মহারাষ্ট্রের থানে জেলার ফাঙ্গানে গ্রামের এই স্কুলে ঠাকুমারা আসেন গোলাপি পোশাকে। মরাঠি ভাষাতেই তাঁরা পড়াশোনা করেন।
২০১৬-র মার্চে ‘নারী দিবস’-এর দিন মাত্র ২৭ জন ঠাকুমাকে নিয়ে শুরু হয় এই স্কুল।<br> এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘আজিবৈচি শালা’র পরিধি আরও বাড়ানো হয়। সেখানে একটি বাগানও রয়েছে এখন।
৯০ বছরের সিতাবাঈ দেশমুখ এই বিদ্যালয়ের সবথেকে বয়স্ক ছাত্রী। আট বছরের নাতনি অনুষ্কার হাত ধরে তিনি স্কুলে আসেন।<br> কখনও অনুষ্কাও ঢুকে পড়ে ঠাকুমার স্কুলে। সেও ঠাকুমার সঙ্গেই পড়াশোনা করে।<br> সিতাবাঈ এর মতে ‘জীবনে যে কখনও স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পাব, তা কল্পনাই করতে পারিনি। ছোটবেলা খুবই গরিব ছিলাম। আর তখন মেয়েদের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করারও সুযোগ খুবই কম ছিল।<br> তাঁর নাতনি ছোট্ট অনুষ্কার মতে ‘‘ঠাকুমা এবং আমি দুজনেই বেশ আনন্দে একসঙ্গে পড়াশোনা করি।’’
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তাঁরা চলে আসেন ফাঙ্গান জেলা পরিষদ স্কুলে।<br> ওই বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের সঙ্গে তাঁরা প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করেন।<br> বাচ্চাদের সঙ্গে গলাও মেলান জাতীয় সঙ্গীতে।
মতিরাম দালাল চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সাহায্যে নির্মিত হয়েছে এই স্কুলটি।<br> দিলীপ দালাল, মতিরাম দালাল চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা বলেছেন, ‘‘ঠাকুমাদেরকে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে পড়তে আসতে দেখে আমার নিজেকে গর্বিত মনে হয়।’’
সামাজিক কর্মী এবং স্থানীয় জেলা পরিষদের শিক্ষক যোগেন্দ্র বাঙ্গার বলেছেন, ‘‘একজন ঠাকুমা আমাকে তাঁর পড়াশোনা করার ইচ্ছার কথা জানান।<br> আর তারপরই এই স্কুলটি আমি শুরু করি। কোনও রকমের দান এই স্কুলের জন্য আমরা গ্রহণ করি না।<br> কেন না, এখানে টাকা নেওয়া হয় না। আর আমি এখানকার একজন শিক্ষক, বিদ্যাদান করাটাই আমার দায়িত্ব।’’
তবে এই বিদ্যালয় প্রসারিত হওয়ার পর আশপাশের গ্রাম থেকেও নতুন অনেকেই আসছেন স্কুলে পড়তে। এখন সদস্য সংখ্যাও আগের থেকে অনেক বেশি।
শীতল মোর এই স্কুলের একজন শিক্ষিকা। বিয়ের পর থেকে তিনি ফাঙ্গানেতেই থাকেন।<br> তাঁর মতে ‘‘এক বছর আগে বাঙ্গার স্যর আমাকে ঠাকুমাদের পড়াতে বলেন। তখন আমি বেশ খুশি হয়ে যাই।<br> মরাঠিতে পড়াশোনার পাশাপাশি আমি তাঁদের স্বাক্ষর করতেও শেখাই।’’
শীতল দেবীর শাশুড়িও এই স্কুলে পড়াশোনা করেন।<br> আর তাই তাঁর স্বামী প্রকাশ মোর স্কুলটি প্রসারণের জমি দান করেন এই বিদ্যালয়ের স্বার্থে।<br> আর তাই স্কুলটি দিনে দিনে শীতল দেবীর কাছে নিজের বাড়ি হয়ে উঠছে।
৬৫ বছরের কান্তাবাঈ হচ্ছেন শীতলদেবীর শাশুড়ি। প্রত্যেক ছাত্রীই এই স্কুলে এখন বৃক্ষরোপণ করেন।<br> এক একটি গাছ এখানে এক একটি ছাত্রী। কান্তাদেবীর মতে ‘‘আমরা সকলেই এক ক্লাসে পড়াশোনা করি আর তাই বাগান তৈরির সময় আমরা বেশ আনন্দ পাই।<br> দিনের বেলায় আমরা ঘুরতেও বেরিয়ে পড়ি। তবে দিলীপজীকে কবে থেকে বলছি, উনি বনভোজনটা যে কবে আয়োজন করবেন জানি না।’’