ভয়ঙ্কর জিকা তছনছ করে দিচ্ছে শিশু-মস্তিষ্কের নিউরন, জানাল গবেষণা

শিশুদের মাথাতেও এ বার জোর হামলা চালাচ্ছে জিকা ভাইরাস।জন্মের আগে-পরে তাদের মস্তিষ্কের গড়ে ও বে়ড়ে ওঠার সময়েই সেখানকার কোষ-কলাগুলোকে একেবারে ভেঙেচুরে দিচ্ছে। তছনছ করে দিচ্ছে শিশুদের মস্তিষ্কে সদ্য গজিয়ে ওঠা নিউরনগুলিকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ১৪:২৭
Share:

মাইক্রোসেফ্যালিতে আক্রান্ত শিশু।

ভ্রুণ বা সদ্যোজাত শিশুদের বড়ই পছন্দ জিকা ভাইরাসের।

Advertisement

শিশুদের মাথাতেও এ বার জোর হামলা চালাচ্ছে জিকা ভাইরাস।

জন্মের আগে-পরে তাদের মস্তিষ্কের গড়ে ও বে়ড়ে ওঠার সময়েই সেখানকার কোষ-কলাগুলোকে একেবারে ভেঙেচুরে দিচ্ছে। তছনছ করে দিচ্ছে শিশুদের মস্তিষ্কে সদ্য গজিয়ে ওঠা নিউরনগুলিকে। তার ফলে শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক বিকাশ-বৃদ্ধি হচ্ছে না। জন্মের পর পরই শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে জটিল স্নায়ুরোগে। তাদের উত্তরোত্তর বিকলাঙ্গ বা মানসিক প্রতিবন্ধীও করে তুলছে জিকা ভাইরাস। বিকৃত মাথা আর অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়েই বেড়ে উঠছে শিশু। জিকা ভাইরাসের সৌজন্যে!

Advertisement

একেবারে হালের একটি গবেষণার ফলাফল এ কথা জানিয়েছে। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ সদ্য প্রকাশিত ওই গবেষণা জানিয়েছে, গত এক/দেড় বছরে ব্রাজিলে জিকা ভাইরাসের দৌলতে কম করে হাজার পাঁচেক শিশু জন্মেছে, যাদের মাথা হয় বিকৃত বা তারা অপরিণত মস্তিষ্কের শিকার। যে ধরনের মস্তিষ্ককে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে,‘মাইক্রোসেফ্যালি’।


অণুবীক্ষণের তলায় জিকা ভাইরাস।

মার্কিন মুলুকের জন হপকিন্স, ফ্লোরিডা স্টেট ও এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা শিশুদের মস্তিষ্কের কলাগুলির ওপর একটি বড় ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন মাস ছয়েক আগে। তাঁরা শিশু-মস্তিষ্কের কলাগুলির মধ্যে প্রায় ঘণ্টাদু’য়েক ধরে জিকা ভাইরাসগুলিকে ঢুকিয়ে গিয়েছিলেন, কৃত্রিম উপায়ে। তাতে কলাগুলির কী হাল হল, তিন দিন পর তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন গবেষকরা। তাতে দেখা গিয়েছে, জিকা ভাইরাস শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ-কলাগুলির ৯০ শতাংশ নিউরনকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশ নিউরনকে পুরোপুরি নিকেশ করে দিচ্ছে। আর দুই-তৃতীয়াংশ নিউরনের বৃদ্ধি-বিকাশের গতিকে ভীষণ ভাবেই থমকে দিচ্ছে। ঘটনা হল, গবেষকরা মূলত, ওই পরীক্ষাটি চালিয়েছিলেন সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্কের কোষ-কলাগুলির ওপর। তাঁদের বক্তব্য, জিকা ভাইরাসের ছোবলে আরও বেশি ক্ষতি হয় তখনই, যখন শিশুর মস্তিষ্ক সবে গড়ে উঠছে আর মাতৃগর্ভে তা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে।

আরও পড়ুন- কৃত্রিম শুক্রাণুও মেড ইন চায়না!

গবেষকরা এ-ও দেখেছেন, জিকা ভাইরাসের ‘প্রাইম টার্গেট এরিয়া’ হল শিশুদের মাথার কোষ, কলা, নিউরন আর স্নায়ুতন্ত্র। তার পরেই তারা হামলা চালায় কিডনির কোষ, কলা, ভ্রুণের স্টেম সেল আর শিশু আরও একটি বড় হয়ে উঠলে, তাদের মস্তিষ্কের কোষ ও কলাগুলিতে। তাদের স্নায়ুতন্ত্রেও। তবে তা তুলনায় অনেকটাই কম। সাকুল্যে ১০ শতাংশ।

লন্ডনের ‘এমআরসি ল্যাবরেটরি অফ মলিকিউলার বায়োলজি’র নিউরো-সায়েন্টিস্ট ম্যাডেলিন ল্যাঙ্কাস্টার বলেছেন, ‘‘এই গবেষণার ফলাফলটিকে বলা যেতেই পারে যুগান্তকারী। কারণ, এই ফলাফল শিশুদের বিকৃত ও অপরিণত মস্তিষ্কের জন্য জিকা ভাইরাস কতটা দায়ী, তার ওপর একটা মনে রাখার মতো আলোকপাত করল।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) জিকা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির প্রধান ব্রুস আইলওয়ার্ড বলেছেন, ‘‘এই সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল যে শুধুই মাইক্রোসেফ্যালির ওপর আলো ফেলল, তাই নয়, আলোকপাত করল ‘গালিয়ঁ-বারঁ সিনড্রোমে’র ওপরেও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন