বরযাত্রীদের কাঁঠাল সাবড়ে দিল হাতির পাল

বড় সাধ করে কাঁঠালগুলো কিনেছিলেন। মেয়ের বিয়ে বলে কথা! পাকা কাঁঠালের গন্ধে ঘর ম-ম করছে। অসংখ্য মাছি ভনভন করছে। এই অবধি সব ঠিক ছিল। মাছিতে আবার কে ডরায়! কিন্তু, শনিবার মাঝরাতে যা ঘটল, তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না বিষ্ণুপুর থানার পাতলাপুরের গজানন বাউরি।

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

বড় সাধ করে কাঁঠালগুলো কিনেছিলেন। মেয়ের বিয়ে বলে কথা!

Advertisement

পাকা কাঁঠালের গন্ধে ঘর ম-ম করছে। অসংখ্য মাছি ভনভন করছে। এই অবধি সব ঠিক ছিল। মাছিতে আবার কে ডরায়! কিন্তু, শনিবার মাঝরাতে যা ঘটল, তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না বিষ্ণুপুর থানার পাতলাপুরের গজানন বাউরি। দাঁত দিয়ে তাঁর বাড়ির মাটির দেওয়াল ফুঁড়ে ছ’-ছ’টা পাকা কাঁঠাল যখন হাতির পাল সাবড়ে চলে গেল, তখন ভয়ে দাঁতে দাঁত লাগারই জোগাড় বাড়ির লোকেদের!

বাঁকুড়ার এই তল্লাটে হাতির হানা নতুন নয়। আবার এই অঞ্চলেই জলখাবারে বরযাত্রীদের মরসুমের ফল খাওয়ানোর রেওয়াজ আছে। কিন্তু আম, আনারসের যা দাম! বরযাত্রীদের ফলাহার করানোর সাধে শুক্রবার তাই গজানন আশপাশের গ্রাম ঘুরে বহু কষ্টে ছ’টি পাকা কাঁঠাল জোগাড় করে এনেছিলেন। আজ, সোমবারই বড় মেয়ে কাকলির বিয়ে। ঘরের এক কোণে কাঁঠালগুলো রাখা ছিল।

Advertisement

বড় মেয়েকে নিয়ে গজানন ও তাঁর স্ত্রী সেই ঘরেই শনিবার রাতে শুতে যান। গভীর রাতে হঠাৎ ধুপধাপ শব্দ। দেওয়ালের মাটির চাঙড় খসে পড়ার আওয়াজে ঘুম ভেঙে দেখেন, ঘর ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে দাঁতাল। স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে দৌড়ে পাশের ঘরে যান গজানন। কিছু পরে বুকে বল এনে হ্যারিকেনের আলোয় তাঁরা উঁকি মেরে দেখেন, দেওয়াল ভেঙে শুঁড় বাড়িয়ে ছ’টি কাঁঠালই টেনে নিয়ে গিয়েছে হাতির পাল। ওই আওয়াজে ঘুম ছুটেছিল পড়শিদেরও। তাঁরা দেখেন, ১২টি হাতি গজাননের বাড়ি ঘিরে রেখেছে। ভয়ে তাঁরা হইচই শুরু করে দেন। অনেকে বাড়ির ছাদে উঠে হাতিদের দিকে টর্চের আলো ফেলেন। চেঁচামেচিতে বিরক্ত হাতির পাল আদিবাসী পাড়ার দিকে চলে যায়। রাধানগরের জঙ্গলে ঘাঁটি গাড়ার আগে ওই পাড়ায় দু’টি কাঁচাবাড়ির দেওয়ালও ভেঙে দিয়ে যায়। দেওয়াল চাপা পড়ে সামান্য জখম হন নন্দলাল টুডু নামের এক বাসিন্দা।

যাঁর বিয়ের কাঁঠাল সাবাড় করল দাঁতালের দল, রবিবার পাতলাপুরে গিয়ে দেখা গেল, সেই কাকলি জলে গোবর গুলে বাড়ির উঠোন পরিষ্কার করছেন। বৃষ্টির নরম মাটিতে তখনও উঠোনে টাটকা হাতির পায়ের ছাপ। ভাঙা ঘরের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন গজানন। বললেন, “গণপতির নাম জপ করেছি বলেই কাঁঠাল ক’টি নিয়ে হাতিগুলো চলে গিয়েছে। তা না হলে ওদের তাণ্ডবে বিয়েই হয়তো পণ্ড হয়ে যেত।” মেয়েকে বললেন, “ন্যাতা দিয়ে হাতির পায়ের ছাপ ভাল করে মুছে দে। ওদের পায়ের ছাপ দেখলে আত্মীয়েরা যে ভয়ে বাড়িতে ঢুকতেই চাইবে না!” তাঁর বড় ছেলে বাপির গলায় তখনও উত্তেজনা। তাঁর কথায়, “হাতিগুলো যতক্ষণ ছিল, ততক্ষণ সবাই ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গণেশ ঠাকুরের নাম জপেছি। লোকজনের হল্লাতেই হোক বা অন্য কিছু, ওরা অল্প ক্ষতি করেই চলে যায়।”

তাতেও অবশ্য ভয় কাটেনি গজাননের পরিবারের। বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করে বাপি এ দিন বিয়ের আসরে পাহারা বসানোর আর্জি জানিয়ে এসেছেন। বন দফতরের রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিক অলোক আচার্য জানান, ওই বিয়েবাড়িতে যাতে কোনও ফের হাতির দল কোনও ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, তার জন্য হুলাপার্টিকে তিনি নজর রাখতে বলেছেন।

সে না হয় হল। কিন্তু বরযাত্রীদের ফলাহারের কী হবে? দিনমজুর গজানন ফের কাঁঠালের খোঁজ করছেন। আর থেকে থেকে আক্ষেপ করছেন, “ছ’টা কাঁঠালই তো, তা-ও ব্যাটারা ছাড়ল না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন