ভেঙে পড়ছে ‘স্পেসশিপ-টু’। ছবি: রয়টার্স
১ লক্ষ ১২ হাজার ৬৫৪ মিটার! পৃথিবীর মাটি থেকে এত উঁচুতে ঠিক কেমন দেখতে লাগে চারপাশটা? সাধারণ মানুষের সেই মহাকাশ-সফরের সাধ মেটাতেই দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছিল মার্কিন সংস্থা ‘ভার্জিন গ্যালাকটিক’। সম্প্রতি সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন জানিয়েও দিয়েছিলেন, গত কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় তাঁর স্বপ্নের যান ‘স্পেসশিপ-টু’ প্রস্তুত। এ বছরই বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হবে দু’ঘণ্টার মহাকাশ সফর। দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা খসিয়ে টিকিট বুকিংও করে ফেলেছিলেন অনেকে। যাত্রীদের তালিকায় কে নেই! টম হ্যাঙ্কস, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও থেকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি।
তবু শেষ মুহূর্তে থমকে গেল মহাকাশ-ভ্রমণের সমস্ত তোড়জোড়। পর্যটকদের নিয়ে প্রথম উড়ানের আগেই ভেঙে পড়ল বিশ্বের প্রথম যাত্রিবাহী মহাকাশযান। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা নাগাদ লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৯৫ মাইল উত্তরে মোহাভি মরুভূমিতে তৈরি ‘মোহাভি এয়ার অ্যান্ড স্পেস পোর্ট’ থেকে পরীক্ষামূলক উত্ক্ষেপণের কয়েক মুহূর্ত পরেই ভেঙে পড়ল যান। ব্র্যানসনের হাত ধরে মহাকাশ-ভ্রমণের মতো যে নতুন শিল্পের জন্ম হচ্ছিল, গোড়াতেই বড়সড় ধাক্কা খেল তা।
মোহাভির বালি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ‘স্পেসশিপ-টু’-র আধপোড়া টুকরোগুলো। কাছেই মিলছে এক পাইলটের দেহ। গুরুতর জখম দ্বিতীয় চালক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাঁকে।
এর আগে ৫৫ বার পরীক্ষামূলক ভাবে উড়েছিল ‘স্পেসশিপ-টু’। হঠাত্ কী এমন হল যে যাত্রা শুরুর কয়েক সেকেন্ডের মাথায় ভেঙে পড়ল মহাকাশযান? ভার্জিন গ্যালাকটিকের পক্ষ থেকে এর কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যদিও শোনা যাচ্ছে, এ বারের উড়ানে নতুন কোনও জ্বালানি মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়েছিল। স্পেস পোর্টে জ্বালানি-পরীক্ষা সফল হয়েছিল। যদিও উড়ানের সময় এ বারই প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি। তাই ওই জ্বালানিই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের একাংশের।
গত কালও কিন্তু প্রথমে সব ঠিকঠাকই ছিল। যাত্রা শুরুর পর টুইট করেছিল মহাকাশযান। “ফের রকেট-গতিতে উড়তে শুরু করেছে স্পেসশিপ-টু। আপডেট পেতে টুইটারে চোখ রাখুন।” তখন ১ টা বেজে ৭ মিনিট হবে। আপডেট সত্যিই এসেছিল। কয়েক মুহূর্ত পরেই ফের টুইট “কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে।” এর কিছু ক্ষণ পরেই মোহাভিতে আছড়ে পড়ে ব্র্যানসনের স্বপ্নের যান। এক সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সে দৃশ্য। কেরিয়ার বিমানের থেকে আলাদা হল মহাকাশযান। চালু হল তার রকেট ইঞ্জিনটা। জ্বলে উঠল আগুন। আর তার পরেই সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে গেল আকাশ।
অনেকেই বলছেন, “সপ্তাহটা খুব খারাপ যাচ্ছে।” কথাটা ভুল নয়। গত মঙ্গলবারই উত্ক্ষেপণের পর ভেঙে পড়েছিল নাসার রকেট অ্যান্টারেস। আর তার তিন দিনের মাথায় ফের আর একটা দুর্ঘটনা। ব্র্যানসনের কথায়, “এটা কোনও নাসার অভিযান নয়। তাই সাধারণ মানুষের অনুভূতি অনেক বেশি করে জড়িয়ে আছে।”
ঝুঁকির কথা আগেও উঠেছিল। ব্র্যানসন তাতে বলেছিলেন, “প্রথম উড়ানে আমি স্বয়ং হাজির থাকব। ছেলেমেয়ে-পরিবারকে নিয়ে।” ঠিক ছিল পাঁচ মিনিট ভরশূন্য অবস্থায় ভাসবেন যাত্রীরা। দু’ঘন্টা উড়বেন মহাকাশের কুচকুচে কালো অন্ধকারে। তবু সব পরিকল্পনা অধরাই রয়ে গেল। আপাতত। কারণ ব্র্যানসনের দাবি, তাঁরা ঠিক ঘুরে দাঁড়াবেন। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। বলেছেন, “১৯৬৭ সালে নাসার অ্যাপোলো ১ তো ভেঙে পড়েছিল। মারা গিয়েছিলেন তিন মহাকাশচারী। তবু বিজ্ঞান তো থেমে থাকেনি। এ বারেও থামবে না।”