গৌরী অরোরা।
একটা ‘রিয়েলিটি শো’ সামনে এনে দিল সত্যিকারের রিয়েলিটি-কে। হ্যান্ডসাম, ‘ম্যানলি’ লুক-এর গৌরবের পরত ভেঙে বেরিয়ে এলেন এক নারী। লিঙ্গ পরিবর্তন করে গৌরী হয়ে উঠলেন হিন্দি টেলিভিশন শো-এর জনপ্রিয় মুখ গৌরব অরোরা।
ঠিক এক বছর আগের কথা। একটি হিন্দি চ্যানেলে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘স্প্লিট্সভিলা’য় ডাক পেয়েছিলেন গৌরব। হ্যান্ডসাম, পেশীবহুল গৌরবকে দেখে বোঝার কোনও উপায় ছিল না যে, বাইরেটা যতটা পুরুষালি ভিতরটা ঠিক ততটাই নমনীয়। গৌরবের ভিতরেই আসলে লুকিয়ে ছিল আর একটা গৌরব। ছোটবেলা থেকে যে নিজেকে একজন মেয়ে বলে ভাবতেই পছন্দ করে এসেছে। গাড়ির বদলে পুতুল নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করতেন। বেশি ভাল লাগত ছেলেদের। কিন্তু পরিবার আর সমাজের চাপে, ভয়ে প্রকাশ করতে পারেননি নিজের অন্দরের এই সত্ত্বাকে। নিজের মনটাকে, শরীরের ইচ্ছেকে প্রায় লুকিয়েই ফেলেছিলেন জিমে কঠোর পরিশ্রমে।
কিন্তু এই ‘রিয়েলিটি শো’-ই সমাজের কাছে নিজেকে জাহির করার সেই ‘অনুপ্রেরণা’ দেয় গৌরবকে। শো-এ তাঁর পরিচয় হয় একজন টেলিভিশন অভিনেতার সঙ্গে। ছোটবেলা থেকেই যাঁর প্রতি গৌরবের ভাললাগা ছিল। শো-তে অতিথি হয়ে এসেছিলেন তিনি। বেশ কিছুটা সময় এক সঙ্গে কাটিয়েছিলেন তাঁরা। সেই প্রথম কারও কাছে মেয়ে হওয়ার অনুভূতি পেয়েছিলেন তিনি। সেই প্রথম কোনও পুরুষের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। জীবনের সেই প্রথম প্রেম ধোকাও দেয় তাঁকে। কয়েক দিন পর জানতে পারেন, ওই অভিনেতার সঙ্গে অন্য এক পুরুষের সম্পর্ক রয়েছে। তাও ঠিক ছিল, কিন্তু পুরুষ গৌরবের সঙ্গে সম্পর্ক সামনে আনতে রাজি ছিলেন না তিনি। এটা মানতে পারেননি গৌরব। মাঝ পথেই সেই রিয়েলিটি শো ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
তার পরই শুরু হয় অন্তরের গৌরবকে টেনে বাইরে বের করে আনার লড়াইটা। মনস্থির করেন লিঙ্গ পরিবর্তনের। এর জন্য অবশ্য কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি তাঁকে। বাড়ি থেকে বাজার, সব জায়গাতেই চরম হেনস্থা সহ্য করতে হয়েছিল। অনেক বুঝিয়ে বাবা-মাকে রাজি করিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু বিষয়টা জানাজানি হতে কত ক্ষণ? রাস্তাঘাটে, বাজারে, এমনকী বন্ধুদের অনেকেই তাঁকে ‘ছক্কা’ বলে ডাকতে শুরু করে। প্রতিবেশী বাচ্চারাও তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করত। শো থেকে বেরিয়ে আসার ছ’মাসের মধ্যেই নিজের অস্ত্রোপচার করান তিনি। সমস্ত তাচ্ছিল্য উপেক্ষা করে আস্তে আস্তে গৌরব থেকে গৌরী হয়ে ওঠেন।
আর সেই অভিনেতা? যে শুধুমাত্র পুরুষ শরীর বলে তাঁর প্রেম গোপন রাখতে চেয়েছিলেন, এই বদলের পরে কি গৌরবকে মেনে নিলেন তিনি?
লিঙ্গ পরিবর্তনের আগে যেমন ছিল গৌরী।
গৌরব নিজেই বললেন, ‘‘তখন পুরুষ ছিলাম তাই সমাজের ভয়ে আমাকে গ্রহণ করেননি। এখনও আমরা রোজ একই জিমে যাই। দেখাও হয়। কিন্তু ও এখন আমার সঙ্গে কথাও বলে না।’’ ভালবাসার মানুষের এই ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর জীবনে এ সব নিয়ে বেশি ভাবার সময় নেই। তাঁর সামনের লড়াইটা এখন অন্য। তাঁর লড়াই এখন তাঁর মতো আরও অনেক গৌরবের জন্য। নিজের গৌরী হয়ে ওঠার কাহিনী সমস্ত গৌরবের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের অনুপ্রেরণা হতে চান গৌরব, এখন যিনি গৌরী।
ম্যানলি গৌরব থেকে লাস্যময়ী গৌরী, এক কঠিন জার্নি