ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণী-মৃত্যু রুখতে ক্যামেরা

ট্রেনের ধাক্কায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঠেকাতে এবার ডুয়ার্সের জঙ্গল চিরে যাওয়া রেললাইনের ধারে ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালাতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ ইলেকট্রনিক আই’। চটজলদি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার থেকে এনজেপি পর্যন্ত রেললাইন লাগোয়া চত্বরে বন্যপ্রাণীর গতিবিধি জানতে বিশেষ ক্যামেরা ও কম্পিউটারের সাহায্যে ওই নজরদারি চালানো হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬
Share:

ট্রেনের ধাক্কায় বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঠেকাতে এবার ডুয়ার্সের জঙ্গল চিরে যাওয়া রেললাইনের ধারে ক্যামেরা বসিয়ে নজরদারি চালাতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ ইলেকট্রনিক আই’। চটজলদি উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার থেকে এনজেপি পর্যন্ত রেললাইন লাগোয়া চত্বরে বন্যপ্রাণীর গতিবিধি জানতে বিশেষ ক্যামেরা ও কম্পিউটারের সাহায্যে ওই নজরদারি চালানো হবে। পরীক্ষামূলকভাবে শুরুতে ওই রুটের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ৩০ কিলোমিটার বনাঞ্চল এলাকায় অন্তত ৫০টি ক্যামেরা বসানো হবে। গত ১৪ নভেম্বর কলকাতায় অরণ্য ভবনে অনুষ্ঠিত ‘বক্সা টাইগার কনজারভেশন ফাউন্ডেশন ট্রাস্টে’র বৈঠকে ওই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “ট্রেনের ধাক্কায় বন্যপ্রাণী, মূলত হাতির মৃত্যু ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা আগে নেওয়া হয়েছে। এবার প্রযুক্তির সুবিধে নিয়ে অপেক্ষাকৃত দ্রুত রেললাইনের কাছাকাছি বন্যপ্রাণীর গতিবিধি নজরে রাখতে ‘ইলেকট্রনিক আই’ প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

বন দফতর সূত্রের খবর, বক্সায় প্রকল্পটির সুফল পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে জলদাপাড়া, ডায়না, চাপরামারি, গরুমারা, মংপং থেকে মহানন্দা বনাঞ্চল চিরে যাওয়া রেললাইনের দু’ধারে ‘নাইট ভিশনে’র সুবিধেযুক্ত ওই ক্যামেরা বসানো হবে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) উজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, “ওই রেলপথের প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রকল্প চালুর আলোচনা হয়েছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের জঙ্গল চিরে আলিপুরদুয়ার-এনজেপি পর্যন্ত প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন রয়েছে। ২০০৪ সালে মিটার গেজ ওই রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়। ফলে ওই লাইনে অসমগামী দূরপাল্লার ট্রেনের পাশাপাশি মালবাহী ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে। গত দশ বছরে ওই রুটে ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ৬০টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। সমস্যা মেটাতে নানা পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়। তার মধ্যে রয়েছে গোটা রেললাইন এলাকায় উড়ালপুল তৈরি করা, জঙ্গলে আন্ডারপাস তৈরি করা, চালকের দেখার প্রতিবন্ধকতা এড়াতে গাছ কাটার মত নানা বিষয়। এমনকি ‘ওয়াচ টাওয়ার’ তৈরি, লাইন লাগোয়া এলাকায় নজরদারির জন্য বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত বনকর্মীদের কাজে লাগানো থেকে রেলের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতেও উদ্যোগী হয় দফতর। ওই রুটে ট্রেনের ইঞ্জিনে পর্যাপ্ত আলো, গতির নিয়ন্ত্রণ থেকে ট্রেনের সংখ্যা কমানোর বিষয়গুলিও দুর্ঘটনার পর বহুবার বনকর্তারা ঘোষণা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করেও লাভ হয়নি। তাই গোটা বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হচ্ছে বলে দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement

রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা বক্সা ফাউন্ডেশনের ওই কমিটির চেয়ারম্যান বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “ক্যামেরার চোখ ফাঁকি দেওয়া মুশকিল। তাই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করেছি। কমিটির তহবিল থেকে বক্সার জঙ্গল চত্বরের রেললাইনে ক্যামেরা বসানোর বরাদ্দ দেওয়া হবে। কত টাকা খরচ হবে আধিকারিকরা খুব শীঘ্রই সে ব্যাপারেও হিসেব চূড়ান্ত করবেন।”

যদিও বন দফতরের কর্তাদের একাংশ তো বটেই প্রাক্তন বনমন্ত্রী থেকে পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই ওই উদ্যোগে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী যোগেশ বর্মন সাফ বলেছেন, “শুধু ক্যামেরা বসিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। ওই রুটে ট্রেন সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি আগে ফালাকাটা হয়ে ডবল লাইন চালু করা দরকার। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “ঘন কুয়াশা, তুমুল বৃষ্টির সময় ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ার আশঙ্কা যথেষ্ট। ফলে এতে বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ থাকবেই। আগে ওই রুটে রাতের মালবাহী ট্রেন চালানো বন্ধ করা দরকার।” ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “সবসময় ক্যামেরার লেন্স ধরে হাতি চলাচল করবে, হতে পারেনা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন