শনিবার ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায় দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
খেলার সময় পা ভেঙে জখম হয়েছে ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানার হায়না শাবক ‘লালি’। প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শে উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য রবিবার লালিকে পাঠানো হল আলিপুর চিড়িয়াখানায়। এ দিন ভোরে ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের গাড়িতে করে লালিকে কলকাতায় পাঠানো হয়। চিড়িয়াখানার কর্মী সাহেবরাম মুর্মু ও বিমল মুর্মুর কোলে চেপে রওনা দেয় লালি। দুপুরে আলিপুর চিড়িয়াখানায় লালির পায়ের প্লাস্টার করা হয়। আপাতত সেখানেই পর্যবেক্ষণে থাকবে হায়না শাবকটি।
ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, শনিবার সকালে চিড়িয়াখানার শুশ্রূষা ঘরে বল নিয়ে হুটোপাটি করার সময় আচমকা পা পিছলে পড়ে যায় লালি। তারপরই প্রবল কাঁপতে থাকে সে। ঝাড়গ্রামের সরকারি প্রাণী চিকিৎসক সজলকুমার দত্ত জানান, এক্স রে করে দেখা যায়, লালির সামনের বাঁ দিকের পায়ের হিউমেরাস হাড় ভেঙেছে। পিছনের ডান দিকের পায়ের ফিমার হাড়টিও ভেঙেছে। আরও ভাল চিকিৎসার জন্য লালিকে কলকাতায় রেফার করা হয়। রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার অনুমোদন নিয়ে লালিকে আলিপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। শান বাঁধানো মেঝেয় পিছলে পড়ে কীভাবে পায়ের হাড় ভাঙল লালির? প্রাণী চিকিৎসক সজলবাবুর ব্যাখ্য, “জন্মের পরে এক ফোঁটা মায়ের দুধ পায়নি সাড়ে তিন মাসের শাবকটি। জন্মের পরে মাস খানেক জলে মেশানো ছাগলের দুধে খিদে মেটাতে হয়েছে। তারপর মুরগির মাংস দেওয়া হত। লালির হৃষ্টপুষ্ট চেহারা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, যে তার শরীরের হাড় শক্তপোক্ত হয়নি। মায়ের দুধের অভাবে শাবকটির শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। নিয়মিত ক্যালসিয়াম বড়ি খাওয়ানো হলেও সেটা কার্যকরী হয়নি। তাই পড়ে গিয়ে লালির দু’টি পা জখম হয়েছে।”
গত ৬ জুন চিড়িয়াখানার একটি স্ত্রী হায়না পাঁচটি শাবক প্রসব করেছিল। শাবক খোকো মা হায়নাটি প্রসবের পরেই একটি শাবককে খেয়ে সাবাড় করে দেয়। এ জন্য বাকি চারটি শাবককে আলাদা করে চিড়িয়াখানার শুশ্রূষা ঘরে রাখা হয়। কিন্তু গত জুনে দু’টি শাবকের মৃত্যু হয়। বাকি দু’টি হায়না ছানাদের সর্বক্ষণ প্রাণী চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তাদের নাম দেওয়া হয় ‘লালি’ ও ‘পিয়ালি’। জুলাইয়ের গোড়ায় পিয়ালির মৃত্যুর পরে লালিকে সুস্থ রাখার জন্য দিনরাত এক করে দেন প্রাণী চিকিৎসক সজলবাবু ও চিড়িয়াখানার কর্মীরা। শনিবার লালির দু’টি পা ভেঙে যাওয়ার পরে রীতিমতো মুষড়ে পড়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সকলের আর্তি, সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক লালি। ঝাড়গ্রামের ডিএফও ধর্মদেও রাই বলেন, “প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হায়না শাবকটিকে আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে।”