(বাঁ দিক থেকে) চিকিৎসায় নোবেলজয়ী ম্যারি ই ব্রুঙ্কো, ফ্রেড র্যাম্সডেল এবং শিমন সাকাগুচি। ছবি: ‘দ্য নোবেল প্রাইজ়’-এর সমাজমাধ্যম পাতা থেকে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে এ বছরের নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণা করল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। ২০২৫ সালে চিকিৎসায় নোবেল পাচ্ছেন ম্যারি ই ব্রুঙ্কো, ফ্রেড র্যাম্সডেল এবং শিমন সাকাগুচি। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলিকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তা নিয়ে গবেষণার জন্য নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন এই ত্রয়ী। কী কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজ শরীরের অঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে না, তা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্যই চিকিৎসায় নোবেল পেলেন ম্যারি, ফ্রেড এবং শিমন।
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় এটি নিজের শরীরের অঙ্গগুলিকেই আক্রমণ করতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কেন নিজ শরীরের ক্ষতি করতে বাধা পায়, তা নিয়ে গবেষণা চালান তাঁরা। তাঁদের গবেষণালব্ধ ফল ক্যানসার এবং অন্য ‘অটোইমিউন’ ব্যাধি (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজ দেহের সুস্থ কলাগুলিকে আক্রমণ করার ফলে যে রোগগুলি হয়)-সহ বিবিধ রোগের নতুন চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্য জীবাণু থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এটি দেহের রোগজীবাণুকে শনাক্ত করে তারা শরীরের নিজস্ব কোষ থেকে আলাদা করে। এই রোগজীবাণুগুলির প্রতিটির ভিন্ন ভিন্ন গড়ন রয়েছে। আবার অনেক জীবাণুর কোনও বিশেষ প্রতিরূপের সঙ্গে আমাদের মানবদেহের কোষের অনেক মিলও রয়েছে। তা হলে কোন ক্ষেত্রে জীবাণুর উপর আক্রমণ করতে হবে, কোন ক্ষেত্রে করতে হবে না, তা কী ভাবে স্থির করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা? নিজ শরীরকেই আক্রমণ করা থেকে কী বাধা দেয় এটিকে? তা নিয়ে গবেষণা করতে করতেই এই ত্রয়ী জানতে পারেন, এর নেপথ্যে রয়েছে একটি বিশেষ ধরনের রোগ প্রতিরোধক কোষ। এই কোষগুলিকে বলা হয় ‘রেগুলেটরি টি সেল’।
রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে কোষটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল ‘টি সেল’। একে বলা যায় শরীরের প্রহরী। এই কোষগুলিই বিভিন্ন ভাইরাস বা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কোষগুলিকে ধ্বংস করে। এর পাশাপাশি শরীরে আরও এক ধরণের রোগ প্রতিরোধক কোষ রয়েছে— ‘রেগুলেটরি টি সেল’। এই কোষগুলিই মানবদেহে ‘অটোইমিউন’ ব্যাধি হওয়া আটকায়। এই বিষয়টি প্রথম আবিষ্কার করেন ম্যারি, ফ্রেড এবং শিমন।
আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার পরে ব্রুঙ্কো বর্তমানে সিয়াটেলে ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেম্স বায়োলজিতে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসাবে কাজ করছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন র্যাম্সডেল। তিনি এখন সান ফ্রান্সিসকোয় সোনোমা বায়োথেরাপিটিক্সে বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা হিসাবে কর্মরত। সাকাগুচি পিএইচডি করেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে তিনি ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টারে অধ্যাপনা করেন।