World Breastfeeding Week

বিশ্ব স্তন্যদান সপ্তাহ: সদ্যোজাতর একমাত্র পুষ্টিকর খাবার মায়ের দুধ

অন্যান্য অনেক ব্যাপারে পিছিয়ে থাকলেও পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের মৃত্যুর ব্যাপারে আমরা একেবারে প্রথম সারিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর ১,১৭,২৮৫ জন পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু মারা যায় স্রেফ ডায়রিয়ার কারণে।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৫০
Share:

মায়ের দুধকে সদ্যোজাতর প্রথম ভ্যাকসিন বলা যায় অনায়াসে।

অন্যান্য অনেক ব্যাপারে পিছিয়ে থাকলেও পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের মৃত্যুর ব্যাপারে আমরা একেবারে প্রথম সারিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর ১,১৭,২৮৫ জন পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু মারা যায় স্রেফ ডায়রিয়ার কারণে। পাকিস্থান, মায়ানমার, কেনিয়াকে পেছনে ফেলে শিশুমৃত্যুর ব্যাপারে অনেক কদম এগিয়ে আমাদের দেশ। এই ঘটনা প্রতিরোধ করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেন শিশুর জননী। হ্যাঁ বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্তন্যদানের ছবি পোস্ট করে বিতর্কে প্রেসিডেন্টকন্যা

জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় মাস যে শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খেয়ে বেড়ে ওঠে তাদের ডায়রিয়া সহ অন্যান্য অসুখবিসুখের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা অনেকতাই বেশি। মায়ের দুধকে সদ্যোজাতর প্রথম ভ্যাকসিন বলা যায় অনায়াসে। বিশেষ করে শিশু ভূমিষ্ঠ হবার কিছুক্ষণ পর মায়ের যে হালকা হলদেটে দুধ নিঃসৃত হয়, তাতে আছে নানান ধরনের অ্যান্টিবডি যা সদ্যোজাতর রোগপ্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। একে বলে কোলোস্ট্রাম। এ ছাড়া এই দুধ প্রোটিনে ভরপূর। ইঁদুর, বেড়াল, উট সহ যাবতীয় স্তন্যপায়ী না মানুষ কিন্তু জানে যে শিশুর একমাত্র খাবার মায়ের দুধ। অথচ পৃথিবীর সব থেকে বুদ্ধিমান প্রাণীরা ব্যাপারটা একটু কমই বোঝেন। আর ঠিক এই কারণেই শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে ১ থেকে ৭ আগস্ট বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ব্রেস্ট ফিডিং উইক। ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাকশনের উদ্যোগে ১৯৯২ সালে প্রথম মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালন শুরু করেন বিশ্বজুড়ে। সেই থেকে প্রত্যেক বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মায়ের দুধের উপযোগিতা ও মায়েদের দুধ দিতে উৎসাহ দিয়ে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই বছর ২৫ তম ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাওয়ারনেস উইকে মাতৃদুগদ্ধ দেওয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। কথা হচ্ছিল ল্যাকটেশন নার্স সায়ন্তী নাগচৌধুরীর সঙ্গে। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত সায়ন্তী জানালেন যে বাইরের বিভিন্ন উন্নত দেশে হবু মায়েদের ব্রেস্টফিডিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সম্প্রতি আমাদের দেশেও সেই কনসেপ্ট শুরু হয়েছে। নার্সিং-এ স্নাতক স্তরে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ব্রেস্ট ফিডিং নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে দু’বছরের পুরো সময়ের মাস্টার ডিগ্রি করার পরই তারা ল্যাকটেশন নার্স হবার যোগ্যতা অর্জন করেন। হবু মা প্রসবের জন্যে হাসপাতালে ভর্তি হলেই সায়ন্তী তাঁদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। মায়ের দুধই যে শিশুর সেরা খাবার তা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে দুধ দিলে ফিগার নষ্ট হওয়ার মত ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল তাও জানাতে ভোলেন না। বরং স্তন্যপান করালে জরায়ু দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ইদানীং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিজারিয়ান সেকশন করে বাচ্চা হয় বলে সদ্য মা ব্যথায় কাতর থাকেন। বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর কষ্ট সহ্য করতে চান না। এই ব্যাপারেও তাঁদের অনবরত কাউন্সেলিং করতে হয় বলে জানালেন সায়ন্তী। একই সঙ্গে ইদানীং মায়েদের মধ্যে এই ব্যাপারে অনেক সচেতনতা বেড়েছে। কেননা সায়ন্তী নিজে কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হলেও অন্য হাসপাতালে বাচ্চা হয়েছে এমন অনেক মা ওনার কাছে স্তন্যদানের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে আসেন। বিশেষ করে কর্মরতা মায়েরা ব্রেস্ট মিল্ক সংরক্ষণ করার ব্যাপারেও পরামর্শ নিতে চান। বলছিলেন সায়ন্তী। মায়ের দুধ খেলে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মা শিশু দুজনের মধ্যেই একটা বন্ধন তৈরি হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্তনের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ডায়েটে এই খাবারগুলো অবশ্যই রাখুন

শিশুরোগ–– বিশেষজ্ঞ ডা সৌমিত্র দত্ত জানালেন যে সদ্যোজাতর পাচনতন্ত্র বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ওদের মতোই ছোট্ট আর অপরিণত। অন্য খাবার খাওয়া আর হজম করা বেশ মুশকিল। আর ঠিক এই কারণেই ওদের জন্যে একবারে আদর্শ খাদ্য হল কোলোস্ট্রাম। প্রোটিন, ভিটামিন এ ও সোডিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই দুধ সামান্য খেলেই শিশুর পেট ভরে যায়। অন্য দিকে সদ্য মায়ের এই হলদেটে দুধ গ্রোথ ফ্যাকটর ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ফ্যাক্টর সমৃদ্ধ হওয়ায় শিশুর ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রথম ধাপ তৈরি হয়। আর পুষ্টির দিক থেকে মায়ের দুধের কোনও বিকল্প নেই। তাই শিশুর জন্মের পর ফর্মুলা ফুডের বোতল না ধরিয়ে মায়ের দুধ দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন