রামু দ্রুত সেরে উঠুক, প্রার্থনা বাবুলালদের

রুপোলি পর্দায় শেষ পর্যন্ত ছোট্ট রামু ফিরে গিয়েছিল মায়ের কাছে। বাস্তবের রামুকে নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায় রয়েছে বন দফতর। গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে অসুস্থ হয়ে পড়া হস্তিশাবকটিকে বৃহস্পতিবার সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হল ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মিনি চিড়িয়াখানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:০৮
Share:

প্রাণী চিকিত্‌সক ও বনকর্মীদের সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে পারছে রামু। তাকে দেওয়া হচ্ছে ইঞ্জেকশনও। ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

রুপোলি পর্দায় শেষ পর্যন্ত ছোট্ট রামু ফিরে গিয়েছিল মায়ের কাছে। বাস্তবের রামুকে নিয়ে রীতিমতো আশঙ্কায় রয়েছে বন দফতর। গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে অসুস্থ হয়ে পড়া হস্তিশাবকটিকে বৃহস্পতিবার সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিয়ে আসা হল ঝাড়গ্রাম বন বিভাগের মিনি চিড়িয়াখানায়। ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শাবকটির নাম রেখেছেন ‘রামু’। চিড়িয়াখানার একটি ঘরে এখন রামুর অস্থায়ী ঠিকানা। রামু সুস্থ হলে তখন তাকে ‘ক্র্যাল’ বা শালবল্লির ঘেরাটোপে রাখা হবে। সদ্যোজাত রামুর জন্য মায়ের দুধ অপরিহার্য। আপাতত, মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে রামুকে ছাগলের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। প্রাণী চিকিত্‌সদের তত্ত্বাবধানে চলছে স্যালাইন। ইনজেকশনও দেওয়া হয়েছে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই রামুর। প্রাণী চিকিত্‌সক ও বনকর্মীদের সাহায্যে এক আধ বার দাঁড়ালেও বেশির ভাগ সময়ই শুয়েই রয়েছে সে। ঝাড়গ্রামের প্রাণী চিকিত্‌সক অরুণাংশু প্রতিহার বলেন, “শাবকটির শারীরিক অবস্থা বেশ দুর্বল। ফুসফুসেও সংক্রমণ রয়েছে। আমরা যথাসাধ্য পরিষেবা দিয়ে শাবকটিকে সুস্থ করার চেষ্টা করছি।” ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত ডিএফও বিজয় সালিমঠ বলেন, “দলছুট হয়ে শাবকটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রাণী চিকিত্‌সকেরা সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।”

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে গোয়ালতোড়ের জঙ্গলে অসুস্থ রামু দলছুট হয়ে যায়। বুধবার ভোর পর্যন্ত সদ্যোজাত শাবকটিকে আগলে রেখেছিলেন মা-হাতি সহ পালের অন্য হাতিরা। গোয়ালতোড়ের গোয়ালডাঙার জঙ্গলে সেই ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে গিয়ে রামুর মায়ের হামলায় গুরুতর জখম হন এক যুবক। বুধবার রাতে টেঙাশোলের জঙ্গলে রামুকে হাতির পালে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল বন দফতর। কিন্তু রামুর হাঁটার ক্ষমতা ছিল না। ফলে, চিকিত্‌সার জন্য রামুকে ঝাড়গ্রামে পাঠানো হয়।

রামুর অবস্থা দেখে মন ভাল নেই ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানার কর্মী বাবুলাল হাঁসদা, শম্ভু মুর্মু, মিঠু মাহাতোদের। রামুকে দেখে তাঁদের কেবলই ‘লক্ষ্মী’র কথা মনে পড়ছে। বছর খানেক আগে কলাইকুণ্ডার জঙ্গলে দলছুট একটি হস্তিনী-শাবকেরও ঠাঁই হয়েছিল ঝাড়গ্রামের মিনি চিড়িয়াখানায়। আদর করে সেটির নাম রাখা হয়েছিল লক্ষ্মী। প্রায় দশদিন চিকিত্‌সার পরে গত বছর নভেম্বরে লক্ষ্মীর মৃত্যু হয়েছিল। সেই শোক আজও কাটিয়ে উঠতে পরেন নি বাবুলাল-রা। এ দিন রামুর সেবাযত্নের ফাঁকে শম্ভু, বাবুলালরা বলেন, “প্রার্থনা করছি রামু যেন সুস্থ হয়।”

Advertisement

বাবুলাল, শম্ভুরা ধর্মেন্দ্র ও হেমা মালিনী অভিনীত সত্তরের দশকের ‘মা’ ছবিটি দেখেছেন। ওই ছবির শেষ দৃশ্যে দলছুট ছোট্ট হস্তিশাবক রামু নিজের মায়ের কাছে ফিরে গিয়েছিল। বাস্তবের রামুও যেন মায়ের কাছে ফিরতে পারে, সেই প্রার্থনা শুধু বাবুলালদের নয়, বন দফতরেরও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন