Football

আসানসোল থেকে শিলিগুড়ি, সব রাস্তা মিশেছে যুবভারতীতে

এই জনতা যে আর শুধুই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে আটকে নেই সেটা স্পষ্ট। যুব বিশ্বকাপ যে প্রেম চাগিয়ে দিয়ে গেল, ভারতের মনে তা হয়তো অমলিন থেকে যাবে বহু বহু বছর।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ১৪:১৭
Share:

এ ভাবেই ভিড় এসে জমছে যুবভারতীতে।—নিজস্ব চিত্র।

এ যেন নবমী নিশি। কলকাতা যেন তার শনিবারের চেনা গণ্ডি থেকে বেরিয়ে পড়েছে, ফের উৎসবের বৃত্তে।

Advertisement

বছর বছর হয়তো ঘুরে আসবে না এই উৎসব। আজকের পর বিসর্জনের বাজনাই বাজবে। তবুও, অন্য এক বোধনের অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমী ভারতীয়রা।

বাংলাও বুঝিয়ে দিয়েছে, সে রয়েছে ফুটবলের সঙ্গেই। এখানকার ফুটবলপ্রেমীরা বিশ্বকাপ শেষে হয়তো আবার ফিরে যাবেন ইস্ট-মোহনে। এই মানুষগুলোই ফের একে অপরের দিকে ছুড়ে দেবেন বিস্ফোরক সব মন্তব্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলবেন একে অপরের বিরুদ্ধে। কিন্তু, এই জনতা যে আর শুধুই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে আটকে নেই সেটাও স্পষ্ট। যুব বিশ্বকাপ যে প্রেম চাগিয়ে দিয়ে গেল, ভারতের মনে তা হয়তো অমলিন থেকে যাবে বহু, বহু, বহু বছর।

Advertisement

সাজাব যতনে। যুবভারতীর বাইরে শনিবার দুপুরে।—নিজস্ব চিত্র।

দেশের মাটিতে বসে ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার স্বাদ পেলেন যাঁরা, তাঁদের জীবনে গেঁথে গেল এক বিশেষ স্মৃতি। বাংলার ফুটবলে ফিরলেন মহিলারা। ফিরল স্বপরিবারে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সেই প্রথাও। এমনটা কেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের খেলায় হয় না? বারাসত থেকে আসা মুখোপাধ্যায় দম্পতি সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। চার নম্বর গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ঢোকার অপেক্ষায়। তাঁরাও বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ দেখেছি। তবে এখন আর ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলা দেখতে ভাল লাগে না। আগে জানেন, র‌্যামপার্টে দাঁড়িয়েও খেলা দেখেছি। এই ফুটবলের পরে যদি আমাদের ফুটবলের মানের উন্নতি হয়! তখন আবার আসব খেলা দেখতে।’’ ভদ্রলোক মোহনবাগান সমর্থক। ভদ্রমহিলার যদিও স্থানীয় ফুটবলে কোনও আগ্রহ নেই। বরং তিনি নিয়মিত বিদেশি ফুটবল দেখেন। এই ফুটবলপ্রেমী দম্পতির একটাই সংশয়, ‘‘এখানে যখন কলকাতার দলগুলো নামবে, তখন স্টেডিয়ামের এই আতিশয্য বজায় থাকবে তো?’’

আরও পড়ুন
বাংলার আবেগকে উসকে যুবভারতীতে আজ অল ইউরোপ ফাইনাল

প্রশ্নটা আসলে উঠতে শুরু করেছে সব মহলেই। যুবভারতী সেজে ওঠার পর আরও একটা প্রশ্নও উঠে এসেছে, এর পর যখন কলকাতার ক্লাবগুলো এখানে খেলবে, ধরে রাখা যাবে তো স্টেডিয়ামের এই রূপ? এর জবাব ভবিষ্যৎই দেবে। কিন্তু, এই বিশ্বকাপে যে দলই চ্যাম্পিয়ন হোক না কেন, সেরার সেরা কিন্তু ভারতের সমর্থকেরা।

বিশ্বকাপের নবমী নিশিতেও তা-ও শহর জুড়ে বিসর্জনের আবহ। টিকিটের হাহাকার। এ রকম দিন আবার কবে আসবে, সেই প্রশ্নই ঘুরছে সবার মাথায়। যদিও সর্ব ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আশ্বাস দিয়েছে, অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ ভারতের আনার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। সবুজ সঙ্কেত না দিলেও নাকচ করে দেয়নি ফিফা। ভারতের বিশ্বকাপ আয়োজনে মুগ্ধ ফিফা খুশি হয়ে তাদের নিয়ম ভেঙে এই উপহারও ভারতকে দিয়ে দিতে পারে। সেই খবরেই উচ্ছ্বসিত ফুটবলপ্রেমীরা।

শিলিগুড়ি থেকে আসা সেই যুবকেরা।—নিজস্ব চিত্র।

যুবভারতীর বাইরে এত দিন প্রশ্ন ছিল, ‘টিকিট পাওয়া যাবে?’

শেষ বেলায় বদলে গিয়েছে সেটাই। এখন প্রশ্ন, ‘অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ কি হবে ভারতে?’ তা হলে যে বিশ্বকাপের দশমী থেকেই শুরু হবে নতুনের অপেক্ষা। আরও একটা বিশ্বকাপ। আসানসোল থেকে ভোরের ট্রেন ধরে শহরে চলে এসেছেন সৌরভ, সঞ্জীব, অনুময়রা। বলছিলেন, ‘‘হোটেলে থাকার টাকা নেই। রাতের ট্রেন ধরে আবার ফিরে যাব। স্পেনকে সমর্থন করার জন্য এটুকু তো করাই যায়। না হলে স্টেশনে কাটিয়ে ভোরের ট্রেন ধরব।’’ ওরা কিন্তু এখন ফুটবলের। ‘‘বিশ্বকাপ শেষ হলেই কিন্তু ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানে ভাগাভাগি হয়ে যাবে,’’— বলছিলেন সৌরভ।

আরও পড়ুন
বিশ্বকাপ রেকর্ড গড়তে ভারতের চাই ৬৯৪৯

ফাইনালের আগের দুপুরে টিকিটের খোঁজে দেখা হয়ে গেল একঝাঁক চেনা মুখের সঙ্গে। সুভাষ ভৌমিক থেকে মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়, রঘু নন্দী থেকে হেমন্ত ডোরা। বাসুদেব মণ্ডল, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়— কে নেই সেই তালিকায়। সকলেরই মুখে একটা কথা, নিজেরা অনেক খেলেছেন দেশে-বিদেশে। দেখেছেনও অনেক বড় বড় খেলা। কিন্তু দেশের মাটিতে, তার থেকেও বড় এই শহরে বিশ্বকাপ ফাইনাল! এটা যে ভাবেই হোক দেখতেই হবে। ওঁদের মতোই আরও বহু মানুষ এসেছেন দেখতে। তাই ফাইনালের আগের দুপুরে বন্ধ কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। যদি খোলে। যদি পাওয়া যায় একটা টিকিট। আলিপুর থেকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসা তণিমা ঘোষের মুখে হতাশা— ‘‘মনে হয় পাব না। দু’ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। ইংল্যান্ডের আগের খেলাগুলো দেখেছি। দারুণ লেগেছে। আজকেও ইংল্যান্ডকে মাঠে বসে সাপোর্ট করতে চাই। জানি না হবে কি না।’’

টিকিট কাউন্টারের সামনে হতাশ মুখ। শনিবার দুপুরে যুবভারতীতে। —নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ি থেকে গত কাল রাতেই শহরে পৌঁছেছে শিলিগুড়ি কলেজের ফুটবল দল। ব্যাগপত্তর নিয়ে স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের বাইরে বসে রয়েছেন ওঁরা। স্টেডিয়ামের ভিতরে যুব আবাসে যদি জায়গা পাওয়া যায়। তা হলে ব্যাগ রেখেই গ্যালারিতে দে ছুট। ওরা বলছিলেন, ‘‘আমাদের দু’জন গিয়েছে খোঁজ নিতে। দেখি কী হয়। আমরা জোন চ্যাম্পিয়ন কলেজ ফুটবলে। হয়তো হয়ে যাবে।’’

এ ভাবেই ফুটবলকে ঘিরে উন্মাদনার শেষ বেলায় মেতেছে ফুটবল। মেতেছে মানুষ। আসলে সবটাই তো ফুটবল প্রেম। বাঙালির সেরা উৎসব কি তা হলে এখন থেকে ফুটবল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন