকে ‘ছিন্নমূল উদ্বাস্তু’! তবে এটা অসম্ভব রকমের কালো। তার মানে, আলো প্রায় প্রতিফলিত করে না বললেই চলে। এর কক্ষপথ আর উজ্জ্বলতার হিসেব কষে মনে হচ্ছে, এটা কোনও ধূমকেতু হতে পারে। কিন্তু ধূমকেতুর যেমন সঙ্গে থাকে ধুলো আর গ্যাসের মেঘ, এর তেমন কিছু নেই।’’

আরও পড়ুন- মৃত তারাদের ‘আত্মা’ বেরিয়ে যেতে দেখল অ্যাস্ট্রোস্যাট!

অন্য আগন্তুকটি একটি ধূমকেতু। নাসার মহাকাশযান ‘নিওওয়াইজ’-এর টেলিস্কোপের নজরে পড়েছে তা এই গ্রহাণুটির হদিশ মেলার ঠিক এক মাস আগে। এই ধূমকেতুটির নাম দেওয়া হয়েছে- ‘C/2016 U1 NEOWISE’।

এই ধূমকেতুটি যে গ্রহাণু নয়, সে ব্যাপারে কি নিশ্চিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?


যে ভাবে ‘নিওওয়াইজে’র নজরে পড়েছে এক আগন্তুক ‘2016-WF9’ (সবুজ গোলক)

নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) সেন্টার ফর নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজের অন্যতম সদস্য জ্যেতির্বিজ্ঞানী ধ্রুবজ্যোতি বলছেন, ‘‘এটি কোনও ছিন্নমূল উদ্বাস্তু নয়। আমরা নিশ্চিত, এটা একটা ধূমকেতুই। তবে এর আগে এই ধূমকেতুটির হদিশ পাইনি আমরা। এই ধূমকেতুটিকে বাইনোক্যুলার দিয়েই দেখা যাবে বলে আশা করছি। তবে খুব নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না, কারণ, ধূমকেতুদের উজ্জ্বলতা সম্পর্কে খুব নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া কখনওই সম্ভব নয়। ধূমকেতুরা স্বভাব-চরিত্রে যে খুবই খামখেয়ালি হয়! তবে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে এই জানুয়ারির প্রথম দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকের আকাশে দেখা যেতে পারে। ভোর হওয়ার সামান্য আগে। ধূমকেতুটি প্রতিদিনই একটু একটু করে সরে যাবে আকাশের দক্ষিণ দিকে। তার পর আগামী ১৪ জানুয়ারি ধূমকেতুটি ঢুকে পড়বে সূর্যকে পাক মারা বুধ গ্রহের কক্ষপথে। এই সৌরমণ্ডলে পরিক্রমণের সময় সেটাই হবে সূর্যের থেকে তার সবচেয়ে কম দূরত্ব। এই ধূমকেতুটি ঘুরছে অত্যন্ত দীর্ঘ কোনও কক্ষপথে। যা পেরোতে তার সময় লাগে কয়েক হাজার বছর। তাই এর আগে এই ধূমকেতুটি আমাদের নজরে পড়েনি। তবে এই ধূমকেতুটি থেকেও আমাদের কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই বলেই মনে হচ্ছে।’’

গত সাত বছরের মহাকাশ পরিক্রমায় এখনও পর্যন্ত নাসার ‘নিওওয়াইজ’ মহাকাশযান প্রায় ৩৪ হাজার গ্রহাণু আবিষ্কার করেছে। ২০১৩-র ডিসেম্বর থেকে কিছু দিন অবশ্য মহাকাশে তার গ্রহাণু-সন্ধানের কাজ বন্ধ রেখেছিল ‘নিওওয়াইজ’। ‘2016 WF9’ গ্রহাণুটি যদি শেষ পর্যন্ত একটি ধূমকেতু বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে ‘নিওওয়াইজ’ নতুন করে মহাকাশে গ্রহাণু-সন্ধানের কাজ শুরুর পর এটাই হবে দশম আবিষ্কৃত ধূমকেতু। আর সেটি যদি গ্রহাণু বলে প্রমাণিত হয়, তা হলে তা হবে ‘নিওওয়াইজে’র গ্রহাণু আবিষ্কারের সেঞ্চুরি!

ছবি ও ভিডিও সৌজন্যো: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন