বিদায়ী ম্যাচটা ফাইনাল ম্যাচ হল না, যেমনটা আমি আশা করেছিলাম আর কী! তবে খেলোয়াড়দের জীবনে খুব কম ক্ষেত্রেই স্বপ্নের বিদায়ের সুযোগ ঘটে। তার চেয়েও সেদিন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ায় গোটা শ্রীলঙ্কা দলের তীব্র হতাশায় ডুবে থাকাটা। আমাদের দিক থেকে সত্যিই খুব খারাপ পারফরম্যান্স হয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
নতুন বলে দক্ষিণ আফ্রিকানরা শুরুর দিকে অসাধারণ বল করে আমাদের বিরাট চাপে ফেলে দিয়েছিল। উইকেটটাও ভাল ব্যাটিংয়ের জন্য খুব একটা ভাল ছিল না। অল্পস্বল্প দু’রকম গতির উইকেট। যেটার সদ্ব্যবহার দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা দুর্দান্ত ভাবে করে আমাদের সহজে একটাও রান তুলতে দেয়নি। আমি বেশ ভাল ফর্মে ছিলাম, তা সত্ত্বেও আমাকেও খুটে খুটে রান তুলতে হয়েছে। তার পরেও অবশ্য দলকে একটা ভাল স্কোরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। মানে আড়াইশো থেকে দুশো পঁচাত্তরের মতো রানে। কিন্তু সেটা যতক্ষণ আমরা হাতে বেশ কিছু উইকেট রাখতে পারব ততক্ষণই।
গোটা টুর্নামেন্টে আমরা দেখেছি কী ভাবে একটা ইনিংস ধীরে-সুস্থে ভাল শুরু করতে পারলে সেটাই শেষ ১৫-২০ ওভারে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়ার ভিত এবং একই সঙ্গে রাস্তা গড়ে দেয়। সেদিন তৃতীয় উইকেটে থিরামান্নে আর আমি মোটামুটি ভালই এগোচ্ছিলাম। কিন্তু তার পরে দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনাররাও কাজে লাগল। তবে ওই রকম একটা পিচে স্পিনের বিরুদ্ধে সাতটা উইকেট খোয়ানোর কোনও অজুহাত নেই, বিশেষ করে সেই এক দল ব্যাটসম্যানের কাছে যারা বলতে গেলে স্লো বোলিং খেয়ে-খেয়েই বেড়ে উঠেছে। সত্যিই এটা হজম করা ভীষণ কঠিন। হয়তো এখন পিছন ফিরে তাকিয়ে মনে হবে কয়েকটা জিনিস এ বারের বিশ্বকাপে আমরা অন্য রকম ভাবে করলে ভাল হত। তবে এটা নিয়ে কোনও তর্কের অবকাশ নেই যে, চারটে সবচেয়ে শক্তিশালী টিমই সেমিফাইনালে উঠেছে।
একদিনের ম্যাচে শেষ বারের মতো মাঠ ছাড়ার সময়টা দুঃখের। পরের সকালেই এক জন প্রাক্তন ওয়ান ডে ক্রিকেটার হিসেবে ঘুম থেকে ওঠাটা আপনার কাছে কিছুটা আশ্চর্যের বইকী! আমার বাচ্চারা অবশ্য দারুণ খুশি যে ওরা ওদের বাবাকে এখন আরও বেশি সময় কাছে পাবে। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ওরা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সিডনিতে ডায়নোসর শো দেখার জন্য। যাওয়ার সময় ট্রেনে এক শ্রীলঙ্কান ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হল। যিনি আমাদের দেশের হাজার হাজার মানুষের মতো বহু বছর যাবত অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন। ট্রেন থেকে নামার সময় তিনি চকোলেটের একটা বিরাট বাক্স আমার বাচ্চাদের জন্য আমার হাতে উপহার দিয়ে বললেন, ‘ধন্যবাদ সঙ্গা।’ দারুণ ভদ্র আর সুন্দর একটা মুহূর্ত। সমর্থকদের খুশি করার জন্য খেলাটা আমাকে বরাবর উৎসাহ দিয়ে এসেছে।
যদিও এটাই ঠিক সময় দল থেকে আমার সরে দাঁড়ানোর। এখনই সময় ভবিষ্যতের দল গড়ার। আমার নিজের জন্যও এটাই ঠিক সময়। নিজের পরিবার আর বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর দিকে তাকিয়ে আছি। পরের দিকে কাউন্টি ক্রিকেট আর বিগ ব্যাশে খেলব। আর অবশ্যই পুরোপুরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে পাকিস্তান আর ভারতের সঙ্গে দুটো টেস্ট সিরিজের দিকেও তাকিয়ে থাকব।