Nobel Prize

Nobel Prize In Physiology 2021: তাপ, চাপের তারতম্য আমরা ধরতে পারি কী ভাবে? জানিয়ে নোবেল পেলেন দু’জন

পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিলেন অধ্যাপক ডেভিড জুলিয়াস ও অধ্যাপক আর্ডেম পাটাপৌশিয়ান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৫০
Share:

শারীরতত্বে এ বার দুই নোবেলজয়ী। অধ্যাপক ডেভিড জুলিয়াস (বাঁ দিকে) ও অধ্যাপক আর্ডেম পাটাপৌশিয়ান। ছবি- নোবেল কমিটির সৌজন্যে।

আমাদের স্পর্শেন্দ্রিয় কী ভাবে সাড়া দেয় পরিবেশকে? কী ভাবে বোঝে উষ্ণতা, শৈত্য? কী ভাবে অন্য কোনও ব্যক্তি বা বস্তুর স্পর্শ বোধ করি আমরা? আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা খুব জরুরি, সেই স্পর্শবোধ, অনুভূতির জটিল রহস্য ভেদ করার জন্যই দু’জনকে দেওয়া হল এ বছরের নোবেল পুরস্কার। শারীরতত্ত্ব/চিকিৎসাবিজ্ঞানে। পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিলেন অধ্যাপক ডেভিড জুলিয়াস ও অধ্যাপক আর্ডেম পাটাপৌশিয়ান। সোমবার এই দুই পুরস্কারজয়ীর নাম ঘোষণা করেছে নোবেল কমিটি।

Advertisement

তাপে, চাপে কী ভাবে সাড়া দেয় স্নায়ু

আমাদের গাত্রত্বকের ঠিক নীচে থাকা স্নায়ুগুলি কী ভাবে চট করে ধরে ফেলতে পারে তাপমাত্রার তারতম্য? উষ্ণতা, শৈত্য, বিভিন্ন ব্যক্তি ও বস্তুকে আমাদের স্পর্শ করার অনুভূতিগুলি কেন একে অন্যের চেয়ে আলাদা হয়, তার কারণ জানতে কাঁচা লঙ্কা থেকে পাওয়া একটি যৌগকে ব্যবহার করেছিলেন জুলিয়াস। খুব কটু গন্ধের সেই যৌগটির নাম- ‘ক্যাপসাইসিন’। এই যৌগটি স্পর্শ করলে আমরা তীব্র জ্বালাবোধ করি ত্বকে। এই যৌগটির মাধ্যমেই জুলিয়াস প্রথম জানতে পেরেছিলেন, আমাদের স্নায়ুর সেন্সরগুলি কী ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, বস্তু ও পরিবেশকে সাড়া দেয়। তাপমাত্রার তারতম্য বুঝতে পারে। পড়ে নিতে পারে অব্যর্থ ভাবে।

Advertisement

আর অধ্যাপক পাটাপৌশিয়ান প্রথম দেখিয়েছিলেন, কী ভাবে বাইরের নানা ধরনের চাপ বুঝতে পারে, তাদের বাড়া-কমা অনুভব করতে পারে আমাদের গাত্রত্বক ও বিভিন্ন অঙ্গে থাকা স্নায়ুগুলি। চাপ আর তার তারতম্য বুঝতে পারে এমন কয়েকটি মানবকোষকে ব্যবহার করে পাটাপৌশিয়ান আমাদের স্নায়ুর এমন কয়েকটি সেন্সরের সন্ধান পেয়েছিলেন, বাইরের যে কোনও চাপ আর তার রকমফেরের গন্ধ যা নাকে পৌঁছে দেয় সঙ্গে সঙ্গে।

এই দু’টি আবিষ্কারই অন্য কোনও ব্যক্তি, বস্তু ও পরিবেশের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়ার জটিল রহস্য ভেদ করেছিল। পরিবেশকে কী ভাবে চেনে, বোঝে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, সেই পথগুলিই দেখিয়ে দিয়েছিল।

গরম দুপুরে খালি পায়ে ঘাসে হাঁটলে…

পরিবেশকে আমরা ঠিক কী ভাবে চিনতে, বুঝতে পারি, মানুষের এই কৌতূহল ছিল হাজার হাজার বছরের। কেন আলো এসে পড়লে আমরা বুঝতে পারি, এটা অন্ধকার নয়, আলো? কী ভাবে বুঝি এটা লাল, নাকি নীল রঙের আলো? নাকি হলুদ বা সবুজ? কী ভাবে আমাদের কান চটজলদি বুঝে নিতে পারে কোনটা কর্কশ শব্দ, কোনটাই বা মিঠে সুরের, কোন সুরে তাল আছে আর কোথায়ই বা সেই তাল ভাঙছে? আমাদের নাক কী ভাবে কটু আর মিষ্ট গন্ধের ফারাকটা বুঝে ফেলতে পারে? জিভের স্বাদকোরকগুলি কী ভাবে বুঝে ফেলতে পারে, কোনটার স্বাদ তেতো, কোনটা ঝাল আর কোনটাই বা অম্ল বা সুমিষ্ট?

গরম কেটলি স্পর্শ করলেই হাত সরিয়ে নেন কেন ঝট করে? -প্রতীকী ছবি।

আরও এক রকম ভাবে আমরা অনুভব করতে পারি পরিবেশকে। খুব গরমের দুপুরে খালি পায়ে ঘাস থাকা মাঠে হাঁটলে। তখন আমরা সূর্যের তাপ অনুভব করতে পারি। প্রত্যেকটি ঘাসকে যেন আলাদা ভাবে অনুভব করতে পারি। ঘাসগুলির মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসেরও টের পায় আমাদের খালি পায়ের ত্বকের নীচে থাকা স্নায়ুগুলি। যে পরিবেশ দ্রুত নিজেকে বদলে ফেলছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এই ধরনের অনুভূতিগুলি আমাদের বেঁচে থাকা, টিকে থাকার জন্য যে খুবই জরুরি।

মস্তিষ্ক ও ত্বকের বার্তা বিনিময়: দেকার্তের পর যা অজানা ছিল

মস্তিষ্কের সঙ্গে যে আমাদের ত্বকের বিভিন্ন অংশের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, নিয়মিত বার্তা বিনিময় হয় এদের মধ্যে সপ্তদশ শতাব্দীতে তা প্রথম আঁচ করেছিলেন ফরাসি দার্শনিক রনে দেকার্ত। তাই গরম উনুনে পা দিলে আমাদের অনুভূতি যে রকম হয়, কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফে পা দিলে ঠিক সেই রকম অনুভূতি হয় না। অন্য ধরনের শিহরণ হয়। পরিবেশের এই তারতম্য ধরার ক্ষেত্রে যে আমাদের মস্তিষ্কে আলাদা আলাদা নিউরন (স্নায়ুকোষ) আছে প্রথম সেই কথা জানানোর জন্য ১৯৪৪ সালে শারীরতত্ব/চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন দুই বিজ্ঞানী- জোসেফ এরলাঙ্গার ও হারবার্ট গ্যাসার। তাঁরা দেখিয়েছিলেন, কোনও বিশেষ স্নায়ুকোষ আমাদের যন্ত্রণা বুঝতে সাহায্য করে। আবার অন্য কয়েকটি স্নায়ুকোষ আদর বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

কিন্তু তাপমাত্রা আর বাইরের চাপের ভিন্নতা কী ভাবে আলাদা আলাদা বিদ্যুৎতরঙ্গ পাঠায় মস্তিষ্কে, তা বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই পথগুলিই দেখিয়েছিলেন জুলিয়াস এবং পাটাপৌশিয়ান।

বরফে হাত দিলে কেন শিরশিরানি হয়? -প্রতীকী ছবি।

কী ভাবে এগিয়েছিলেন জুলিয়াস?

সান ফ্রান্সিসকোয় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড জুলিয়াস তাঁর সতীর্থদের নিয়ে গবেষণাটি চালিয়েছিলেন গত শতাব্দীর নয়ের দশকের শেষাশেষি। তাঁর বয়স এখন ৬৬ বছর। কাঁচা লঙ্কা গায়ে ঘষলে কেন জ্বালা করে, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে জুলিয়াস খোঁজ পেলেন লঙ্কায় থাকা একটি যৌগ ক্যাপসাইসিন-এর। কেন হয় জানতে মানবদেহের কোটি কোটি ডিএনএ টুকরোর লাইব্রেরি বানিয়ে ফেললেন জুলিয়াস ও তাঁর সতীর্থরা। এই সব ডিএনএ আমাদের শরীরের এমন সব জিনে রয়েছে, যেগুলি তাপ, যন্ত্রণা ও বিভিন্ন ধরনের স্পর্শে জেগে ওঠে। আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে আরও তৎপর। এই ভাবে বহু জিনের মধ্যে তাঁরা শুধুমাত্র একটি জিন খুঁজে বার করলেন, যা কাঁচা লঙ্কায় থাকা যৌগ ক্যাপসাইসিনের স্পর্শ পেলেই জেগে ওঠে, সক্রিয় হয়ে ওঠে। তন্ন তন্ন খুঁজে তারা বার করলেন মানবশরীরে ক্যাপসাইসিনের ‘গন্ধ শুঁকতে’ সক্ষম জিনটিকে। পরে তাঁরা এও দেখলেন, একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন তৈরি করতেও মূল ভূমিকা নিচ্ছে এই জিনটিই। ওই প্রোটিনই আমাদের স্নায়ুকে তাপমাত্রা, যন্ত্রণা ও বিভিন্ন ধরনের স্পর্শের তারতম্য বুঝিয়ে, চিনিয়ে দেওয়ার এক ও একমাত্র ‘গাইড’। আর সেই তারতম্যই মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের বিদ্যুৎতরঙ্গের জন্ম দেয়। তার ফলেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি হয়।

যন্ত্রণায় কেন মুখের ছবিটা হয় এই রকম? -প্রতীকী ছবি।

কী ভাবে এগিয়েছিলেন পাটাপৌশিয়ান?

তাপের তারতম্য কী ভাবে বুঝতে পারে আমাদের স্নায়ুগুলি তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু বাইরের চাপের তারতম্যের গন্ধ কী ভাবে শুঁকতে পারে আমাদের স্নায়ু, সেটা দেখালেন ক্যালিফোর্নিয়ার লা জোলায় স্ক্রিপ্‌স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আর্ডেম পাটাপৌশিয়ান। তাঁর বয়স এখন ৫৪ বছর। ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে এটা কী ভাবে হয়, জানা ছিল। কিন্তু মানুষ-সহ বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে সেটা কী ভাবে হয়, তা প্রথম জানালেন পাটাপৌশিয়ান ও তাঁর সতীর্থরা। তাঁরা হদিশ পেলেন মানবদেহে ৭২টি এমন জিনে্র, যারা বাইরের চাপ আর তার তারতম্যে জেগে ওঠে বা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে দু'টি জিন আবার এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি করিতকর্মা হয়ে ওঠে। ‘পিয়েজো-১’ এবং ‘পিয়েজো-২’।

খুব জোরে হঠাৎ কেউ ধাক্কা দিলে কেন আমাদের মুখ-চোখের অবস্থা এমন হয়? -প্রতীকী ছবি।

অতিমারি ও এ বারের নোবেল পুরস্কার

অতিমারির সময়ে যখন আমাদের স্বাদ, গন্ধ এমনকি স্পর্শের মতো অনুভূতিগুলি অবসন্ন হয়ে পড়ছে, তখন সে সবের ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ে যারা তাদের আবিষ্কারের নোবেল স্বীকৃতি যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন