এবির বিরাট বিস্ফোরণে আইপিএলের ঢাকে কাঠি কোহালির

আবেগ, সমর্থন আর আকর্ষণে আট আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে যদি কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, নিঃসন্দেহে বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজি বাকিদের গুনে গুনে পাঁচ গোল দেবে!

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

দুই নায়ক। মঙ্গলবার এবির পাশে বিরাট। -এএফপি

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ২২৭-৪
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৮২-৬

Advertisement

আবেগ, সমর্থন আর আকর্ষণে আট আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে যদি কোনও প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়, নিঃসন্দেহে বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজি বাকিদের গুনে গুনে পাঁচ গোল দেবে!

গোটা বছর ধরে আরসিবি-পৃথিবীতে কিছু না কিছু চলছে। আজ স্থানীয় এনজিও-র দুঃস্থ শিশুদের কাছে টিমের মহাতারকাদের পৌঁছে যাওয়া তো কাল টিমের সদস্য ডেভিড উইজের স্ত্রীকে দিয়ে থিম সং সৃষ্টি। এমনিতেই আরসিবি সংসারে যে সমস্ত ব্যাটিং হিরে-জহরতের উপস্থিতি, তাতে আলাদা করে এত প্রচার-বিজ্ঞাপনে মন না দিলেও চলত। ক্রিস গেইল, এবি ডে’ভিলিয়ার্স, শেন ওয়াটসন, সর্বোপরি বিরাট কোহালি টিমের ব্যাটিং-ব্যাটারির চার্জ ফুরোতে ফুরোতে কুড়ি কেন, একশো কুড়ি ওভারও যথেষ্ট পড়বে কি না সন্দেহ। তার উপর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। কাব্বন পার্কের উল্টো ফুটপাথে এখন ঢুকলে সবচেয়ে যা চোখ ঝলসে দেবে, তা কোহালির প্রমাণ সাইজের কাটআউট নয়। লালের আধিক্য! ‘ব্লাড রেড’ বলতে যা বোঝায়, এ একেবারে ঠিক তাই। স্টেডিয়াম ব্র্যান্ডিং থেকে টিম ফ্ল্যাগ এমন রাঙিয়ে রেখেছে আরসিবি যে, সময়-সময় মনে হবে, চিন্নাস্বামী কিছুতে নয়। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রেড ডেভিলসদের ম্যাচ দেখতে এসেছেন! সঙ্গে জুড়ে দিন— ‘প্লে বোল্ড রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স’ নামক উইজ-স্ত্রী সৃষ্ট ওই উত্তেজক গান। জুড়ে দিন, আরসিবি ফ্যানদের উদ্দেশ্যে নতুন উত্সর্গিত হ্যাশট্যাগ কোহালিসুন! আরসিবি সমর্থক হলে যেখানে অনায়াসে নাম-ধাম লিখে ঢুকে পড়া যাবে।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতের পর ওই ফ্যানবক্স যদি উপচে পড়ে। যদি সমর্থক-এন্ট্রির জন্য লটারির ব্যবস্থা করতে হয় আরসিবি কর্তৃপক্ষকে, আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। আইপিএল নাইনে সবচেয়ে শেষে নামল আরসিবি। জয়টাও তুলে নিল খুব সহজে। আর আইপিএল কী বস্তু, কেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর লোকে আইপিএল দেখতে বাধ্য হবে, মাত্র দেড় ঘণ্টায় বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল বিরাট কোহালির টিম।

আরও ভাল করে বললে বিরাট কোহালি এবং এবি ডে’ভিলিয়ার্স।

ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বহু দিন ধরেই ক্রিকেটের স্বর্গীয় দৃশ্যের সংজ্ঞা পাল্টেছে। অতীতে সচিন তেন্ডুলকরের স্ট্রেট ড্রাইভ দেখতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চড়া রোদে বসে থাকত ভারতীয় ক্রিকেট-জনতা। তেন্ডুলকর আউট হয়ে গেলে ধুত্তোর বলে বাড়িতে টিভি বন্ধ করে দিত। ভারতীয় সমর্থনের মননে তেন্ডুলকরের জায়গা ইতিমধ্যে অনেকটাই নিয়ে ফেলেছেন বর্তমানের বিরাট। তাঁর ব্যাটিং শৌর্য, টি-টোয়েন্টিকেও ক্রিকেট ম্যানুয়ালের মধ্যে রেখে আসমুদ্রহিমাচল মুগ্ধতার রেশ ছড়িয়ে দেওয়া আজ নয়, বহু দিন ধরেই করছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই তো দেখাচ্ছেন কেতাবি থেকেও নৃশংসতা আমদানি কোন জাদুমন্ত্রে সম্ভব। বেঙ্গালুরুতে আজ আইপিএলের উদ্বোধনী বিরাট শো সুপারহিট। সাত বাউন্ডারি, তিন ছক্কায় ধুঁয়াধার ৫১ বলে ৭৫ রানের কোহালির বিরাট-ঐশ্বর্য দেখল বেঙ্গালুরু। কিন্তু সঙ্গে যাঁকে দেখল? তিনি? বিরাট কোহালিকে তো তবু কাপ সেমিফাইনাল পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তিনি এবি ডে’ভিলিয়ার্স তাঁকে তো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় দেখতে হয়েছে। দেখতে হয়েছে, তাঁরই প্রিয় ভারতের মাটি থেকে।

এবং দু’জন মিলে অধরা কাপের শোধ তুলতে সানরাইজার্স ম্যাচকে বেছে নিলেন কি না কে জানে! এটা ব্যাটিং? চিন্নাস্বামীতে দু’জন মিলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে নিয়ে যা করে গেলেন, তাকে যদি ব্যাটিং বলে তা হলে ‘মার্ডার’ কাকে বলে? ভাবা যায়, একশো কুড়ি বলে চোদ্দো বার গ্যালারি পার করে দিল আরসিবি! বাউন্ডারিতে পাঠাল কুড়ি বার! এবি একাই তো ছ’টা ছক্কা উড়িয়ে গেলেন। বিরাট তিনটে। তবু এঁদের ছেড়ে দিন। টিমের ‘বেবি ডিনামাইট’ সরফরাজ খানকে ধরুন। ১০ বলে ৩৫ নটআউট! হায়দরাবাদে সূর্য উঠবে কি, কুড়ি ওভারেই অস্তাচলের দিকে!

অথচ শুরুর দিকে ক্রমাগত এর বিপরীত চিত্রনাট্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। দু’ওভারের মাথায় ক্রিস গেইলকে স্তব্ধ করে দিয়ে ভুবনেশ্বর কুমার যে ভাবে শুরু করেছিলেন, মনে হচ্ছিল আজ না কেলেঙ্কারি হয়। তিন ওভার পর্যন্ত রান উঠছে না। চারের আশেপাশে ঘুরছে, ঘুরেই যাচ্ছে। ‘নেহরাজি’, ভুবনেশ আর পদ্মাপারের ‘ফিজ’ মিলে বেঙ্গালুরু ব্যাটিংকে ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছেন। বিরাট যে বিরাট, তাঁকে পর্যন্ত একটা সময় বারবার বিভ্রান্ত করে যাচ্ছিলেন মুস্তাফিজুর। এবং ওখান থেকে প্রথমে ধরলেন এবি, পরে যে বোলার-বধ মিশনে ঢুকে গেলেন বিরাট। তিন ওভারে বারোটাই দু’ওভার বাদে দাঁড়াল পাঁচ ওভারে পঞ্চাশ! শেষ পর্যন্ত দু’জনের পার্টনারশিপ থামল ১৫৭ রানে! এবি করলেন ৮২! টিমকে আড়াইশোর ঠিকানা দেখিয়ে দিয়ে।

আড়াইশো নয়, তার থেকে কিছুটা কম তুলল আরসিবি। কিন্তু তাতে কী? উল্টো দিকে যতই একটা শিখর ধবন, ডেভিড ওয়ার্নার থাকুন না কেন, সাড়ে এগারোর আস্কিং রেট রেখে ওটা তো কঠিন নয়, প্রায় অসম্ভব। তা সে যতই চিন্নাস্বামী মাঠ হিসেবে ছোট হোক। যতই দেশের সমস্ত মাঠের মধ্যে এখানেই ছয়ের সংখ্যা হোক সবচেয়ে বেশি।

সানরাইজার্স ইনিংসটা সেটাই দেখাল। ওয়ার্নারের (২৫ বলে ৫৮) তাণ্ডব সত্ত্বেও থেমে গেল সানরাইজার্স। আসলে অঘটন ঘটার ছিল না, ঘটলও না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement