আইসিসি যে ওয়ান ডে-র নতুন নিয়মগুলো ঘোষণা করল শনিবার, সেগুলো কিন্তু প্রত্যাশিতই ছিল। তাই বিরাট কোনও চমক আমি পাইনি। এত দিন ওয়ান ডে-তে যে সব নিয়ম ছিল, সেগুলো নিয়ে কিন্তু কেউই খুব একটা সন্তুষ্ট ছিল না। বর্তমান-প্রাক্তন যে কয়েক জন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই বলেছে যে নিয়মগুলো পাল্টানো দরকার। কুমার সঙ্গকারা, লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণনদের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা হয়েছিল। দু’জনেরই মত, ফিল্ডিংয়ের বিধিনিষেধগুলো বিশেষ করে উপমহাদেশীয় স্পিনারদের জন্য বড় সমস্যা।
একটা কথা আমার সব সময় মনে হয়। এই যে বলা হয় ক্রিকেটটা হল ব্যাটসম্যানদের খেলা, তা কিন্তু নয়। খেলাটার নির্যাস আমি যা বুঝি, তাতে খেলাটা বোলারদের দিকেই বরং বেশি ভারী। কারণ একটা ওভারে একজন বোলার বিপক্ষকে আউট করার ছ’টা সুযোগ পাচ্ছে। সেখানে ব্যাটসম্যানের হাতে থাকে মাত্র একটা বল। পারলে ভাল, না পারলে দ্বিতীয় সুযোগ আর পাবে না। মনে হয় এই বেসিক ব্যাপারটায় ভারসাম্য আনতেই নতুন ওয়ান ডে নিয়মগুলো করা হয়েছিল। যাতে ব্যাটসম্যানরা কিছু সুবিধে পায়। তবে বছরখানেক এই নিয়ম চলার পর দেখা গেল, খেলাটা ব্যাটসম্যানদের দিকে বড্ড বেশি ঝুঁকে গিয়েছে। এই যে এখন তিনশো-সাড়ে তিনশো রান হামেশাই উঠে যাচ্ছে, সেটা তার বড় একটা প্রমাণ। আর তাই নিয়মগুলো আবার পাল্টানো হল।
যে চারটে বদল এ দিন করা হল, সেগুলো নিয়ে এ বার বলি।
ব্যাটিং পাওয়ার প্লে বাতিল: দেখুন, ব্যাটিং পাওয়ার প্লের পাঁচটা ওভার নিয়ে কোনও ব্যাটিং টিমই খুব একটা উচ্ছ্বসিত ছিল বলে আমার অন্তত মনে হয় না। ওই ওভারগুলো বরং ব্যাটসম্যানদের জন্য একটা ফাঁদ নিয়ে হাজির হত। শেষ দশটা ওভারে স্লগ করার আগে এই পাঁচ ওভারে বড় শট খেলতে গিয়ে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যেত। গড়ে দেখবেন, পাওয়ার প্লে-তে একটার বেশি উইকেট পড়ত। ৩৬ ওভারে যদি স্কোরটা ২০০-১ থাকে আর তার পরের পাঁচ ওভারে দু’তিনটে উইকেট পড়ে যায়, তা হলে পরে নামা ব্যাটসম্যানদের কাজটা খুব সহজ হয় না কিন্তু। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে জিনিসটা কোনও ব্যাটসম্যানই সে ভাবে কাজে লাগাতে পারেনি। তাই এটা উঠে যাওয়ায় কেউ খুব একটা মুষড়ে পড়বে বলে মনে হয় না।
শেষ দশ ওভারে সার্কলের বাইরে পাঁচ ফিল্ডার: এটা কিন্তু বোলারদের জন্য দারুণ একটা খবর। আগে যে সার্কলের বাইরে চার জনের বেশি ফিল্ডার রাখা যেত না, তাতে বোলিং টিমের বিকল্প অনেক কমে যেত। ওই সময় বেশির ভাগ বোলারই ইয়র্কার দেয় আর তার জন্য যা ফিল্ড সাজানো হয়, তাতে বলটা জায়গায় না পড়লে ব্যাটের একটা চিপেই বাউন্ডারি হয়ে যেত। আর থার্ড ম্যান বা ফাইন লেগ উপরে নিয়ে আসা মানেই ব্যাটসম্যান বুঝে যেত, এ বার স্লোয়ার আসছে। কিন্তু এ বার নিয়ম পাল্টে যাওয়ায় বোলারের হাতে বিকল্প বেড়ে গেল। ডেথে একজন ফিল্ডার বেশি পাওয়াও অনেক সুবিধের। পয়েন্ট বা ডিপ মিড উইকেটে বাড়তি একজন থাকা মানে বাউন্ডারির সুযোগ অনেকটাই কমবে।
কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার নিয়ে সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। এই যে ১১ থেকে ৪০ ওভার সার্কলের বাইরে চার জন ফিল্ডারই থাকছে, তাতে স্পিনারদের খুব সুবিধে হবে না। ওই মাঝের ওভারগুলোয় স্পিনাররা বল করতে আসে, তাই ওদের কথা ভেবে নিয়মটা করলে হয়তো ভাল হত। তাই উপমহাদেশীয় বোলিংয়ের ঠিক কতটা সুবিধে হল, বলা মুশকিল। আর এই জন্যই বোধহয় বেশির ভাগ টিম এখন ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার খুঁজছে।
প্রথম দশ ওভারে ক্যাচিং পজিশনে দুই ফিল্ডার বাধ্যতামূলক নয়: ভালই হল। ক্যাপ্টেনরা আরও ছড়িয়ে ফিল্ড সাজাতে পারবে। প্রথম থেকে ব্যাটসম্যানরাও অতটা চালাতে পারবে না। ব্যাট-বলের লড়াইটা তাই আরও জমবে।
সব নো বলে ফ্রি হিট: একদম ঠিক সিদ্ধান্ত। ওভারস্টেপ করে হোক বা কোমরের উপর বল করে, নো বল তো নো বলই। একটা ভুল। তো তার শাস্তি কেন থাকবে না?
আর একটা জিনিস নিয়ে এ দিন বেশ আলোচনা হচ্ছে শুনলাম। সেটা হল, এ বার কি ভারতের ডিআরএস মেনে নেওয়া উচিত? আইসিসি সিইও ডেভ রিচার্ডসন শুনলাম বলেছেন, ভারতের স্টান্স পাল্টাচ্ছে না। আমার মনে হয়, ভারতের অবস্থান একদম সঠিক। দেখুন, ডিআরএস ব্যাপারটার কোনও মানেই আমি খুঁজে পাই না। ওটা যদি একশো শতাংশ নির্ভুল হত, তা হলে এক রকম ছিল। কিন্তু আমি নিজে খুব কাছ থেকে এই প্রযুক্তিটা দেখেছি বলে জানি, এটা মোটেই ফুল প্রুফ নয়। এই যে রিপ্লেতে আপনাদের লেগ বিফোরের পিচ ম্যাপ দেখানো হয়, সেটা তো কম্পিউটার স্ক্রিনে একটা মানুষই বসাচ্ছে। তার যদি কোনও ভুল হয়, তা হলে ডিআরএস আর নির্ভুল হল কী করে?
যদি ভুলের শিকার হতেই হয়, তা হলে সেটা মানুষের ভুলের শিকার হওয়াই অনেক ভাল বলে মনে হয়। তা ছাড়া ডিআরএসে রিভিউ দেওয়া হয় মাত্র দুটো। তাতে দারুণ লাভ কিছু হয় বলে আমার তো মনে হয় না। তাই ডিআরএস নিয়ে না চেঁচিয়ে বরং আম্পায়ারিংয়ের মান বাড়ানোর কথা ভাবুক আইসিসি।