রাস্তা, স্তম্ভ, সমুদ্রের তলায় প্রাচীন নগরী বানিয়েছে ব্যাকটেরিয়া!

রাস্তাঘাট, সড়ক তা হলে বানাতে পারে ব্যাকটেরিয়াও? যেমন ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট আমরা মাটি খুঁড়ে পাওয়া প্রাচীন নগরীতে দেখেছি! উঁচু উঁচু স্তম্ভ (পিলার)। খিলান। খাঁজ-কাটা।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ১১:০০
Share:

লক্ষ লক্ষ বছর আগে ব্যাকটেরিয়ার বানানো সেই প্রাচীন ‘নগরী’! গ্রিসে, সমুদ্রের তলায়।

রাস্তাঘাট, সড়ক তা হলে বানাতে পারে ব্যাকটেরিয়াও?

Advertisement

যেমন ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট আমরা মাটি খুঁড়ে পাওয়া প্রাচীন নগরীতে দেখেছি!

উঁচু উঁচু স্তম্ভ (পিলার)। খিলান। খাঁজ-কাটা।থাকে থাকে সাজানো একটা কাঠামো (স্ট্রাকচার)।

Advertisement

ওপর থেকে দেখলে মনে হতেই পারে, তলায় লুকিয়ে থাকা কোনও সুপ্রাচীন নগরীর ধ্বংসস্তুপের শিখর! কোনও সুপ্রাচীন সভ্যতার। যেমন, গভীর অতলান্ত সমুদ্রের মাঝে হঠাৎই দেখা যায় হিমশৈলের চূড়া (‘টিপ অফ দ্য আইসবার্জ’)! আর সেই ভাবনাটা মাথায় আসতেই পারে, কারণ যেখানে ওই ‘সুপ্রাচীন নগরী’র হদিশ মিলেছে, তা সুপ্রাচীন নাগরিক সভ্যতার দেশ গ্রিসেরই একটি দ্বীপ- ‘ঝাকিন্থস্‌ আইল্যান্ড’। অতলান্ত সমুদ্রের ২০ ফুট গভীরতায়।

আরও পড়ুন- আমরা ভুল জানি কিছু, ভুল বলি কিছু কিছু কথা, জানাল বিজ্ঞান

প্রত্নতত্ত্ববিদদের এই সাম্প্রতিক আবিষ্কারের খবরটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘মেরিন অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম জিওলজি’-তে। একেবারে হালে, গত বৃহস্পতিবার। আরও ঠিকঠাক ভাবে বলতে হলে, সমুদ্রের তলায় ওই ‘প্রাচীন কাঠামো’টির আবিষ্কার হয়েছিল বেশ কয়েক বছর আগেই। আর তখন থেকেই ভাবা হচ্ছিল, সমুদ্রের তলায় লুকিয়ে থাকা ওই ‘প্রাচীন কাঠামো’টি মানুষেরই বানানো। হয়তো-বা তার তলায় লুকিয়ে রয়েছে কোনও ‘সুপ্রাচীন নগরী’র ধ্বংসাবশেষ! কিন্তু তা নয়। হালের গবেষণায় জানা গিয়েছে, সমুদ্রের অতটা গভীরে ওই সুপ্রাচীন কাঠামোটি বানিয়েছিল ব্যাকটেরিয়ারা। কোটি কোটি, লক্ষ কোটি ব্যাকটেরিয়া। অত বড় কাঠামো, অত সুন্দর, নিখুঁত কাঠামো বানানোটা তো আর সামান্য কয়েক ‘জনে’র কাজ হতে পারে না! ওই সুপ্রাচীন কাঠামোর ‘কারিগর’রা যে আদতে ব্যাকটেরিয়া, হালের গবেষণায় সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। আর সেই গবেষণাপত্রটিই ছাপা হয়েছে ‘মেরিন অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম জিওলজি’-তে।


থরে থরে সাজানো ডলোমাইট। সমুদ্রের তলায়। গ্রিসের ঝাকিন্থস্‌ আইল্যান্ডে।

তা যদি হতই কোনও প্রাচীন সভ্যতা, যদি তা হতই-বা কোনও প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ, তা হলে তো সেখানে মিলত প্রাচীন মুদ্রা, থালা, বাসন। এক সময়ের জীবনের টুকরো-টাকরা চিহ্ন। যাপনের প্রামাণ্য নিদর্শন। তারই খোঁজে প্রত্নতত্ববিদরা ডুবুরির মতো নেমেছিলেন অতলান্ত সমুদ্রের তলায়। কিন্তু তেমন কিছুই তাঁরা খুঁজে পাননি। তা হলে তো সুপ্রাচীন মানবসভ্যতার নিদর্শন হতে পারে না তা!

তা হলে সেটা কী জিনিস? কারা বানাল সেটা?

সেই প্রশ্নের জবাবটা ঢুঁড়তে গিয়েই প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানতে পেরেছেন, একেবারে ধাতব পদার্থ দিয়েই ওই সুপ্রাচীন ‘নগরী’র ‘রাস্তাঘাট, সড়ক’ আর ‘স্তম্ভ, খিলান’গুলো বানিয়েছিল ব্যাকটেরিয়ারা। আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহের সেটা ‘পিলোসিন’ যুগ। আজ থেকে ৫৩ লক্ষ বছর আগেকার কথা। যে-‘যুগ’টা ছিল আজ থেকে ২৬ লক্ষ বছর আগেও।

কী ধরনের ধাতব পদার্থ দিয়ে অত দিন আগে ওই সুপ্রাচীন ‘নগরী’র ‘পথঘাট’ আর ‘স্তম্ভ, খিলান’গুলো বানিয়েছিল ব্যাকটেরিয়া?


ব্যাকটেরিয়ার বানানো ‘নগরী’র ‘স্তম্ভ’! সমুদ্রের তলায়।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, সেই ধাতব পদার্থটা হল- ডলোমাইট।

কী ভাবে তৈরি হল সেই ডলোমাইট?

সমুদ্রের তলদেশ থেকে বেরিয়ে আসা মিথেন গ্যাস ‘খেয়ে-পরে’ই বেঁচে থাকত ওই ব্যাকটেরিয়ারা। আর তাদের শরীরে থাকা ক্যালসিয়াম (যা, আমাদের শরীরেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে) ওই মিথেন গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়া করেই তৈরি করে ধাতব পদার্থ ডলোমাইট। যা একেবারেই আধুনিক সিমেন্টের মতো একটা পদার্থ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement