চন্দ্রকান্ত, রৌশনদের ‘ছোঁয়া’য় চাঁদে পা

গত ২২ জুলাই চন্দ্রযান-২ পাড়ি  দেয় মহাকাশে। সাতচল্লিশ দিন পরে চাঁদের মাটিতে তার নামার কথা। এই দেড় মাসে হুগলির গুড়াপের কুমারবাড়িতে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে অপেক্ষার পারদ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৭:১৩
Share:

চন্দ্রকান্ত কুমার ও রৌশন আলি

রাতে হয়তো দু’চোখের পাতা এক হবে না ওঁদের কারও। ‘বিক্রম’ ঠিকঠাক চাঁদের মাটি ছোঁবে, এই আকাঙ্ক্ষা ও প্রার্থনায় কেটেছে শুক্রবার গোটা দিন। তবে ভারতের চন্দ্রাভিযান নিয়ে ওঁদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হয়তো আমজনতার চেয়ে কিছুটা বেশি। ভারতের চাঁদের মাটি ছোঁয়ার অভিযানে এ রাজ্যের বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদদের আপনজন ওঁরা।

Advertisement

গত ২২ জুলাই চন্দ্রযান-২ পাড়ি দেয় মহাকাশে। সাতচল্লিশ দিন পরে চাঁদের মাটিতে তার নামার কথা। এই দেড় মাসে হুগলির গুড়াপের কুমারবাড়িতে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে অপেক্ষার পারদ। গৃহকর্তা মধুসূদন কুমার এবং তাঁর স্ত্রী অসীমাদেবীর বড় ছেলে চন্দ্রকান্ত তৈরি করেছেন চন্দ্রযানের ‘অ্যান্টেনা’।

চন্দ্রযানের অভিযানের সাফল্য এবং ছেলের মঙ্গলকামনায় এ দিন সকাল থেকে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন অসীমাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘ঈশ্বরের কৃপায় ছেলে সফল হবেই। মহাকাশযানও চাঁদের মাটি থেকে যাবতীয় তথ্য পাঠাতে পারবে, এ আমার বিশ্বাস।’’ দুপুর থেকে টিভির সামনে বসে মধুসূদনবাবু। গোটা দেশ যে দিকে তাকিয়ে, সে অভিযানের অন্যতম অংশ তাঁর ছেলে। এ নিয়ে বলতে গিয়ে দৃশ্যতই ঝলমল করে চোখমুখ। বলেন, ‘‘বলে বোঝাতে পারব না কতটা আনন্দ হচ্ছে।’’

Advertisement

চন্দ্রকান্তের ভাই শশীকান্তও ইসরো-য় গবেষণা করেন। মধুসূদনবাবু জানান, ছোটবেলায় বড় ছেলের নাম রেখেছিলেন সূর্যকান্ত। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সময় নাম বদলে চন্দ্রকান্ত করেন। বড় ছেলের সঙ্গে মিলিয়ে রাখেন ছোট ছেলের নাম।

বৃদ্ধ বলেন, ‘‘নামে চাঁদ থাক‌লেও ভাবিনি, দুই ছেলেই মহাকাশ গবেষণা করবে। ‘ল্যান্ডার’ চাঁদে নামার পরে ‘রোভার’ ঠিকঠাক কাজ করুক, এই প্রার্থনাই করি।’’

চন্দ্রযান ২-এর রকেটে তরল জ্বালানির ট্যাঙ্ক তৈরির দলে ছিলেন পূর্ব বধর্মানের কাটোয়ার যুবক সৌরেশ পাল। তাঁর মা সবিতা পাল এ দিন বলেন, ‘‘ছেলে ইতিহাসের অংশীদার হবে ভেবেই গর্ব হচ্ছে। রাতে জেগে টিভিতে দেখব সবটা।’’

টিভির পর্দায় চোখ রেখে রাত জাগবে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের রৌশন আলির পরিবারও। চন্দ্রযানের ‘মেকানিক্যাল’ বিভাগে কর্মরত রৌশন। তাঁর বাবা মইসুদ্দিন আহমেদ, মা আনেশা বিবির কথায়, ‘‘চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযান-২ সফল ভাবে নামলে তার কৃতিত্ব রৌশনেরও। এ কি কম কথা!’’

একই রকম উৎসাহের শরিক মালদহের ইংরেজবাজার মহাজনটোলার গৌতম মানির মা গোপা মানি, ইংরেজবাজারেরই ড্রিমল্যান্ড কলোনির সুহাস মুখোপাধ্যায়ের মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও দিদি মৈত্রেয়ী এবং মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার তুষারকান্তি দাসের পরিবার। গোপাদেবীর কথায়, ‘‘যে দিন চন্দ্রযান উৎক্ষেপণ হয়, ছেলে সেই মহৎ কর্মকাণ্ডের অংশীদার হতে পারায় মন ভরে উঠেছিল। আজ যখন বিক্রম চাঁদে নামবে, তখনও একই ধরনের অনুভূতি হচ্ছে।’’ বেলডাঙার বড়ুয়া কলোনিতে ইসরো-র বিজ্ঞানী তুষারকান্তির আত্মীয়েরাও দিনটা কাটিয়েছেন উত্তেজনায়। চাঁদের মাটি ছোঁবে চন্দ্রযান-২। বাড়ির ছোট ছেলের ‘ছোঁয়া’ রয়েছে যে তাতে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন