World Cup player

বিশ্বকাপ খেলা অলরাউন্ডার এখন মাঠে গরু চরান!

চোখের বদলে মন দিয়েই জগত্ চেনার সংকল্প ছিল। আত্মবিশ্বাস ছিল বিশ্বজয়ের। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পরেও তা যে ভেঙে যায়, জানতেন না বালাজি দামো।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:৩৬
Share:

গরু চরাচ্ছেন বালাজি।

চোখের বদলে মন দিয়েই জগত্ চেনার সংকল্প ছিল। আত্মবিশ্বাস ছিল বিশ্বজয়ের। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পরেও তা যে ভেঙে যায়, জানতেন না বালাজি দামো। তাই, ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলার পরেও তাঁকে এখন গরু চরাতে হয়। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে রোজ জোটে না পেট ভরা খাবারও। কোনও রকমে চালাতে হয় সংসার। ভাঙাচোরা জীবনের সঙ্গী বলতে দৃষ্টিহীন চোখের জল!

Advertisement

স্বপ্ন দেখার সেই জীবনটাই বদলে গিয়েছে একদম। আজন্ম দৃষ্টিহীন বালাজি তখন ভাবতেন মন দিয়ে ক্রিকেট খেলবেন। দেশের জার্সি গায়ে নামবেন বিশ্বকাপের ময়দানে। সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল ১৯৯৮-এ। সে বার ‘ব্লাইন্ড ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপ’-এ ভারতকে সেমিফাইনালে তুলেছিলেন অল-রাউন্ডার বালাজি। সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের মুখ দেখলেও বালাজির রেকর্ড ছিল মনে রাখার মতো। ১২৫টি ম্যাচ খেলে ৩১২৫ রান করেছিলেন বালাজি। উইকেটের সংখ্যা ১৫০। এখনও পর্যন্ত ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট তাঁরই দখলে। হয়েছিলেন ‘প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট’। দেশকে অমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় গোটা দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন তত্কালীন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন।

রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণনের সঙ্গে বালাজি।

Advertisement

তার পরের জীবনটা এ ভাবে বদলে যাবে, স্বপ্নেও ভাবেননি বালাজি। ক্রিকেট ইনিংসের বাইরে জীবনের দৈনন্দিন ম্যাচে ব্যাট করতে হয় তাঁকে। যেখানে ক্রিজে টিঁকে থাকাটাই আসল লড়াই। রান তো দূর অস্ত্‌! ভেবেছিলেন বিশ্বকাপ খেলার পর একটা চাকরি জুটবে। কিন্তু, সে আশা পূরণ হয়নি। প্রতিবন্ধী কোটাও কোনও কাজে আসেনি। গুজরাত সরকার যা দিয়েছিল তা বহু বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে জীবন নির্বাহে। এখন তিনি মাঠে গরু চরিয়ে বেড়ান। কখনও একটু আধটু চাষাবাদ। সংসার চালাতে তাঁর স্ত্রীকেও হাত লাগাতে হয় চাষের কাজে। স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে এক কামরার অভাবের সংসারে তা-ও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়!

আরও পড়ুন: এ বার দুর্গা মা নতুন রূপে আনন্দ উৎসবে

পুজোয় এ বার চোখ থাকুক অ্যানড্রয়েড টিভিতে

বয়স বেড়েছে অনেকটাই। এখন তিনি ৩৮। গুজরাতের আরাবল্লী জেলার পিপরানা গ্রামে এক একর জমিতে ভাইয়ের সঙ্গে ভাগাভাগি করে চাষের কাজ করেন। তা দিয়ে সংসার চলে না! অন্যের জমিতে গিয়েও কাজ করতে হয়। তাতেও কী বা হয়! স্ত্রী অনুও অন্যের জমিতে কাজ করেন। চার বছরের ছেলেকে বালাজি আর ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখেন না। স্ত্রী ও ছেলের দৃষ্টিতেই এখন জীবনটাকে দেখেন এই প্রাক্তন ক্রিকেটার। মাঝে মাঝে যখন স্মৃতিগুলো ঘুরে ফিরে আসে তখন বাধ মানে না চোখের জল। দৃষ্টিহীন চোখের স্বপ্নগুলোও হারিয়েছে অনেক কাল। স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বালাজির পদক, সার্টিফিকেটগুলোও যেন ডুকরে কাঁদে। টালির ছাদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। সেখান থেকে চুঁইয়ে পড়ে জল। তার মধ্যে থেকেই বাঁচিয়ে রাখা নিজের সম্পদ!

পরিবারের সঙ্গে নিজের বাড়িতে। ছবিগুলি সংগৃহীত।

না দেখে একের পর এক বল সরাসরি উইকেটে লাগাতে পারতেন তিনি। আজ হাত কাঁপে। মাঝে মাঝে স্থানীয় ‘ব্লাইন্ড স্কুল’-এ ছাত্রদের ক্রিকেট শিখিয়ে আসেন। পুরো পরিবারের মাসিক আয় খুব বেশি হলে তিন হাজার টাকা। ১৮ বছর আগে ‘প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট’ হয়ে জিতেছিলেন ৫ হাজার টাকা। আজ সেই টাকাটাও রোজগার করতে পারেন না। স্মৃতি হাতড়ে তাই বালাজি বলে ওঠেন, ‘‘বিশ্বকাপের সময় আমাদের দলের প্লেয়াররা আমাকে সচিন তেন্ডুলকর বলে ডাকত।’’ ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ব্লাইন্ড-এর সহ সভাপতি ভাস্কর মেহতা বলেন, ‘‘ভারতীয় ব্লাইন্ড দলে এ রকম প্রভিভাবান প্লেয়ার আর আসেনি। এটা খুব দুঃখজনক হলেও, সত্যি প্রতিবন্ধী প্লেয়াররা স্বীকৃতি পায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন