যুবভারতীর শব্দব্রহ্ম স্তব্ধ করতে তৈরি বাংলাদেশ

সেই সুবুলচন্দ্র দাস ওরফে ‘বুলু’ ভাই সোমবার দুপুরে রাজারহাটের অভিজাত হোটেলে ঘুরছিলেন ডার্বি টুপি ও বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি গায়ে।  সড়ক পথে সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভারত বনাম বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে কলকাতা এসেছেন।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:১২
Share:

মরিয়া: সুনীলকে রোখার প্রস্তুতি ইয়াশিনের (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

মীরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দ্বাররক্ষী। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বড় ভক্ত। সঙ্গে ফুটবলেরও আদ্যন্ত সমর্থক। গড়গড় করে বলেন বাংলাদেশ ফুটবলের প্রাক্তন তারকা রুমি, মুন্না, আসলামদের পুরনো
দিনের কথা।

Advertisement

সেই সুবুলচন্দ্র দাস ওরফে ‘বুলু’ ভাই সোমবার দুপুরে রাজারহাটের অভিজাত হোটেলে ঘুরছিলেন ডার্বি টুপি ও বাংলাদেশ ফুটবল দলের জার্সি গায়ে। সড়ক পথে সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভারত বনাম বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে কলকাতা এসেছেন। বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে ও অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়ার সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি হাজির ছিলেন সভাকক্ষেই। আলাপ হতেই বললেন, ‘‘বুধবার ঢাকায় আসছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো। তার আগে মঙ্গলবার র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতকে হারালে দারুণ ব্যাপার হবে।’’

সাংবাদিক বৈঠকে বাংলাদেশ অধিনায়কও বলেন, ‘‘গত ১৬ বছরে আমরা ভারতকে হারাতে পারিনি। এ বার ওদের হারাতে পারলে আমাদের দেশের ফুটবলে পরিবর্তন আসতে পারে।’’ শুনে মাথা নাড়েন সেই বুলু ভাইও।

Advertisement

আজ, মঙ্গলবার ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশ শিবিরের অঙ্ক দু’টো। এক, সুনীল-উদান্তদের বক্সের আগে থামিয়ে দাও। দুই, রক্ষণ পোক্ত রেখে প্রতি-আক্রমণে গোলের রাস্তা তৈরি করো।

সাংবাদিক বৈঠকে আর্সেন ওয়েঙ্গারের ছাত্র, বর্তমান বাংলাদেশ কোচ জেমি তাই বলেন, ‘‘ঘরের মাঠে ভারত আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামবে। তাই আমাদের রক্ষণ পোক্ত রাখতে হবে। শুরুতে গোল খাওয়া চলবে না। আর সুযোগ এলে তা কাজে লাগাতেই হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘জানি গোটা স্টেডিয়াম ভারতের জন্য গলা ফাটাবে। সেই শব্দব্রহ্ম থামাতে গেলে আমাদের ভাল খেলতে হবে। আমরা কতটা উন্নতি করেছি, তা দেখানোর জন্য এর চেয়ে বড় মঞ্চ পাব না।’’ বাংলাদেশ অধিনায়কও বলেন, ‘‘মাঝমাঠের দখল নিলেই ভাল জায়গায় থাকব।’’

আর বাংলাদেশের ত্রাস সুনীল ছেত্রী? এ বার কোচ জেমি ডে বলেন, ‘‘সুনীলকে বল নিয়ে ঘোরার জন্য ফাঁকা জায়গা দেব না। ওর বল পাওয়ার রাস্তাগুলোও বন্ধ করে দেব আমরা।’’ যোগ করেন, ‘‘ঘরের মাঠে ভারতীয়দের পরিকল্পনা কাজ না করলে তখন আরও চাপে পড়বে সুনীলরা। গ্যালারি তখন কিন্তু অন্য রকম আচরণ করবে।’’

সুনীল-উদান্তদের আক্রমণ রুখতে এ দিনের ক্লাসে ইয়াশিন খানদের বলা হয়েছে, নিজেদের আক্রমণের সময় ৪-১-৪-১ ছকে থাকলেও ভারত আক্রমণ করলে ৪-৫-১ হবে বাংলাদেশ। বলে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের রক্ষণ থেকে আক্রমণভাগের দূরত্ব যেন কখনও ৩০ গজের বেশি না হয়। তা হলেই কড়া ‘জ়োনাল মার্কিং’য়ে রাখা যাবে সুনীলকে। ভারত অধিনায়ক তখন চকিতে ঘুরে গোলমুখী আক্রমণ শানানোর জায়গা পাবেন না।

আর উদান্তর গতিময় ফুটবল ও বিষ মাখানো ক্রসগুলো বন্ধ করার জন্য পরিকল্পনা—গোলের দিকে সরাসরি ঢুকতে না দিয়ে প্রান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া। উদান্ত যাতে ক্রস না তুলতে পারে তার জন্য কড়া নজরে রাখা। এ দিন বিকেলে সল্টলেক স্টেডিয়ামে সেই অনুশীলনই করল বাংলাদেশ। যেখানে বিশেষ দায়িত্ব নিতে দেখা গিয়েছে চার ব্যাকের আগে দাঁড়ানো জামাল ও স্টপার ইয়াশিন খানকে।

১৬ বছর আগে ২০০৩ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালের নির্ধারিত সময়ে ভারত বনাম বাংলাদেশের ফল ছিল ১-১। অতিরিক্ত সময়ে গোল্ডেন গোল করে বাংলাদেশকে দুই প্রতিবেশীর ফুটবল-দ্বৈরথে শেষ বার জিতিয়েছিলেন মতিউর রহমান মুন্না।

মঙ্গলবার যুবভারতীতে জ়ামাল, মামুনুলরা কেউ সেই মুন্নার মতো নায়ক হতে পারবেন? সুবুলবাবু বলছেন, ‘‘সেই আশাতেই ছুইট্টা আইসি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন