টিম ইন্ডিয়া হল সুইস ঘড়ির মতো নিখুঁত

ধোনি-কোহলি সম্পর্কে শ্রদ্ধা আছে, হিংসে নেই

অনেকেই ভেবেছিল ভারত কাপটা ধরে রাখবে। ব্যাটে তিনশো তোলার মতো টিম ছিল আমাদের। বোলাররা দুর্দান্ত ফর্মে। ফিল্ডাররাও। এই টিমটাই অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট আর ত্রিদেশীয় সিরিজ হেরেছিল না? বছরের প্রায় অর্ধেক সময় সফরে ছিল। প্রথম আর শেষ টেস্টে অধিনায়ক ছিল না। টিমে প্রায় কেউই ৫০টা টেস্ট খেলেনি। এই টিম দুটো কি আলাদা? একটা টিম যারা সব হারিয়েছিল। আর অন্য টিম, যারা সব কিছু জিতে দেখাল।

Advertisement

রবি শাস্ত্রী

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫১
Share:

অনেকেই ভেবেছিল ভারত কাপটা ধরে রাখবে। ব্যাটে তিনশো তোলার মতো টিম ছিল আমাদের। বোলাররা দুর্দান্ত ফর্মে। ফিল্ডাররাও। এই টিমটাই অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট আর ত্রিদেশীয় সিরিজ হেরেছিল না? বছরের প্রায় অর্ধেক সময় সফরে ছিল। প্রথম আর শেষ টেস্টে অধিনায়ক ছিল না। টিমে প্রায় কেউই ৫০টা টেস্ট খেলেনি। এই টিম দুটো কি আলাদা? একটা টিম যারা সব হারিয়েছিল। আর অন্য টিম, যারা সব কিছু জিতে দেখাল।

Advertisement

টিম দুটোর মানদণ্ড আলাদা। ওরা অস্ট্রেলীয়দের সমানে সমানে লড়াই দিতে চেয়েছিল। স্কিল আর মনোভাব আরও উন্নত করতে চেয়েছিল। এই সব কিছুই ওরা করে দেখিয়েছে। তাই সিডনিতে যে টিমটা নামল, তাদের প্রতি আপনাদের সমর্থন ছিল। বিশ্বাস ছিল যে, ওরা বিশ্বকাপ ধরে রাখবে। ওদের নিজেদের মধ্যেও সেই বিশ্বাস ছিল। আমার মতে, অস্ট্রেলিয়া সফরটা তর্কাতীত ভাবে সফল। পক্ষপাতিত্ব নয়। মাইক্রোফোনের সামনেও আমি এই কথাটা বলতে রাজি।

ভারত যদি খারাপ খেলত, তা হলে প্রত্যেকটা টেস্টে চারশোর বেশি তুলতে পারত না। অ্যাডিলেডে জয়ের জন্য না ঝাঁপিয়েই দোকান বন্ধ করে দিত। অস্ট্রেলিয়ায় সফরকারী বিজয়ী দলের চেয়ে অ্যান্টার্কটিকায় সাদা পেঙ্গুইন খুঁজে পাওয়া বেশি সহজ! এটা হল ক্রিকেটের স্টার ট্রেক— যেখানে কেউ কোনও দিন যায়নি, সেখানে যাত্রা। পরশপাথরের সন্ধান।

Advertisement

কোহলিকে হয়তো আপনারা মনে রাখবেন চারটে সেঞ্চুরির জন্য। মনে রাখবেন রাহানের মসৃণ ছোঁয়া, বিজয়ের ধৈর্য বা কে রাহুলের ইস্পাত কঠিন প্রতিজ্ঞা। কিন্তু তরুণ চারাগাছ যে শিকড় বিস্তৃত করেছে ভবিষ্যতের বটবৃক্ষ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে, সেটা তো পরিসংখ্যান দেখাতে পারবে না। ওরা সিনিয়রদের অবসর নিতে দেখেছে। ২০১৪-এ চারটে বিদেশ সফরের অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছে। আর এত কিছুর পরেও ধ্বংস হয়ে যায়নি। পরের দশকটা টেনে দিতে পারবে এরা।

একটা পরিবারে যেমন সবচেয়ে প্রিয় বাছা যায় না, তেমনই এই ছেলেগুলোর মধ্যে থেকে ফেভারিট বাছতে পারব না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কুড়ি বছর পর ড্রেসিংরুমে ঢুকলাম। হ্যাঁ, খেলাটা পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু খেলে তো মানুষই!

যাই হোক, ছেলেগুলোর বড় কিছু করার ইচ্ছে আছে। ওদের প্রচুর, কিন্তু মানুষের সম্মানটা ওদের নাড়িয়ে দেয়। ওদের আরও উন্নতি দরকার। কারও হয়তো অফস্টাম্প নিয়ে সমস্যা, কেউ আড়াআড়ি খেলায় স্বচ্ছন্দ নয়, কারও পুল শট সড়গড় নয় তো কেউ বড্ড বেশি বড় শট মারে। বোলাররা সব সময় চায় আরও ডিসিপ্লিন আনতে, আরও ফিট হতে বা আরও বৈচিত্র আনতে। এই ছেলেগুলো বিশ্বাস করে যে ওরা আরও ভাল করতে পারে। আর সেটা ওরা করবেও।

সবচেয়ে বড় কথা, নেতৃত্ব নিয়ে একটা স্বচ্ছতা আছে। কোহলি টেস্টে রাজত্ব শুরু করবে। ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক ‘শেয়াল’ ধোনি। একজন খুব নতুন নয়, অন্য জন অতটাও পুরনো হয়নি। তাই দু’জনে আইডিয়া চালাচালি, কাজ ভাগাভাগি হতেই পারে। ওরা দু’জনেই দু’জনকে সম্মান করে, কেউ কাউকে সন্দেহ বা হিংসে করে না। দুটো ফর্ম্যাটের টিমেই প্রথম ছ’টা নাম এক। এটা হল নমনীয়, কিন্তু স্থির এক সৃষ্টি। হাজার-হাজার যন্ত্রের সমাহারে তৈরি নিখুঁত সুইস ঘড়ি, যা কখনও খারাপ হবে না।

টিমে সবাই বুদ্ধিমান। ব্যাটিং অর্ডার এ দিক-ও দিক করলে নাটক করে না। সবাই সবার পাশে দাঁড়ায়। অনেক দিন ধরে সব কিছু দেখলাম তাই বলতে পারি, টিমটা নিয়ে আমার আশা আছে।

(পিটিআই)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন