3I ATLAS

ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান? ‘অদ্ভুত অতিথি’-র দেখা মিলবে পরের মাসেই

সৌরজগতের যে সমতলে সব গ্রহ রয়েছে, সেই সমতল দিয়েই আসছে ধূমকেতুটি। যেন বহু দূরের তারা থেকে সে সব গ্রহের সঙ্গে দেখা করতে আসছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩৮
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার জন্ম যখন হয়েছিল, তখন আমাদের সৌরজগতের জন্ম হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, সে না কি ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান। এ দেশের বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, সে আসলে অন্য কোনও ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে। তার পরে ভবঘুরের মতো ঢুকে পড়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলে। তবে সে বড়ই অদ্ভূত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার চালচলন এমন, যেন দেখে মনে হয় অন্য কোনও সৌরমণ্ডল থেকে ঘুরতে এসেছে এই সৌরমণ্ডলে। একে একে সব গ্রহের কাছ দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে সূর্যের কাছে। তাকে ‘৩আই/অ্যাটলাস’ বলে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। কলকাতা এবং আশপাশের অঞ্চলের আকাশ থেকে আগামী ১০ অক্টোবর দেখা যাবে সেই ‘বিস্ময়কর’ বস্তুকে।

Advertisement

জুলাই মাসে প্রথম এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’-কে দেখতে পান মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। বৃহস্পতির পিছনে ধরা দেয় সে। তবে যতই দিন যাচ্ছে, ততই তাকে নিয়ে বিস্ময় বাড়ছে বিজ্ঞানীদের। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ প্রায় ৭০০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়। তার পরে সেই ছায়াপথ থেকে রওনা দেয় ধূমকেতুটি। যখন সে রওনা দেয়, তখন আমাদের সৌরজগৎ তৈরি হয়নি। আমাদের এই সৌরজগৎ ৪৬০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়। এখন সে ঘণ্টায় দু’ থেকে আড়াই লক্ষ কিলোমিটার গতিতে আসছে। জুলাই মাসে যখন একে আবিষ্কার করা হয়, তখন থেকেই বোঝায় যায় সে অদ্ভূত।

কেন অদ্ভূত?

Advertisement

এক, জুপিটার পৃথিবী থেকে যে দূরত্বে রয়েছেন, সেই দূরত্বে কোনও ধূমকেতুর লেজ দেখা যায় না। কিন্তু ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর লেজ দেখা গিয়েছে। তার লাগোয়া রয়েছে বড় বায়ুমণ্ডল বা অ্যাটমোস্ফিয়ার। দুই, সেই বায়ুমণ্ডলের স্পেকটোগ্রাফ নিয়ে দেখা গিয়েছে, লেজ থেকে জলের বদলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনও ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন দেখা যায়নি। তিন, সৌরজগতের যে সমতলে সব গ্রহ রয়েছে, সেই সমতল দিয়েই আসছে ধূমকেতুটি। যেন বহু দূরের তারা থেকে সে সব গ্রহের সঙ্গে দেখা করতে আসছে। প্রথমে বৃহস্পতি, তার পরে মঙ্গল, বুধ, শুক্রের পাশ দিয়ে সূর্যের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসবে সে। গ্রহগুলির এত কাছ দিয়ে সে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন চিন্তাভাবনা করে গতিপথ ঠিক করেছে ধূমকেতুটি।

ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান?

অনেকে মনে করছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ আসলে ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান। বিজ্ঞানীদের কেউ বলছেন, এর দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, কেউ বলছেন ৪০ কিলোমিটার। এই ধূমকেতু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বার হওয়ার পরে তার রং বদলাচ্ছে। সায়ানাইড বার হচ্ছে। সায়ানাইড বিষাক্ত গ্যাস। ধূমকেতুর লাগোয়া ৩০০ হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বায়ুমণ্ডল তৈরি হচ্ছে। সূর্য থেকে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ এসে তৈরি হয় ধূমকেতুর লেজ। এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর লেজ রয়েছে সূর্যের দিকেই, যা অন্য ধূমকেতুর উল্টো দিকে থাকে। সেই লেজে নিকেল পাওয়া গিয়েছে। নিকেল আয়রন ছাড়া দেখা যায় না। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, নিকেল তৈরি করতে হলে উন্নত মানের প্রযুক্তি দরকার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন অধ্যাপক মনে করছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ আসলে ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান। যদিও সন্দীপ মনে করেন, এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’ অন্য সৌরমণ্ডল থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে। তার পরে ভবঘুরের মতো ঢুকে পড়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলে। এর নেপথ্যে কারও বুদ্ধিমত্তা থাকলে সে পৃথিবীর আরও কাছ দিয়ে যেতে চাইত। এখন সে পৃথিবীর ২৮ কোটি কিলোমিটারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মঙ্গলের আড়াই কোটি কিলোমিটার দূর দিয়ে যাচ্ছে সে।

এর আগে ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে ২টি ইন্টারস্টেলার এসে ঘুরে গিয়েছে পৃথিবীর কাছ দিয়ে। তবে এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’ গতিপথ গ্রহের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। কলকাতার আকাশ থেকে তাকে ১০ অক্টোবর দেখা যাবে। মঙ্গল, বুধ এবং ‘৩আই/অ্যাটলাস’ এক সঙ্গে দেখা যাবে সূর্যাস্তের পরে। তবে চাঁদ ওঠার আগে দেখে ফেলতে হবে তাকে। ১২ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে হবে। সন্দীপ জানালেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ ধূমকেতুর মতো আচরণ করছে। তবে তা সাধারণ নয়। বয়স এই সৌরজগতের দ্বিগুণ। তার গঠনও অন্য ধূমকেতুর থেকে আলাদা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement