Cristiano Junior

১৩ পেরিয়ে আজও জীবন্ত জুনিয়র

নিজের নিয়মেই চলছিল ম্যাচ। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটেই বদলে যায় গোটা মাঠের চিত্রটা। বাগান ডিফেন্সকে নাড়িয়ে গোল করে দিয়েছিলেন সদ্য ভারতে পা রাখা এক ব্রাজিলীয় যুবক।

Advertisement

কৌশিক চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:৫২
Share:

১৩ বছর আগের কথা। তারিখটা ৫ ডিসেম্বর ২০০৪। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল ডেম্পো এবং মোহনবাগান।

Advertisement

নিজের নিয়মেই চলছিল ম্যাচ। কিন্তু, দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটেই বদলে যায় গোটা মাঠের চিত্রটা। বাগান ডিফেন্সকে নাড়িয়ে গোল করে দিয়েছিলেন সদ্য ভারতে পা রাখা এক ব্রাজিলীয় যুবক— ক্রিস্টেয়ানো জুনিয়র। বাগান গোলরক্ষক সুব্রত পাল চেষ্টা করেও আটকাতে পারেননি তাঁকে। ১-০ ম্যাচ ২-০ হয়ে যায়।

কিন্তু, সুব্রতর বাড়ানো হাতের আঘাতে সে দিন মাঠেই স্তব্ধ হয়ে যায় জুনিয়রের জীবন। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তাঁকে। মাঠেই সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। কী হয়েছিল সে দিন? বল গোলে ঠেলে দেওয়ার পরই গোলরক্ষক সুব্রতর হাত সোজা জুনিয়রের বুকে এসে লাগে। ওখানেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। গোলের উল্লাস তো দূর অস্ত্‌, জুনিয়র তখন জীবনে ফেরার মরিয়া চেষ্টায়।

Advertisement

বাঁচারকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন র‌্যাটি মার্টিন্স এবং আরসি প্রকাশ

মুহূর্তে ছুটে আসেন র‌্যান্টি মার্টিন্সরা। দৌড়ে আসেন মোহনবাগানের খেলোয়াড়রাও। র‌্যান্টির মুখ তখন নেমে এসেছে জুনিয়রের মুখে। নিজের শ্বাসে সজাগ করতে চাইছেন বন্ধুকে। নেতিয়ে যাওয়া জুনিয়রের শরীরটা মাঠ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আর সি প্রকাশ। কিন্তু, সে ডাকে সাড়া দেওয়ার কোনও ক্ষমতাই ছিল না জুনিয়রের। অ্যাম্বুল্যান্স আনা হয়। স্ট্রেচারে শুয়ে তাতে করেই প্রিয় মাঠ থেকে চিরবিদায় নিয়েছিলেন ব্রাজিলীয় ওই ফুটবলার। হ্যাঁ, চির বিদায়। কারণ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন সব শেষ। হৃদ‌যন্ত্রের উপর প্রচণ্ড আঘাত লাগার ফলেই মৃত্যু হয়েছিল জুনিয়রের।

আরও পড়ুন: নির্বাসিত গুরপ্রীত, সঙ্গে ৩ লাখ জরিমানা

আরও পড়ুন: কলকাতার খেলা আমাকে খুব হতাশ করেছে

সে দিন জিতেছিল ডেম্পো। এবং সেই দু’টি গোলই করেছিলেন জুনিয়র। তিনি যখন মাঠে শুয়ে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছিলেন, অন্য প্রান্তে তখন হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করছিলেন ডেম্পোর গোলরক্ষক অভিজিৎ মণ্ডল। সেই অভিজিৎ এ দিন বললেন, ‘‘জুনিয়র চলে গিয়ে ভারতীয় ফুটবলকে শিখিয়ে দিয়েছে, মাঠে অ্যাম্বুল্যান্স এবং ডাক্তার থাকা কতটা জরুরি।’’ তাঁর আফসোস, সে দিন মাঠে যদি অন্তত এক জন ডাক্তার থাকতেন! সতীর্থকে এখনও প্রচণ্ড ভালবাসেন। তাঁর কথায়, “জানেন, আমাদের ঠাকুরঘরে ওর ছবি আছে। রোজ জুনিয়রের ছবিতে মালাও দিই।”

জুনিয়রের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জুনিয়রের স্মৃতিচারণ করলেন সে দিন মাঠে থাকা তৎকালীন ডেম্পো কোচ আর্মান্দো কোলাস। এ দিন গোয়া থেকে আর্মান্দো বলেন, “জুনিয়রের বিকল্প হয় না। আজ এত দিন পরেও ওকে মনে রেখেছে ভারতীয় ফুটবল। যত দিন আমি বাঁচব, তত দিন আমার হৃদয় জুড়ে ও থাকবে। ও আসলে টিমম্যান ছিল। ওর কাছে অনেক কিছু শিখেছি।”

জুনিয়রের স্মৃতিতে ডেম্পোতে ১০ নম্বর জার্সিও আর কাউকে দেওয়া হয় না বলেও জানান কোলাসো। তাঁর কথায়, “শুধু ফুটবলাররাই নন, কর্তারাও খুব ভালবাসতেন জুনিয়রকে। ও ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলত। ওর স্মৃতিতে কখনও আর কাউকে ১০ নম্বর জার্সি দেয়নি ডেম্পো।’’

জুনিয়রের মৃত্যুর পর আই লিগ-ডুরান্ড কাপ-সুপার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু, আর কখনও ফেড কাপ জেতেনি ডেম্পো। ফেড কাপের সেই স্মৃতি আজও ডেম্পোর কাছে উজ্জ্বল শুধুমাত্র জুনিয়রের কারণেই। আর জুনিয়র উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন