দলমার দামালদের লোকালয়ে দাপিয়ে বেড়ানো রুখতে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করে রাখার কথা ভাবছে বন দফতর।
সম্প্রতি বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে গিয়ে বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন স্থানীয় বনকর্তাদের এমনই নির্দেশ দিয়ে এসেছেন। তাঁর পরামর্শ, দলমা পাহাড় থেকে নেমে আসা মরসুমি ওই হস্তিকুলকে সরিয়ে দেওয়া হোক আশপাশের বিভিন্ন সংরক্ষিত জঙ্গলে। তিনি বলেন, “বাড়িঘর, ফসলহানির সঙ্গে প্রাণহানিও ঘটছে। আমি বনাধিকারিকদের বলেছি যতটা সম্ভব হাতিদের বনের মধ্যেই আটকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সরিয়ে দিতে হবে ময়ূরঝর্ণা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে।”
কিন্তু প্রশ্ন, ময়ূরঝর্ণা সংরক্ষিত বনাঞ্চলটি কোথায়?
এগারো বছর আগে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের পরামর্শে একান্তভাবেই হাতিদের জন্য ওই সংরক্ষিত বনাঞ্চল গড়ে তোলার রূপরেখা তৈরি করেছিল সরকার। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি বনাঞ্চল নিয়ে ওই হস্তি-প্রকল্প গড়ে তোলার কথা। সেই মতো সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রাথমিক কাজও হয়েছিল। কিন্তু তারপরে তা প্রস্তাবেই থমতে থেকেছে। রাপায়ণ আর হয়নি বলে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রকের অভিযোগ। ওই ময়ূরজর্ণা প্রকল্পের নির্দিষ্ট কোনও কর্তাও নেই।
ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে নেমে আসা ওই হাতিদের ঠেকাতে উত্তরের মতো দক্ষিণেও কুনকি হাতি আনার কথা বলেছেন মন্ত্রী। তবে তা-ও নতুন নয়। কারণ বছর আটেক আগে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এলাকায় কুনকি হাতি আনা হলেও পরে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল উত্তববঙ্গেই। কেন? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
আপাতত, হাতি তাড়াতে স্থানীয় ‘হুলা পার্টি’গুলিকে কাজে লাগানো ছাড়াও বাজি, পটকা ফাটিয়ে বসত এলাকার বাইরে রাখার ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলেছেন বিনয়বাবু। কিন্তু বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেজারি আইনের ফাঁদে পড়ে বন দফতরের টাকা খরচ করা এখন নিয়মের ফাঁসে খাবি খাচ্ছে। বহু জায়গায় তাই পটকা নিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার যাচ্ছে না না সময় মতো।
এ দিকে ওই তিন জেলায় দলমার হাতিদের দাপট ক্রমেই বাড়ছে। গত কয়েক বছরে ওই তিন জেলায় অন্তত ৪২ জন গ্রামবাসী হাতি-দৌরাত্ম্যের শিকার হয়েছেন। মারা গিয়েছেন হন দফতরেরও কয়েক জন কর্মী। বিনয়বাবু বলেন, “ওড়িশা সীমানার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুতের তার লাগানো বেড়া দেওয়া হয়েছে। ঝাড়খন্ডের জঙ্গল ও লাগোয়া এলাকায় নানা কারখানা তৈরি ও খনিজ উত্তোলনের প্রবণতায় জঙ্গল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের জঙ্গলে নেমে আসছে ওই হাতিরা। বিষয়টি কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকে জানানো হয়েছে।”