সর্পাঘাতে মৃত ছেলে বেঁচে উঠবে ওঝার ঝাড়ফুঁকে, এই আশায় প্রায় ১৯ ঘণ্টা দেহ বাড়িতে ফেলে রাখার ঘটনা ঘটল কালনায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে দেহটি সৎকারের ব্যবস্থা করে।
প্রশ্ন উঠছে, সচেতনতা শিবির, স্কুলে স্কুলে প্রচারের পরেও শহরের বাসিন্দারা ওঝার ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস রাখেন? কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “এ রকম ঘটনা হওয়ার কথা নয়। আমি সন্ধ্যায় বিষয়টি জানতে পারার পরে পুলিশকে ব্যাবস্থা নিতে বলি। সাধরণ মানুষকে সচেতন করতে শহরের কোথাও শিবির করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত অমিত পাসোয়ানের বাড়ি (১৫) ডাঙাপাড়া এলাকায়। শহরের মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। তার বাবা রাজপতি পাসোয়ান পেশায় রিকশা চালক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় দুই ছেলেকে চপ-মুড়ি খেতে দেন মা শঙ্করী পাসোয়ান। বড় ছেলে অমিত মুড়ির বাটি নিয়ে ভাইকে ডাকাডাকি করে। কিন্তু ভাই খেতে না চাইলে বাড়ির টিনের চাল থেকে কঞ্চি বের করে বাইকে ভয় দেখাতে যায় সে। অন্ধকারে টিনের চালে হাত দিতেই অমিতের আঙুলে সাপ ছোবল মারে। যন্ত্রণাকাতর ছেলেকে তড়িঘড়ি এলাকার মনসাতলার এক ওঝার কাছে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। ঘণ্টাখানেক ধরা চলা ঝাড়ফুঁকের পরে নেতিয়ে পড়া অমিতকে নিয়ে যাওয়া হয় কালনা মহকুমা হাসপাতালে। সাড়ে ন’টা নাগাদ চিকিৎসকেরা জানান অমিতের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু সর্পাঘাতে মৃত রোগীর ময়না-তদন্ত না করিয়েই ডাঙাপাড়ার কয়েকজন দেহ নিয়ে চলে যান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার কয়েকজন পসোয়ান পরিবারকে দেহটি ওঝার কাছে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। তাঁদের দাবি, ওঝারা অমিতকে বাঁচিয়ে তুলতে পারবে। রাত থেকেই কাছাকাছি শান্তিপুর, লক্ষ্মীপুর-সহ একের পর এক জায়গা থেকে ওঝারা আসতে থাকেন। কেউ মৃত ছাত্রের মুখে গুঁজে দেয় লতাপাতা, কেউ আবার কানের কাছে মুখ এনে বিড়বিড় করে মন্ত্র পরতে থাকেন। মঙ্গলবার রাত আটটা পর্যন্ত চলে একই ঘটনা। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে ডাঙাপাড়ায় পৌঁছয় পুলিশ। স্থানীয়দের বুঝিয়ে দেহটি সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।
ময়না-তদন্ত করাতে অবশ্য রাজি ছিলেন না অমিতের বাবা। তিনি বলেন, “অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিল ওঝারা ছেলেকে বাঁচিয়ে দেবে। তবে সবই বৃথা গেল।”
কিন্তু ময়না-তদন্তের আগে হাসপাতাল থেকে দেহ বাইরে বেরোল কীভাবে? স্পষ্ট উত্তর অবশ্য মেলে নি। মহকুমা হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই জানান, জরুরি কাজে তিনি স্বাস্থ্যভবনে রয়েছেন। ফিরে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন।