ইস্তাহারই সার, ভোটে কল্কে পায় না পরিবেশ

পরিবেশনীতি নিয়ে এখনই সচেতন না হলে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে সম্প্রতি সতর্কতা জারি করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি)। পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতির জন্য তারা কার্যত রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছে। এ দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, এখানকার ছবিটাও গোটা দুনিয়ার নিরিখে পৃথক কিছু নয়। নির্বাচনের আগে ইস্তাহারে পরিবেশ নিয়ে নানাবিধ প্রতিশ্রুতি থাকলেও ক্ষমতায় এলে আর কেউ কথা রাখে না।

Advertisement

সাবেরী প্রামাণিক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১১
Share:

পরিবেশনীতি নিয়ে এখনই সচেতন না হলে গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে সম্প্রতি সতর্কতা জারি করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি)। পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতির জন্য তারা কার্যত রাজনৈতিক দলগুলির সদিচ্ছার অভাবকেই দায়ী করেছে। এ দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, এখানকার ছবিটাও গোটা দুনিয়ার নিরিখে পৃথক কিছু নয়। নির্বাচনের আগে ইস্তাহারে পরিবেশ নিয়ে নানাবিধ প্রতিশ্রুতি থাকলেও ক্ষমতায় এলে আর কেউ কথা রাখে না।

Advertisement

কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন এখন অনেক বেশি হারে হচ্ছে। বিকল্প শক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন রোধই এই বিপদ মোকাবিলার একমাত্রা রাস্তা। বিকল্প শক্তি বলতে মূলত সৌরশক্তি, জৈব গ্যাস, জৈব ভর (বায়ো মাস) ও ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ বোঝানো হয়। কিন্তু এখানে এখনও কয়লা পুড়িয়ে চিরাচরিত পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, মন্ত্রীদের কনভয়ে থাকে ২০-২৫টি গাড়ি। ফলে দূষণ আর উষ্ণতা বাড়তেই থাকে। এ বারও সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল সকলেরই নির্বাচনী ইস্তাহারের শেষের দিকে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে আছে পরিবেশ সম্বন্ধে হরেক প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তার কতটা রূপায়িত হবে, সেই প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবিদরা।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

Advertisement

কেন এই প্রশ্ন? জাতীয় পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট সৌরশক্তি উৎপাদন করার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সে জায়গায় দু’বছরে মাত্র দু’হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। বাকি ৮ বছরে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক জন জানাচ্ছেন, ২০১২-২২ এর মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বিকল্প শক্তি থেকে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। সবে ৭ শতাংশে পৌঁছনো গিয়েছে। ওই বিশেষজ্ঞের কথায়, বিকল্প শক্তির ব্যবহার ১% বাড়াতে দু’বছর সময় লাগে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো সম্ভব নয়। জার্মানিতে বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের ২৮% বিকল্প শক্তি থেকে আসে বলে জানান তিনি। আইপিসিসি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাপবিদ্যুতের মতো চিরাচরিত শক্তি প্রকল্পে ২০ শতাংশ বিনিয়োগ কমিয়ে বিকল্প শক্তি উৎপাদনে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করা দরকার। এ ব্যাপারে তারাও যে সম্যক অবহিত এবং উদ্যোগী, তা বোঝাতে ইস্তাহারে পরিবেশবান্ধব নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি আশার বাণীও শোনাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। যেমন, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহার থেকে সৌরশক্তি এবং অচিরাচরিত শক্তি উৎপাদনে জোর দেওয়া হবে।” বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলছেন, “পরিবেশ রক্ষা করা না গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। তাই বিকল্প শক্তি, জল সংরক্ষণে জোর দেওয়া হচ্ছে।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী দাবি করছেন, বিকল্প শক্তির জন্য তাঁদের বাজেট বরাদ্দ যথেষ্ট। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “জাতীয় স্তরে বিষয়টিতে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র, সংসদে বিতর্কের সময় নানা সময়ে বিষয়টি নিয়ে আমি বক্তব্য জানিয়েছি।”

কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতিতে কাজের কাজ হবে কি? বিশিষ্ট সৌরবিজ্ঞানী শান্তিপদ গণচৌধুরী বলেন, “ইস্তাহারের ঘোষণাগুলি তো ভাল। কিন্তু এঁরা কেউ প্রতিশ্রুতি রাখেন না।” যেমন, সুন্দরবনে দেশের প্রথম সামুদ্রিক শক্তি প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও হয়ে ওঠেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওশানোগ্রাফির প্রধান সুগত হাজরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বড় আবাসন, শপিং মল ইত্যাদি তৈরির সময়ে সৌরশক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। তিনি বলেন, “আশ্বাস, ঘোষণা, প্রতিশ্রুতির সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এখন ময়দানে নেমে কাজ করতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন