বাবা অসুস্থ, প্রতিমা গড়ে মুশকিল আসান চন্দ্রাই

কাঁকসার রথতলা কুমারটুলি এলাকায় গেলে নজরে পড়ে, এক মনে মা-বোনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চলেছেন চন্দ্রা সূত্রধর। বাবা শৈলেন দে এলাকার পরিচিত প্রতিমাশিল্পী।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৪
Share:

মা-বোনকে নিয়ে প্রতিমার কাজে ব্যস্ত চন্দ্রা সূত্রধর। নিজস্ব চিত্র

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শিল্পী। তার উপরে প্রতিকূল আবহাওয়া। এ দিকে পুজোর সময় এগিয়ে আসছে। প্রতিমা গড়ে দেওয়ার বায়না নেওয়া আছে। বিপাকে পড়েছিলেন বৃদ্ধ। হাল ধরতে তড়িঘড়ি শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে চলে আসেন মেয়ে। লেগে পড়েন প্রতিমার কাজ শেষ করতে। হাত লাগান তাঁর মা-বোনও। দেবীপক্ষে তাঁদের হাতেই রূপ পাচ্ছেন দশভুজা।

Advertisement

কাঁকসার রথতলা কুমারটুলি এলাকায় গেলে নজরে পড়ে, এক মনে মা-বোনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চলেছেন চন্দ্রা সূত্রধর। বাবা শৈলেন দে এলাকার পরিচিত প্রতিমাশিল্পী। অনেকেই তাঁর কাছে প্রতিমা গড়তে দেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চারটি প্রতিমা তৈরির বায়না নিয়েছেন তিনি। প্রথম দিকে প্রতিমা গড়ার কাজ চলছিল ভালই। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন শৈলেনবাবু।

শৈলেনবাবুর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিনি জানান, প্রতিমা গড়ে ভাল রোজগার হয় না বলে ছেলে বিদ্যুৎ বাইরে কাজ করতে চলে গিয়েছেন। দুই মেয়ে চন্দ্রা ও তন্দ্রার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী হলুদবালাদেবী ও ছোট মেয়ে উষা। শৈলেনবাবু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়ে যান তাঁরা। একে তো প্রতিমা গড়ার বরাত নেওয়া আছে। হাতে সময় নেই। ফলে, বরাত যে ফিরিয়ে দেবেন, উদ্যোক্তারা অন্য জায়গা থেকে প্রতিমা তৈরি করাবেন, সেই সময় আর নেই। প্রতিমা না দিতে পারলে রোজগার নেই। চরম দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন শৈলেনবাবু।

Advertisement

খবর পেয়েই আসানসোলের শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে চলে আসেন বড় মেয়ে চন্দ্রা। মা-বোনকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ করতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করে চলেছেন। তিনি জানান, প্রতি বছরই পুজোয় বাপের বাড়ি আসেন। তবে তা ষষ্ঠী বা সপ্তমীর দিন। এ বার বাবার পাশে দাঁড়াতে চলে এসেছেন পুজোর প্রায় দশ দিন আগে। তখনও প্রতিমায় মাটির কাজই সেরে উঠতে পারেননি শৈলেনবাবু। চন্দ্রাদেবী মা ও বোনকে নিয়ে তা শেষ করতে নেমেছেন। খামখেয়ালি আবহাওয়ায় সমস্যা বাড়লেও হাল ছাড়েননি চন্দ্রাদেবী।

কিন্তু প্রতিমা গড়া শিখলেন কী ভাবে? চন্দ্রাদেবী বলেন, ‘‘ছোট থেকে দেখেছি বাবাকে কাজ করতে। মা বা আমরা বোনেরা দেখে-দেখে অনেক কাজ শিখে নিয়েছি। এখন বাবার পরামর্শ মেনে তা করার চেষ্টা করছি। আবহাওয়া যদি আর বাধা না হয় তবে আশা করি সময়েই কাজ শেষ করতে পারব।’’ অশক্ত শরীরে শৈলেনবাবুও তাঁদের সাহায্য করছেন। শেষ তুলির টান তিনিই দেবেন। তিনি বলেন, ‘‘যেটুকু না হলে নয়, আমি ততটুকুই করছি। বাকিটা ওরাই করছে। বড় মেয়ে এ ভাবে নেমে না পড়লে যে কী হত জানি না!’’ রথতলার বাসিন্দা সৌরভ নন্দী বলেন, ‘‘শিল্পী শৈলেনবাবুর কদর রয়েছে এলাকায়। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় মেয়ে চন্দ্রা এ ভাবে হাল ধরেছেন দেখে ভাল লাগছে।’’

কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘বাবার সাহায্যে মেয়ে এগিয়ে এসেছেন, খুবই ভাল ব্যাপার। শিল্পী হিসাবে শৈলেনবাবু সাহায্যের আবেদন করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন