জন্মের পরেই মাতৃদুগ্ধ না পেলে বহু ঝুঁকি

২০১৮-র ডব্লিউএইচও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের ৭ কোটি ৮০ লক্ষ শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপানের সুযোগ পায় না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের অবস্থাও উদ্বেগজনক। হাসপাতালের ‘ভুল’ ব্যবস্থায় সদ্যোজাতদের ভুগতে হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৭
Share:

কোলোস্ট্রামে উপস্থিত অ্যান্টিবডি সদ্যোজাতর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভিত মজবুত করে। ছবি: শাটারস্টক

কোথাও সপ্তাহভর কর্মসূচি। আবার কোথাও বাড়ি গিয়ে প্রচার। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রশ্ন তুলছে, উদ্যোক্তাদের স্বচ্ছ ধারণার অভাবেই সচেতনতায় ফাঁকি পড়ছে না তো?

Advertisement

২০১৮-র ডব্লিউএইচও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশের ৭ কোটি ৮০ লক্ষ শিশু জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে স্তন্যপানের সুযোগ পায় না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের অবস্থাও উদ্বেগজনক। হাসপাতালের ‘ভুল’ ব্যবস্থায় সদ্যোজাতদের ভুগতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালে ‘সিজার’ হয়। জন্মের পরেই শিশুকে আলাদা ঘরে রেখে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পরে মায়ের কাছে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সিজারের পরেই মা স্তন্যপান করাতে পারবেন কি না, সে নিয়ে ধোঁয়াশা থাকে। অধিকাংশ সময়েই স্তন্যপান নিয়ে গর্ভাবস্থায় কিছু জানানো হয় না। অথচ, সিজারের পরের এক ঘণ্টায় স্তন্যপান করানোয় সমস্যা নেই। ডব্লিউএইচও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, শিশুর প্রথম টিকাই মাতৃদুগ্ধ। জন্মের এক ঘণ্টায় তা না পেলে বিভিন্ন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাচ্চাদের আলাদা রাখা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে কেন দুধ খাওয়ানো হচ্ছে না? হাসপাতালের সদিচ্ছার অভাবের জেরেই জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ সদ্যোজাত স্তন্যপান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’’

Advertisement

প্রশ্ন উঠছে সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়েও। প্রতিষ্ঠানে প্রসবের প্রবণতা বাড়লেও ঘাটতি থাকছে প্রসব-পরবর্তী চিকিৎসায়। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রসবের পরেই মা কখন, কী ভাবে স্তন্যপান করাবেন, সে নিয়ে পরামর্শই দেওয়া হয় না। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, রোগীর তুলনায় কর্মীর অভাবেই নজরদারিতে ঘাটতি থাকে।

সদ্যোজাতের খাবার নিয়ে ভ্রান্ত ধারণায় বিপদ বাড়ছে, মত শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষের। তিনি জানান, অভিভাবকদের সতর্ক করা জরুরি। জন্মের পরেই অধিকাংশ জায়গায় মুখে মিষ্টি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অথচ ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেলেও মাতৃদুগ্ধের সুযোগ হয় না। তাই সন্তানধারণের পরেই এ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে বোঝানো জরুরি। ‘অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক’-এর রাজ্য সভাপতি শিশুরোগ চিকিৎসক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আশঙ্কাজনক রোগী ভর্তি হলে তার নাম, ঠিকানা জানার থেকেও চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। তেমনই সন্তান জন্মের পরে প্রথম কাজ স্তন্যপান করানো। হাসপাতালকে এই দিকে নজর দিতে হবে। এটা মা ও সন্তানের শারীরিক দিকে নজরদারির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাসপাতাল তাতে গুরুত্ব না দিলে পরিস্থিতি পাল্টানো কঠিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন